ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ১৯:৪১:২২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

পুতুল জীবন

শারমিন সুলতানা মুনমুন

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৩০ পিএম, ৩ আগস্ট ২০১৯ শনিবার

হইবো...।
আমি আবারো জানতে চাইলাম। ফের একই উত্তর পেলাম-হইবো...।

এবার একটু জোরের সাথে বললাম-আরে হইবোতো বুঝলাম কিন্তু হইবোটা কি?!
উত্তর পেলাম-বাচ্চা হইবো।

দু’দিন হলো খালার বাসায় কাজে যোগ দিয়েছে সৈয়দা। সম্পর্কে সীমার বোন সে। ওর কাছেই জানতে চেয়েছিলাম সীমা কেমন আছে। তার উত্তরে জানলাম সীমার বাচ্চা হবে!

খবরটা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! সীমার হাসিখুশি ভরা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সেই মিষ্টি ডাকটা যেন কানে শুনতে পেলাম-মুনমুন আন্টি...।
আমাকে ও আন্টি বলেই ডাকতো। আর খালাকে ডাকতো আপা।

৮-৯ বছর যখন ওর বয়স তখন ও কাজে আসে খালার বাসায়। বাচ্চা মেয়ে বলে ওকে দিয়ে হালকা কাজগুলো করাতেন খালা। আর ভারী কাজের জন্য রেখেছিলেন ছুটা বুয়া।

যে বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সে কাজে পাঠানো হয় সীমার মতো মেয়েদের। স্কুলে গিয়ে পড়াটা তাই আর হয়ে ওঠে না। তবে সীমা পড়েছিল। স্কুলে নয়, বাসায়। চিঠি লেখাটাও শিখে ফেলেছিল সে।

ও আসার প্রথম দিকে খালার বাসায় গেলেই একটা বর্ণমালার বই আর খাতা নিয়ে চলে আসতো আমার কাছে। এটা-ওটা প্রশ্ন করে বুঝে নিতো পড়াটা। কখনো হয়তো গিয়ে দেখতাম সে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে। না বুঝে কিন্তু দেখতো না। সে বুঝতো এবং বলতেও পারতো সাথে আমাকেও বোঝাতো। আমিও না বোঝার ভান করে ওর থেকে বুঝে নিতাম।

সীমার জীবন ছিল অনেকটা পুতুলের মতো। তার মা যেটা বলতো সেটাই তাকে মানতে হতো। মায়ের অনুমতি সাপেক্ষে কাজে আসে সে। এজন্য মাস শেষে তার কষ্টে উপার্জিত টাকার পুরোটাই মাকে দিয়ে দিতে হতো! শুধুমাত্র ঈদে যে টাকা বখশিশ পেতো সেটা রেখে দিত নিজের কাছে। বাড়ি যাওয়ার আগে ওই টাকা দিয়ে ভাই-বোনদের জন্য উপহার কিন্তু।

নগরজীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা সীমা বাড়িতে যেতে চায়তো না খুব একটা। আসলে ও যখনই বাড়িতে যেতো তখনই ওর মা দুটো-একটা করে পাত্র এনে ওর সামনে হাজির করতো। যার জন্য ওর বাড়িতে যাওয়ার প্রতি একপ্রকার অনাগ্রহ তৈরি হয়।

এদিকে ব্যাটে-বলে না মেলায় সীমার বিয়েটাও পেছাতে থাকে। আর সীমা একটু একটু করে খালার পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজন সবারই অত্যন্ত কাছের একজন হয়ে ওঠে।

সীমার মা কিন্তু নাছোড়বান্দা! ওদিকে তিনি চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছেন মেয়ের বিয়ের জন্য। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর। সীমার বয়স ১২ কি ১৩ হবে। আবার ওকে ডেকে পাঠালো ওর মা। এবারে নাকি তিনি মেয়েকে আর পাঠাবেন না, যেভাবেই হোক বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন।

সীমা চলে গেলো বাড়ি। ভেবেছিলাম বললে ভুল হবে আসলে চেয়েছিলাম এবারেও যেন ব্যাটে-বলে না মেলে! কিন্তু সব চাওয়া মিথ্যা হয়ে গিয়ে যথারীতি সীমার বিয়ে হয়ে গেলো!

বিয়ের পরে কিছুদিন বেশ কয়েকবার খালাকে ফোন করেছে সীমা। প্রতিবারই বলেছে-আমারে এখান থাইকা নিয়া যাও আপা...।

বিয়েটাই করতে চায়নি ছোট সীমা। অথচ ওর মা ওকে জোর করে বিয়েতো দিয়েছেই তাও আবার ওর অপছন্দের পাত্রের সাথে! বয়সেও অনেক বড় লোকটা। এক পায়ে সমস্যা আছে বলে শারীরিক পরিশ্রম করতে পারেনা। নিজের বাড়িতেই আরবি পড়ায় বাচ্চাদের। তবে বাড়ি তার পাকা। জায়গা-জমি আছে বলে অবস্থাও খুব একটা খারাপ নয়।

সীমার আরেকটা সমস্যা হচ্ছে ওখানে সে টিভি দেখতে পারছে না। হুজুর গোছের লোক বলে বাসায় টিভি নেই। কিন্তু সামর্থ্য নাকি আছে কেনার।

সীমার বাড়ি খালার শ্বশুর বাড়ির কাছে। খালু যখন ওর বোনকে আনতে যায় তখন ও এসেছিল খালুর সাথে দেখা করতে।

১২-১৩ বছর বয়সী ছোট মেয়েটা খালুকে বলেছে-মায় আমার জীবনটারে নষ্ট কইরা দিছে ভাইয়া।

এরই মধ্যে সৈয়দার খালার বাসায় কাজে যোগদানের বয়সও প্রায় দু'সপ্তাহ হয়ে গেলো। শুরু হলো আবারো সেই পুতুল জীবনের পুনরাবৃত্তি...!