সব সহোদর ভাইদের এক স্ত্রী যে অঞ্চলের রীতি
ডেস্ক রিপোর্ট
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৫:২০ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ছবি: ইন্টারনেট
পুরুষের একসাথে একাধিক স্ত্রী থাকলে সেটি খুব একটা খারাপ চোখে না দেখা হলেও একজন নারীর একাধিক স্বামী থাকাটা অন্যায় হিসেবে দেখা হয়। তবে, ভারতের হিমাচল প্রদেশের একটি অঞ্চলের রীতি হলো পরিবারের সকল সহোদর ভাইদের জন্য বউ থাকবে একজন। সমাজের রীতি পালন করার জন্য এক তরুণীর সাথে একই পরিবারের সব ভাইদের বিয়ে দেয়া হয়!
প্রদেশের ইন্দো-তিব্বতের সীমানার সাথে একটি জেলা কিনৌর। এখানে চালু আছে এই প্রথা। মহাভারত অনুসারে, ১৩ বছরের জন্য রাজ্য থেকে নির্বাসিত করা হয় পাণ্ডবরা। স্থানীয়দের বিশ্বাস করে, তারা নাকি তখন এই কিনৌরে লুকিয়ে ছিলেন। আর সেই থেকেই শুরু হয় এই অঞ্চলে মহিলাদের বহু বিবাহের প্রচলন।
সেই অঞ্চলের বহু কিনৌর এখনো নিজেদের পাণ্ডবদের বংশধর বলে দাবি করেন। যদিও এই নিয়ে বিতর্ক আছে।
এখানে একটি পরিবারে কোন পুরুষকে বিয়ে করলে তরুণীকে একই সাথে তার স্বামীর অন্য ভাইদেরও বিয়ে করতে হয়। বিয়ে করার পর যতগুলো সন্তানের জন্ম তিনি দেবেন; তাদের প্রকৃত বাবার পরিচয় পাওয়ার জন্য পুরো পরিবার সেই তরুণীর কথাতেই ভরসা রাখে। তবে, প্রকৃত বাবা যিনিই হোক না কেন; প্রতিটা সন্তান বড়ভাইকেই বাবা সম্বোধন করবে আর বাকিদের কাকা।
কিন্তু, কেন এমন রীতি? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রীতি চালু হওয়ার পিছনে প্রাচীন কিনৌরদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি একটা বড় কারণ ছিলো। পাহাড়ি, দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে কিনৌরের আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভাল ছিলো না। প্রতিটা পরিবারেরই সম্বল ছিলো নামমাত্র জমি। আর তা এতটাই কম ছিলো; যা ভাইদের মধ্যে পরবর্তীকালে ভাগাভাগি করা হলে, সে ভাগের জমি থেকে যা আয় হবে, তাতে সংসার চালানো কার্যত অসম্ভব ব্যাপার।
ইতিহাসবিদদের মতে, ছেলেদের বিয়ে করার পর জমি যাতে ভাগ না হয়; সেই চিন্তাভাবনা থেকেই এই অঞ্চলে ‘দ্রৌপদী’ প্রথার প্রচলন। তবে, শুধু কিনৌর নয়; ভারতের বেশ কিছু উপজাতির মধ্যে মহিলাদের বহু বিবাহ প্রথা চালু আছে এখনও। দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার নীলগিরির টোডাস ও উত্তর ভারতে মুসৌরি থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে জওনসর-বাওয়ার অঞ্চলেও উপজাতিদের মধ্যে এই রীতি দেখা যায়।
কিনৌরিদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে এখন অনেকটাই ভাল। পর্যটন শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এই কারণে এই প্রাচীন প্রথা অনেকটাই কমে এসেছে।
-জেডসি