ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৫:৫৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ধানের চেয়ে সূর্যমুখি চাষে লাভ বেশী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৫০ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কিরণী, বারী সূর্ঘমুখি-১, বারী সূর্ঘমুখি-২ এর পর এবার রোগ প্রতিষেধক, শতভাগ পুষ্টি সমৃদ্ধ খাটো জাতের বারী সূর্ঘমুখি-৩ চাষে সাফল্য পেয়েছে যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

একই সাথে এই বারী সূর্ঘমুখি-৩ ফুল চাষ করে কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তারা। এই ফুল চাষে বিঘা প্রতি কৃষক ১০০ দিনে ২৭-২৮ হাজার টাকার বীজ পাবে, যার উৎপাদন খরচ হবে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।

অন্যদিকে এক বিঘা জমিতে ধান করলে ১৪০ দিনে কৃষক পায় ২০-২২ হাজার টাকা, যার উৎপাদন ব্যয় চলে যায় ১৭-১৮ হাজার টাকা। এই ফুল চাষে ধানের চেয়ে কম সময়ে ১৬-১৭ হাজার টাকা বেশি আয় করতে পারবে কৃষকরা, তবে বাংলাদেশে এখনো হাইব্রিড সূর্ঘমুখি চাষ করা সম্ভব হয়নি, তবে খুব শিঘ্রই বাংলাদেশে হাইব্রিড সূর্ঘমুখির চাষ হবে। তখন বিঘা প্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা মূল্যের বীজ পাবে কৃষকরা। এমনটাই বলছিলেন যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হাফিজুর রহমান।

ক্যান্সার প্রতিষেধক, মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব দূরী করণ ছাড়াও ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য অধিক উপকারী বারি সূর্যমুখি-৩ এ জাতটি সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা এখন ভিড় জমাচ্ছেন কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। উন্নতমানে শতভাগ নিরাপদ সূর্যমুখির এ জাতটি আগামী বছরে কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

২০১৯ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তৈলবীজ কেন্দ্র থেকে উন্নত জাতের এ সূর্যমুখি ফুলের জাতটি অবমুক্ত করা হয়। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা তাদের তত্বাবধানে জাতটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে বারি-৩ সূর্যমুখি ফুলের ট্রায়াল শুরু হয়। গত এক বছর ধরে জাতটি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে ব্যাপক সফল হয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।

যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হাফিজুর রহমান বলেন, খাটো জাতের এ সূর্যমুখি ফুলের তেলে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তাছাড়া এতে মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ই-থাকায় মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ ও ত্বকের উজ্জলতার জন্য খুবই উপকারিতা রয়েছে। এজন্য জাতটি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে ভোজ্য তেলের যে চাহিদা রয়েছে তার সিংহভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব তেল কতটুকু নিরাপদ বা স্বাস্থ্য সম্মত সে বিষয় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে কৃষি বিজ্ঞানীরা খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধি বিভিন্ন ফসল আবিস্কার করার উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় খাটো জাতের এ সূর্যমুখির জাতটি আবিস্কার করা হয়। এছাড়া নতুন জাতের এ সূর্যমুখি ফুলের গুনাগুনের পাশাপাশি বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে খুবই উপযোগী।

তিনি বলেন, দেশে বর্তমান যে সুর্যমুখি ফুল চাষ হয় তা উচ্চতার দিক থেকে প্রায় ৮ থেকে ৯ ফুট উচ্চতা হয়। যেকারণে সামান্য ঝড় বা বাতাস হলে এর গাছ মাটিতে ভেঙে পড়ে। অথচ খাটো জাতের বারি-৩ সূর্যমুখি এ ফুলের জাতটি উচ্চতায় তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট উচ্চতা হওয়ায় ঝড়ে তেমন ক্ষতি করতে পারে না।

তিনি বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান তৈলবীজ ফসল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। সূর্যমুখীর বীজে শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ আমিষ থাকে। এতে শতকরা ৫৫-৭০ ভাগ লিনোলিক এসিড রয়েছে যা রক্তের কোলেস্টোরলের পরিমান কমায়। সূর্যমুখীর তেলে আলফা-টকোফেরল (ভিটামিন-ই), ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি১, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি থাকে। সূর্যমুখীর তেলে ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নাই। ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী একটি তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে আবাদ হচ্ছে।

তিনি বলেন, যারা তাদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখতে এবং এথ্রোসক্লেরোসিস প্রতিরোধ করতে চান তাদের জন্য সূর্যমুখী তেল একটি ভাল পছন্দ। এথ্রোসক্লেরোসিস ধমনীতে বেষ্টন করতে পারে, রক্ত চাপ বৃদ্ধি করতে পারে, এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কষ্টের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। কোলিন, ফেনোলিক অ্যাসিড, মনোআনস্যাচুরেটেড চর্বি এবং সূর্যমুখী তেলের মধ্যে বহুভিত্তিক চর্বি উপস্থিতি কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্র্রাস করে।

এছাড়া সূর্যমুখী তেল, ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, বিশেষ করে চামড়ার স্বাস্থ্য এবং পুনরায় তৈরী হওয়া কোষগুলির উন্নতির সাথে সম্পর্কিত। এটি আপনার ত্বককে সূর্যরশ্মীর ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখে। ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিসডেন্টসগুলি বিভিন্ন ধরেনের বিষক্রিয়াকে নিরপেক্ষ করে দেয় ফলে সুস্থ কোষ ধ্বংস বা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। দ্রুত ক্ষত নিরাময় এবং আপনার ত্বকের একটি স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। প্রসাধনী সামগ্রীতে সূর্যমুখীর তেল সাধারণত ব্যবহারের এটি একটি প্রধান কারণ।

সূর্যমুখী তেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পদার্থ সমৃদ্ধ। ভিটামিন ই যা টেকোফেরোল নামে পরিচিত যৌগসমূহের একটি গ্রুপ। একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার কোষকে সুস্থ কোষে রূপান্তরিত করতে পারে।

এছাড়া হাঁপানি (অ্যাস্থমা) সারা বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ লোককে প্রভাবিত করে এবং শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করে যা জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে। সূর্যমুখী তেল ইতিবাচকভাবে আছে এন্টি-প্রদাহী গুণগুলি যা তার ভিটামিনের উপাদান থেকে প্রাপ্ত। সেইসাথে উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি পাওয়া যায়। হাঁপানি (অ্যাস্থমা) সহ আথ্র্রাইটিসের তীব্রতা হ্রাসে সূর্যমুখী তেল ইতিবাচক পাওয়া গেছে।

-জেডসি