ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ৪:২৫:৫২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

গায়ত্রী দেবী: রাজকুমারী থেকে মহারানী

ট্রেস জফি

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:০৯ এএম, ১৬ জুন ২০১৯ রবিবার

১৯৩১ সালের ক্রিসমাস। ভারতের জয়পুরের তরুণ মহারাজা সোয়াই মানসিং দ্বিতীয় এলেন কোচবিহার রাজপরিবারের অতিথি হয়ে পোলো খেলতে। ‘জয় সিং’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। 

কলকাতার ক্রিসমাস ইংরেজদের দৌলতে তখন থেকেই খ্যাতি লাভ করেছে। ক্রিকেট এবং বিশেষ করে পোলোর টুর্নামেন্টগুলি ছিল বিখ্যাত। এই সময়েই শহরে এসে কোচবিহারের রাজপরিবারের কলকাতার আলিপুর রোডের ‘উডল্যান্ডস’ বাড়িতে প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে রইলেন জয় সিং।

এই সময়ই তিনি ভালবেসে ফেললেন কোচবিহারের প্রাণোচ্ছল এই পরিবারকে। প্রেমে পড়ে গেলেন এই পরিবারের অপরুপা সুন্দরী তরুণী গায়ত্রীর। গায়ত্রীরও মনে হল রুপকথার এক রাজপুত্র এসেছেন তার কাছে। জয় সিং গায়ত্রীকে ডাকতে শুরু করলেন ‘প্যাট’ বলে। 

তারপর একদিন তার মায়ের কাছে রাখলেন বিবাহের প্রস্তাব। প্রথমে প্রস্তাব হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন মহারাণী ইন্দিরা। পরে যা হয়েছে তা ইতিহাস। রাজকুমারী থেকে মহারানী। সেখান থেকে ভারতের রাজনীতিতে প্রবেশ এবং শক্তিশালী কংগ্রেসকে হারিয়ে চলে আসা ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে।

১৯৪০ সালে, ২১ বছর বয়সে গায়ত্রীর বিয়ে হল দ্বিতীয় সোয়াই মান সিংয়ের। এটা ছিল প্রেমের বিয়ে। গায়ত্রী দেবী ছিলেন তাঁর স্বামীর তৃতীয়া স্ত্রী কিন্তু| তবে দুই রাজস্থানি রাজকন্যা সতীনের মতো মোটেও পর্দানসীন ছিলেন না। 

ক্রমে জয়পুরের মহারানি বা রাজমাতা পদমর্যাদায় আসীন হয়েছিলেন গায়ত্রী দেবী। স্বাধীনতার পরে লোপ পায় রাজতন্ত্র। হাতছাড়া হয়ে যায় অনেক প্রিন্সলি স্টেট।

মহারানি গায়ত্রী দেবীর এবার হাতেখড়ি হয় স্বাধীন ভারতের ‘রাজ’নীতিতে। রাজা গোপালাচারীর স্বতন্ত্র পার্টির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কংগ্রেসের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল এই রাজনৈতিক দল। 

১৯৬২ সালে লোকসভা নির্বাচনে তিনি রেকর্ড ব্যবধানে জিতেছিলেন। বৈধ ২ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৬ টি ভোটের মধ্যে গায়ত্রী দেবী পান ১ লাখ ৯২ হাজার ৯০৯ টি ভোট। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এর হিসেবে এটা রেকর্ড ব্যবধান ছিল।

কোচবিহার, দার্জিলিং, কলকাতায় কেটেছিল গায়ত্রীর ছেলেবেলা। গ্রীষ্মাবকাশে ইংল্যান্ড। দুই ক্রিকেটর দাদার মত গায়ত্রীর ছিল স্পোর্টসের প্রতি অদম্য উৎসাহ। দাদাদের ক্রিকেট ও পোলো টুর্নামেন্টে তাই গায়ত্রীর ছিল বিশেষ ভূমিকা। পরে স্বামীর পোলো খেলায় কমেন্ট্রি করা শুরু করেছিলেন। হলেন দেশের প্রথম মহিলা স্পোর্টস কমেন্টেটর। দিদি ইলা ও বোন মেনকা যখন রূপচর্চা ও সাজপোশাক নিয়ে ব্যস্ত গায়ত্রী তখন ব্যস্ত দাদাদের সঙ্গে স্পোর্টস নিয়ে।

সবমিলিয়ে এক বর্ণময় চরিত্র। আলোর পাশাপাশি ছিল অন্ধকারও। ১৯৭১ সালে কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য গায়ত্রী দেবীকে ৫ মাস তিহাড় জেলে কাটাতে হয়। বর্ণময় গায়ত্রী দেবীর জীবন সবসময় আগ্রহের তুঙ্গে। 

রাজনীতি থেকে সরে আসার পরে প্রকাশিত হয় গায়ত্রী দেবীর আত্মজীবনী ‘A Princess Remembers’। পরে তাঁকে সামনে রেখেই তৈরি হয় ‘Memoirs of a Hindu Princess’।

সূত্র : ভারতীয় পত্রিকা