দক্ষিণগ্রামের পদ্মবিল
ইয়াসমীন রীমা (কুমিল্লা প্রতিনিধি)
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:৫২ পিএম, ২ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রামের পদ্মবিল।
“নাদের আলী আমি আর কতো বড় হবো,/ তবে তুমি আমাকে তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবে/যেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে।/ নাদের আলি আমি আর কতো বড়ো হবো।”
নান্দনিক কবি ও কথা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপধ্যায় তার প্রখ্যাত কেউ কথা রাখেনি কবিতায় বলেছিলেন ঠিক। তবে সুনীলের নাদের আলী তেত্রিশ বছর কথা না রাখলেও কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রামের বিলে ফুটে থাকা অযুত অযুত পদ্মফুল সেই কথা রেখেছে দর্শনার্থীদের কাছে। তবে রূপ-অপরূপ সেইসব পদ্ম পদ্মের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করেনা। খেলা করে শরতের আলো আধাঁরির আকাশের আলো।
শহর কুমিল্লা থেকে চাঁনপুর-বাগড়া সড়কের কাছাকাছি আসতে সড়কে পাশের খানিক দূরে কারো নজর এড়ায়না দক্ষিণগ্রাম বিলের জলে ফুটে থাকা লাল নীল আনাবিল পদ্মফুল। রৌদ্রের আলোতে যেনো হেসে হেসে স্বাগত জানাচ্ছে।
সারাৎবছর জুড়ে দক্ষিণগ্রামের বিলে পদ্মফুল ফুটে থাকলেও ঋতুর রানী শরৎকালেই ফুটে ওঠা পদ্মফুলগুলো যেনো তার সমস্ত সৌন্দর্য্য উজাড় করে দিয়ে প্রকৃতি প্রেমীদের চোখকে সার্থক করে তোলে।
বিলের জলে নৌকা চড়ে গেলে যে কোন দর্শনাথীই মুগ্ধ হয়ে যায়। মাথার ওপরে শরতের নীল আকাশ সাদা মেঘের ভেলা আর নিচে মুদৃমন্দ দখিনা বাতাসের সাথে দোল খায় পদ্মফুল। আর পদ্মফুলের বাহারীরূপে তাদের সাথি হতে দেখা যায় ভ্রমর-মৌমাছি-ডাহুক আর সাদা বকদের।
বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রাম বিলের মাঝে শতাধিক একর জমিতে দীর্ঘ বছর ধরে প্রকৃতিগতভাবেই পদ্মফুল ফুটে থাকে। এখানে আশেপাশের জমিগুলোতে ধান জন্মালেও পদ্মফুল ফুটে থাকার জমিগুলোতে বারো মাসই জমে থাকে জল। যেখানে যন্ত্রের লাঙ্গলের চাষ অকার্যকর। ফলে শস্য উৎপাদন ব্যহত হয়। তাই কৃষকরা নিরুপায় হয়ে পদ্মফুলের সৌন্দয্যেই সস্তুষ্ঠ থাকেন।
দক্ষিণগ্রামের পদ্মবিল দেখার আনন্দ ভাগাভাগি করতে কথা হয় রিয়াদ ও তার ছোট ভাই আহাদের সাথে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া রিয়াদ জানায়, বিলের মাঝে সারা বছর পানি জমে থাকে। তবে হাঁটু পানি। ছোট ছোট মাছেরও দেখা মেলে এই বিলে। সন্ধ্যা ঘনাতেই উড়ে আসে পাখিসব শামুককাচা, ডাহুক, সাদা বক। ওরা আসে খাবারে খোঁজে অর্থাৎ বিলের জলের ছোট মাছ শিকারে। মুখরিত করে তোলে বিলের চারধার। সেই এক শ্রবণমধুর কিচিরমিচির সুর।
রিয়াদ আর আহাদের বাড়ি বিলের ঠিক কাছাকাছি। তারা দু‘জনই স্কুলে পড়ে। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে পদ্মফুলের সুন্দর দেখতে আসে। কখনও কখনও পদ্ম তুলে নিয়ে যায় বাড়িতে। সন্ধ্যায় ভিড় করা পাখিসব খুব সকালে ঝাঁকে ঝাকেঁ সীমান্ত পেরিয়ে বনের দিকে চলে যায়।
অনাদর অযত্নে থাকা এসব পদ্মফুলগুলো হতে পারে কৃষকদের আয়ের উৎস। নগরীর ফুলের দোকানে সারা বছরই পদ্মফুলের চাহিদা থাকে। তবে সঠিক পরিচর্যা পেলে আরো বেশি পদ্মের ফলন বৃদ্ধি করা যায়। পাশাপাশি সঠিক তথ্য পরিচর্যা পেলে পদ্মফুলকে অর্থকরী হিসেবে উৎপাদন করতে পারবে।
শুধুমাত্র সঠিক তথ্য না জানার কারণে অযত্মে গড়ে উঠা শ্বেতশুভ্র নীলাভ্র পদ্মগুলো জমির পানিতে ঝরে যায়। ছিঁড়ে তুলে নিয়ে যায় নানা ধরণের দর্শনার্থীরা ও কৌতুহলীরা।
এ বিষয়ে কথা হয় বুড়িচং উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতানা ইয়াসমীনের সাথে।
তিনি বলেন, “আসলে আমি শুনেছি দক্ষিণগ্রামের বিলের পতিত জমিতে পদ্মফুল ফুটে। ওই এলাকার জন্য যিনি দায়িত্বে আছেন তাকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলবো। পদ্মফুলের যে চাহিদা আছে এবং ভালোভাবে যত্ন করলে এ ফুলগুলোও যে অর্থকরী হয়ে উঠতে পারে বিষয়টি কৃষকদের জানাতে হবে। পতিত জমিগুলো কৃষকদের জন্য অভিশাপ থেকে আর্শিবাদ রূপান্তরিত হবে।”
পতিত জমিতে ফুটে থাকা পদ্মফুলের বিষয়ে কৃষকদের জন্য সম্ভব যে কোন সহযোগিতা করতে প্রস্তত বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তফা।
তিনি বলেন “দক্ষিণগ্রাম বিলটি রাজাপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত। আমি নিজে দেখেছি বিলটি ও বিলের মাঝে ফুটে থাকা পদ্মফুল। খুব সুন্দর লাগে। যেসব কৃষকদের জমিতে এই পদ্মফুল ফুটে তারা চাইলে ফুলগুলো যেন বাণিজ্যিভাবে উৎপাদন ও বিক্রয় করতে পারে আমি সে ব্যাপারে সব রকমের সহযোগিতা করবো।”
দক্ষিণগ্রামের পদ্মবিলের স্মৃতি দীর্ঘদিবস দীর্ঘরজনী আমার হয়ে থাকবে। থাকবে দৃষ্টির সীমানায় হাজারো সুন্দর দৃশ্যবলীর মাঝে আরেকটি মনোমুগ্ধকর দ্যুতিময় দৃশ্যস্মৃতি।