ভাষা সৈনিক লায়লা নূরের অবদানের কাহিনি
অপর্ণা আনন্দ
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:৫৩ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ রবিবার
ভাষা সৈনিক লায়লা নূর
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অনুবাদক লায়লা নূর ভাষা আন্দোলনের একজন অন্যতম সৈনিক। কুমিল্লা থেকে যে কয়েকজন মাতৃভাষা রক্ষায় সক্রিয় আন্দোলনে যোগদান করেন তিনি তাদের অন্যতম। ভাষা আন্দোলনে তার অবদান অপরিসীম। ১৯৫৭ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রথম নারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
জন্ম ও শৈশব : লায়লা নূর ১৯৩৪ সালের ৫ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার গাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবু নাসের মো. নূর উল্লাহ এবং মায়ের নাম শামসুন্নাহার মেহেদী। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
আবু নাসের ছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের জামশেদপুরে অবস্থিত টাটা স্টিল কোম্পানির প্রকৌশলী। সেখানেই লায়লা বেড়ে উঠেন। কুমিল্লায় এসে তিনি ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ১৯৫২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৫৪ সালে বি.এ. এবং ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন।
লায়লা নূর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রথম নারী শিক্ষক। এই প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি বিভাগে তিনি একটানা ৩৫ বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৭ সালে ড. আখতার হামিদ খান ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালে তিনি চাকুরিতে প্রবেশ করেন।
ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহণ : ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছিলেন লায়লা নূর। ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে লায়লা নূরসহ ২১ জন ছাত্রী পাকিস্তান পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে তিনি ২১ দিন কারাভোগ করেন এবং পরে মুক্তি পান।
সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা : ভিক্টোরিয়া কলেজের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ‘দি টিচার’ নামের একটি ম্যাগাজিন বের করতেন। সেখানে ইংরেজিতে লিখতে হতো। পরে তিনি দেশের বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে বাংলায় লিখেছেন। তার বেশি লেখা ছাপা হয়েছে তিতাশ চৌধুরীর সাহিত্য পত্রিকা অলক্তে। তিনি তিতাশ চৌধুরীর ১১৫টি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন।
সম্মাননা : কুমিল্লার সাহিত্য ও সমাজসেবামূলক সংগঠন বিনয় সাহিত্য সংসদ শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য লায়লা নূরকে ‘বিনয় সম্মাননা পদক-২০১৪’ প্রদান করে।
মৃত্যু : লায়লা নূর ২০১৯ সালের ৩১ মে কুমিল্লার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।