ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ২২:৪১:১১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

পুরাণ: বীর নারী আটলান্টা

শান্তা মারিয়া

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:১৯ এএম, ১২ অক্টোবর ২০১৯ শনিবার

বীর নারী আটলান্টা

বীর নারী আটলান্টা

গ্রিক পুরাণে আটলান্টা এক উল্লেখযোগ্য নারী চরিত্র। তিনি ছিলেন বীর নারী। সাহস, শক্তি ও গতিতে তিনি পুরুষ বীরদের অনায়াসে পরাজিত করতে পারতেন। রূপেও তিনি ছিলেন অসামান্য। যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী আটলান্টার সঙ্গে মহাভারতের মণিপুরের রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদার কিছুটা মিল রয়েছে। দুজনেই ছিলেন রাজকন্যা। দুজনেই বীর ছিলেন।

আটলান্টার পিতৃপরিচয় নিয়ে মতভেদ আছে। তার পিতার নাম ছিল ইনিয়াস অথবা স্কিনিউস। তিনি ছিলেন একটি ছোট রাজ্যের রাজা। তার আকাঙ্ক্ষা ছিল পুত্র সন্তানের। কন্যা সন্তান হওয়ায় তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন এবং নবজাত শিশুকন্যাকে জঙ্গলে ফেলে দেন, যাতে বন্যপ্রাণীরা তাকে মেরে ফেলে। কিন্তু ঘটল ঠিক উল্টো ঘটনা। এক মাদী ভালুক ছোট শিশুটিকে লালন পালন করল। নিজের শিশুর সঙ্গে তাকে স্তন্যদান করল এবং তাকে গড়ে তুলল অমিত বলশালী ও ক্ষিপ্র গতির এক শিশু হিসেবে।

আটলান্টা যখন বালিকা তখন একদল শিকারী তাকে জঙ্গলে দেখতে পেয়ে তার প্রতিপালন করে। শিকারীদের কাছ থেকে আটলান্টা শেখে শিকারের কলাকৌশল আর বেড়ে ওঠে এক বীর নারী হয়ে যে যেমন শক্তিশালী তেমনি অস্ত্র চালনায় নিপুণ।

একবার অরণ্যের ভিতর দুজন সেন্টর তাকে ধাওয়া করে। সেন্টররা মানুষের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হলেও এই বীর নারী এক তীরে দুটিকেই ঘায়েল করে।

গ্রিক বীর জ্যাসন যখন  স্বর্ণ মেষের চামড়া আনার অভিযানে তার জাহাজ আর্গোতে গ্রিসের শ্রেষ্ঠ বীরদের জড় করেন তখন আটলান্টাও সেখানে হাজির হন। তিনি ছিলেন এই অভিযানের একমাত্র নারী। এই অভিযানেই তার সঙ্গে অন্য আর্গোনট বীর ক্যালিডোনের রাজপুত্র মেলিজারের পরিচয় হয়। মেলিজার তার প্রেমে পড়লেও আটলান্টা তাকে বন্ধু হিসেবেই গ্রহণ করেন।

স্বর্ণমেষের অভিযান থেকে ফিরে আটলান্টা মেলিজারের সঙ্গে ক্যালিডোনীয় শূকর শিকারের অভিযানে অংশ নেন। এই অভিযান ছিল এক ভয়ংকর দানব শূকরের বিরুদ্ধে যাকে পাঠিয়েছিলেন দেবী আর্টেমিস রাজা ইনিউসকে জব্দ করার উদ্দেশ্যে। অভিযানে আরও অনেক বীর অংশ নেন। মেলিজারের দুই মামাও ছিলেন তাদের মধ্যে। ভয়ংকর শূকরটিকে আটলান্টাই প্রথম আহত করেন। পরে সবাই মিলে সেটিকে হত্যা করেন। আটলান্টা সেটিকে প্রথম আহত করায় এবং অবশ্যই প্রেমের নিদর্শন হিসেবে মেলিজার চামড়াটি আটলান্টাকে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। তার দুই মামা এতে ভয়ানক ক্ষিপ্ত হয়ে আটলান্টাকে আক্রমণ করে এবং অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে। মেলিজার প্রেমিকার সম্মান রক্ষার জন্য তাদের হত্যা করতে বাধ্য হন।

কিন্তু মেলিজারের মা এই সংবাদ জানতে পেরে তীব্র ক্ষোভে পুত্রের আয়ুর প্রতীক যে কাষ্ঠখণ্ডটি গোপনে রক্ষা করছিলেন তা আগুনে ফেলে দেন। ফলে অবধারিতভাবে মৃত্যু হয় মেলিজারের।

আটলান্টা এরপর অন্যান্য অভিযানে অংশ নেন। তিনি জ্যাসনের চাচা পেলিয়াসের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে আয়োজিত ক্রীড়ানুষ্ঠানে অংশ নেন এবং পুরস্কার জয় করেন। কুস্তিতে তিনি পরাজিত করেন একিলিসের বাবা বীর পেলেউসকে।

এরপর তিনি নিজের বাবা মায়ের খোঁজ পান এবং তাদের কাছে যান। এবার তার বাবা আটলান্টাকে সাদরে গ্রহণ করলেন। কারণ তার এই কন্যাটি ছিল সব পুত্রের চেয়েও বেশি বীর ও যোগ্য।

আটলান্টার রূপের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূর দূরান্তরে। তাই বিভিন্ন দেশ থেকে রাজা ও রাজপুত্ররা তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো শুরু করলেন। এসব বিবাহপ্রার্থীকে এড়ানোর জন্য আটলান্টা এক কৌশল বের করলেন। তিনি ঘোষণা দিলেন যে একমাত্র সেই পাত্রকেই তিনি বিয়ে করবেন যে তাকে দৌড় প্রতিযোগিতায় হারাতে পারবে। আটলান্টাকে দৌড়ে হারানোর মতো কোনো মানুষ ছিল না। একের পর এক যুবক এল। কিন্তু কেউই এই নারীকে হারাতে পারল না।

এদিকে মেলানিয়ন মতান্তরে হিপ্পোমেনেস নামে এক যুবক আটলান্টাকে ভালবাসতো এবং তাকে পাওয়ার জন্য জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত ছিল। সে আফ্রোদিতির সাহায্য প্রার্থনা করল। প্রেমিকদের প্রতি বরাবরই সহানুভূতিশীল  আফ্রোদিতি তাকে দিলেন হেসপাইরিডিসদের বাগানের তিনটি জাদুর  স্বর্ণ আপেল।

দৌঁড় প্রতিযোগিতা শুরু হল। আটলান্টা যথারীতি এগিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু সে সময় মেলানিয়ন একটা সোনার আপেল পথের পাশে গড়িয়ে দিলেন। আটলান্টা সেটা দেখার জন্য থামলেন এবং সেটা কুড়িয়ে নেওয়ার জন্য দৌঁড় ছেড়ে অন্যদিকে গেলেন। ততক্ষণে যুবকটি বেশ কিছুটা এগিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আটলান্টা তার পাল্লা ধরে ফেললেন। আবারও পথের পাশে বেশ কিছুটা দূরে গড়িয়ে গেল আরেকটি সোনার আপেল। এটা নেওয়ার জন্য আটলান্টকে আবার অন্যদিকে বেশ কিছুটা দূরে যেতে হল। ফলে অনেকটা এগিয়ে যেতে পারলেন মেলানিয়ন। দৌড়ে ফিরে এসে আটলান্টা তীব্র গতিতে এগোতে লাগলেন। সীমারেখার কাছাকাছি আসার পর তৃতীয় আপেলটা গড়িয়ে দিলেন মেলানিয়ন। আটলান্টা যতক্ষণে সেটা কুড়াতে গেলেন ততক্ষণে সীমায় পৌঁছে গেলেন মেলানিয়ন।

এইভাবে আটলান্টকে বিয়ে করলেন মেলানিয়ন। কিন্তু তার এই সুখ খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। আফ্রোদিতির সহায়তায় প্রেয়সীকে নিজের করে পেলেও তাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যায় যুবকটি। অন্য এক কাহিনিতে বলা আছে জিউস ও আফ্রোদিতিকে অপমান করে এই দম্পতি। ফলে যা হওয়ার তাই হল। অরুদ্ধ দেবদেবী দুজনকেই সিংহে পরিণত করেন এবং তাদের আফ্রোদিতির রথের বাহনে পরিণত করেন।

আটলান্টার এক পুত্র জন্মেছিল। তবে সেই সন্তানের বাবা কে ছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন মেলানিয়ন আবার কেউ বলেন মেলিজার সেই সন্তানের বাবা। পার্থেনোপিউস নামের সেই ছেলেটি বড় হয়ে মস্ত বীর হয়েছিল এবং থিবিসের বিরুদ্ধে বিখ্যাত অভিযানে সাতবীরের একজন ছিলেন তিনি।