বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা ও এককাপ চা: সোমা দেব
সোমা দেব
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৭:৪২ পিএম, ১৭ জুন ২০২০ বুধবার
ছবি : সোমা দেব
ঠিক এরকম একটা বিকেল। দেখে মনে হয় যেন ঠিক সন্ধ্যে। আকাশ কালো করে বৃষ্টি পড়ছে দুপুর থেকে। ছোটবেলায় ফিরে যাই আমি। আষাঢ়ে কি শ্রাবণে। বৃষ্টির বিরাম নেই। টানা সারাদিন-রাত। শুধু বৃষ্টি কমে আর বাড়ে। শেষ হয়না। রাস্তাঘাট সব ডুবে থাকে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হয়না।
জানালা দিয়ে দেখি বাড়ির পেছনের বাগানটা জল থইথই। কতগুলো কলাগাছ উপড়ে পড়ে থাকে-সাথে ভেঙে পড়া বড় গাছের ডাল। একটা কলাগাছের নৌকার ছইয়ের মতো মাথায় কোত্থেকে পথ ভুলে চলে আসে একটা একলা ঘুঘু। পুকুরের জল উপচে পড়ে চলে আসে বাগানে-ক্ষেতে-রাস্তায়। আর ছোটছেলের দল সেখানে মাছ ধরতে ব্যস্ত। পুরনো ছেঁড়া ছাতা নিয়ে হাঁটুজলে নেমে বড়শি ফেলে কেউ ডোবার জলে। কেউ কোন ফল কুড়ানোর লোভে ঘোরে গাছের তলায়।
জলসাপ নাকি কোনো বিষাক্ত সাপ জানিনা, গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। আবার কিলবিল করে ঝোপের ভেতর লুকায়। পেয়ারাতলায় সাপের মুখ থেকে পা ছাড়ানোর প্রাণান্ত চেষ্টা চলে ব্যাঙের ছানার।
গাছ, গাছের ফুল, পাতা, ডাল ভিজে চুপসে থাকে, কোমর জলে দাঁড়িয়ে থাকে গাছ। ঘরে শুকায় শাড়ি, একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সন্ধ্যাবেলায়, শুধু সন্ধ্যা নয়, সারাদিন ব্যাঙের একঘেঁয়ে ডাক; একটু অন্ধকারে বড় লাঠির মাথায় মশাল জ্বেলে জল ভেঙে কেউ খপখপ করে হেঁটে যায়। শুনেছি ওরা রাতের অন্ধকারে মাছ আর ব্যাঙ খোঁজে।
উঠানে জলে ভেসে আসে মাছ। সন্ধ্যেপ্রদীপটা উঠোনের তুলসীতলায় ভিজে নিভে থাকে। প্রদীপের বুক ভরা তেল আর জল। সময় দেখা হয়না। শুধু দিন আর রাত। সবকিছু থমকে থাকে। যেন অঘোষিত লকডাউন।
বিকেল শেষে বারান্দায় বসে গরম চায়ের সাথে সরষের তেলে মাখা মুড়ি খাওয়া আর বৃষ্টি দেখা। মনে হত অমৃত। এরকম বৃষ্টিদিন আর ফিরে আসেনা। সেই ছোট্ট শহরটার মত।
সোমা দেব: লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক