ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ২:১২:১৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মুন্সীগঞ্জের পাটি শিল্প রক্ষায় টঙ্গীবাড়ির নারী কারিগররা

ফিচার ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:১৬ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২১ শুক্রবার

মুন্সীগঞ্জের পাটি শিল্প রক্ষায় টঙ্গীবাড়ির নারী কারিগররা

মুন্সীগঞ্জের পাটি শিল্প রক্ষায় টঙ্গীবাড়ির নারী কারিগররা

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজলার আব্দুল্লাহপুর একটি ছোট্ট গ্রাম। কয়েকশ’ বছর যাবত ঐতিহ্যবাহী পাটি তৈরির শিল্প ধরে রেখেছে এই গ্রামের পাটিকরপাড়ার কারিগররা। তাদের অধিকাংশই নারী। গ্রামটিতে পাটি তৈরি ও বাজারজাতকরণের পূর্বপুরুষদের পেশায় এখনো রয়েছে শতাধিক পরিবার।

তবে প্লাস্টিকের পাটির বাজারে আসার পর থেকেই অনেকটাই কমেছে বেতি পাটির চাহিদা। এতে ঐতিহ্যবাহী শিল্পটির সাথে সংযুক্তরা র্দীঘদিন যাবত নানা শংকায় জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।

কোন মতে টিকে থাকা শিল্পটি করোনা পরিস্থিতিতে বাজার বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে। একবারেই ক্রেতা-পাইকার শূণ্যতার মুখে বিক্রি হচ্ছেনা পাটি। এঅবস্থায় কারিগররা অনেকেই যুক্ত হচ্ছে অন্য পেশায়।

সরেজমিনে পাটিকরাপাড়ায় গিয়ে জানা যায়, গ্রামটির খালি জায়গা, বাড়ির উঠান এবং ঘরের ভিতরও পাটি তৈরির কর্মকান্ড চলে। পাটির কারিগররা জানান, এক সময় মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটি তৈরি কাঁচামাল মোতরা সংগ্রহ করা হলেও পরবর্তীতে সিলেট জেলার বিভিন্ন মহল থেকে মোতারা কিনে আনা হয়।

কিনে আনা মোতরা কেটে পাটি বোনার উপাদান তৈরি করা হয়। মোতরা কাটার কাজটি করেন পুরুষরা। আর পাটি বুনার কাজ করে এলাকার নারীরা।

একটি পাটি বুনেেএকজন নারীর আয় ১শ ২০ টাকা। গৃহস্থলির কাজে ফাকে একেকটি পাটি বুনতে নারীদের সময় লাগে ২-৩দিন। আকার অনুযায়ী একেকটি পাটি তৈরিতে মোট খরচ হয় ২শ থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত তৈরিকৃত পাটি রোববার হাট ও বাড়ি থেকে পাইকরাররা ক্রয় করে নিয়ে যায় হয়।

তবে করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমানে হাট বসে না বলেলেই চলে। আগের মতো পাটির চাহিদা নেই। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়েই চলছে।

এ বিষয় এ শিল্পের সাথে জড়িত একডজনের বেশি নারী পুরুষের সাথে কথা হলে তারা জানান, একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, নায্য মূল্য না পাওয়া, চাহিদা হ্রাস কবলে কোন মতে টিকে থাকলেও করোনা পরিস্থিতে বাজার বিপর্যয়ের কারণে এ শিল্পর অবস্থা এখন তেমন ভালো নয়।

গোবিন্দ মোদি জানান, একটা পাটি বানাইতে ৩১০ টাকার মতো খরচ। তার উপর কয়েকদিন খাটনি। সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকা বিক্রি করি । লাভ করুম কি আর পরিবার লইয়া খামু কি। টুক-টাক যা বেঁচতাম-লাভ করতাম, করোনার লিগা কেউ পাটি নেয় না।

গঙ্গা নামের এক নারী জানান, আমাদের এখানে দুই ধরণের পাটি তৈরি হয় চিকন শীতল পাটি আর মোটা বেতির পাটি । কিন্তু এখন করোনার জন্য পাটি আর আগের মতো বিক্রি হয় না । হাটে নিলে চলে না, আমার অনেক অসহায় অবস্থায় আছি।

সান্তনা নামের অপর আরেক নারী জানান, প্লাস্টিকের পাটি বের হয়ে আমাদের পাটি অচল করে দিলো। তার উপর এখনো আবার করোনা। কষ্ট অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাইনা। ছেলেপুলারে অন্য কাজে দিয়া দিতাছি।

কল্পনা দে নামের এক প্রবীণ পাটি তৈরির নারী কারিগর জানান, ১২বছর হইছে পাটি তৈরি করি। এখন যে অভাব বাপু এমন অভাব কখনো দেখি নাই।

বেশ কয়েজন জানান, আগে বিভিন্ন জেলা থেকে আইসা পাটি নিতো এখন করোনার জন্য সব বন্ধ। সরকারের কাছে দাবি আমাদের পাটি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করার ।

জানা গেছে, এরই মধ্যে জীবিকার প্রয়োজনে কয়েক ডজন পরিবার এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে পেশা পরিবর্তনের এই সংখ্যা আরো বাড়তে থাকবে।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মুন্সীগঞ্জ শিল্প সহায়ক কেন্দ্র (বিসিক) উপ-ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান জানান, আমি কিছুদিন হলো এ জেলায় যোগদান করেছি। পাটি শিল্পের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোন সহযোগিতা চাইলে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সূত্র : বাসস