ঢাকা, বৃহস্পতিবার ০২, মে ২০২৪ ১৪:০৭:০৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বাল্যবিয়ে: ঝরে পড়ছে কিশোরী শিক্ষার্থী

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:৫৮ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২০ শুক্রবার

বাল্যবিয়ে: ঝরে পড়ছে কিশোরী শিক্ষার্থী

বাল্যবিয়ে: ঝরে পড়ছে কিশোরী শিক্ষার্থী

সবে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে মাধুরীর (ছদ্মনাম)। সবগুলো পরীক্ষায়ই তার ভালো হয়েছে। আর স্কুলের শিক্ষকরাও তাকিয়ে আছে তার ফলের দিকে। কারণ একমাত্র মাধুরীই তাদের স্কুলের খুব ভালো শিক্ষার্থী। সাড়ে তিন মাইল দূর বিলছড়ি গ্রাম থেকে পড়তে আসে বান্দরবানের লামা হাই স্কুলে। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই বাবা-মা দু’জনের তোড়জোড় শুরু হয় বিয়ে দেওয়ার জন্য। মাধুরীর বিয়েতে কোন মত না থাকলেও ফল বের হওয়ার দিনই তার বিয়ের দিন ঠিক হয়। ফল জানার পর দেখা যায় পুরো স্কুলে একমাত্র মাধুরীই পায় এ প্লাস।
সবাই বলছিল, মেয়েটা আর একটু পড়ালেখা করতে পারলে ভালো হতো। ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারত। কিন্তু মাধুরীর বাবা-মায়ের এক কথা। মেয়ে বড় হয়েছে। দেখতেও সুন্দর। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে অনেক বখাটে ছেলে বিরক্ত করত। এখন যদি কোন বিপদ হয়ে যায়! আর প্রতিদিন কে তাকে কলেজে নিয়ে যাবে? আর নিয়ে আসবে? তাই বিয়ে দিলেই শান্তি।
বিশেষজ্ঞদের মতে এমন ঘটনা শুধু মাধুরীর ক্ষেত্রে নয়। ঘটছে আরো অনেক কিশোরী শিক্ষার্থীর জীবনে। নিরাপত্তার অভাব আর দারিদ্র্যের কারনে স্কুলের গন্ডি পার হতে না হতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হচ্ছে অনেক কিশোরীকে। আর বাল্য বিয়ের কারনে অকালেই ভেঙ্গে যাচ্ছে এ সব শিক্ষার্থীর স্বপ্ন।
তাদের মতে সমাজে নারীর অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে পারলে এবং নারী ও শিশুর উপর সব ধরনের সহিংসতা রোধ করা গেলে বাল্য বিয়ের হার একেবারেই কমে আসবে।
সূত্র মতে, ২০১৪ সালে পিইসি পাশ করা অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। সেবার পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সব মিলিয়ে ৩০,৯৪,২৬৫ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২০,৪৭,৭৭৯ জন। এ সময় ঝড়ে পড়েছে প্রায় ১০,৪৬,০০০ জন শিক্ষার্থীর। এসব শিক্ষার্থী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে ঝড়ে পড়েছে। আর এসব ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা বিশাল অংশই হচ্ছে কিশোরী শিক্ষার্থী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার পেছেনে নিরাপত্তা একটি বড় কারন। এছাড়াও অনেকে দারিদ্র্যতার কারনে স্কুল ছেড়ে দিয়ে বাবা-মা’র সাথে কাজ করে।
তাদের মতে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সবার বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। এজন্য সরকার দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা এবং উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো মেয়েরা রাস্তায় নিরাপদ অনুভব করে না। বিশেষ করে গ্রামে এই নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েই বেশী চিন্তিত থাকেন অভিভাবকরা। এর কারন হিসেবে তারা বলেন, সাধারনত এখানে হেঁটেই স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয় মেয়েদের। কিন্তু সব-সময় স্কুলে আসা-যাওয়ার সঙ্গী পাওয়া যায় না। যার ফলে তারা নিরাপদ থাকেনা। যার কারনে অভিভাবকরা মেয়েদের বিয়ে দিয়েই নিশ্চিত হতে চান।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনোয়ারা বেগম বলেন, কিশোরী শিক্ষার্থীদের স্কুল হতে ঝড়ে পড়ার বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের। তার মতে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদের বিশেষ করে ছেলেদের মানসিকতাও পাল্টাতে হবে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করাতে পারলে অভিভাকরাও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারবে।
এজন্য তিনি অভিভাবকদের প্রতি তাদের ছেলে সন্তানদেরও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার প্রতি জোর দেন। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে ছেলেরা যদি এ বিষয়ে নৈতিক শিক্ষা পায় তবে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এছাড়াও তিনি যেকোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার সাথে প্রশাসনের তড়িৎ ব্যবস্থার গ্রহণের প্রতি জোর দেন এবং তাদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
তিনি বলেন, এতে করে অনেকে সাবধান হয়ে যাবে। এবং কিশোরী বা নারীদের উক্তত্য করা কমে আসবে।