ঢাকা, সোমবার ২৯, এপ্রিল ২০২৪ ১৬:২৭:২৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সংসার, দাম্পত্য, সন্তান এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

তাহমিনা সুলতানা

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:২৩ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২১ রবিবার

তাহমিনা সুলতানা

তাহমিনা সুলতানা

একটা মেয়ে বড় হতে হতে সংসারের স্বপ্ন দেখে,ঘরের স্বপ্ন দেখে। সংসার করা মেয়েটার কাছে খুব সুখের একটা স্বপ্ন। মেয়েটা কিন্তু সংসার জীবনে ঢুকার আগ পর্যন্ত জানে না আসল সংসার স্বপ্ন আর কল্পনার মতো এতো সহজ নয়। বরং বেশ কিছুটা জটিল।

আমার ধারণা বাংলাদেশি বেশিরভাগ সংসারই জীবনের মতো ‘Bed of roses’ না।মানে অবিরাম সুখ বৃষ্টিতে ভেজা পদ্ম ফুল না। যদিও কেউ কেউ  অন্যরকম বলে। তারা শুধু বুদ্ধিমতী বলে নিজেকে, নিজেদের বড় করতে চায় অন্যদের চোখে। কিংবা কিছু সংসার আছে যেগুলো একেবারেই পারফেক্ট। তবে মনে হয়না এর সংখ্যা অনেক বেশি।

সংসারে কেন ঝড় ওঠে, কেন ঝগড়া হয়, অশান্তি হয়!

কারণ খুব সহজ, আবার জটিলও। আপাতদৃষ্টিতে আমার মনে হয় দুইজন ভিন্ন মানুষের পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে যে পার্থক্য, এটা এখানে বড় ভূমিকা রাখে। অনেকদিন ধরে যেমন স্বভাব বা আচরণ বা সৌন্দর্য একটা মানুষ প্রত্যাশা করে বাস্তবে সেই স্বপ্ন অনেকসমই মিলে না। সিনেমা, গল্প উপন্যাস আর উপর থেকে দেখা ভাসা ভাসা দাম্পত্য দেখে দাম্পত্যের বাস্তব ধরন অনুমান করা সম্ভব হয় না অনেকের ক্ষেত্রে। আর আমাদের দেশে আমরা অনর্থক এতো কিছু পড়ি কিন্তু জীবনের এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে প্রায় কোন কিছুই জানি না। বিয়ের আগ পর্যন্ত।দাদি, নানির মুখ থেকে কতোটুকু জানা যায়! আর তাদের জীবনই ছিল অগনিত ভুলে ভরা।

এখন কথা হচ্ছে, সংসারে শান্তি থাকা অবশ্য প্রয়োজনীয় । কোন সংসারের সন্তান সুষ্ঠু, সুস্থভাবে বড় হতে পারবে না যদি সে বড় হয় কোন অশান্তিপূর্ণ ডিফেকটিভ সংসারে। তাছাড়া শুধু সন্তান না নিজেদের শারীরিক, মানসিক সুস্থতার জন্য সংসারে শান্তির, সুখের দরকার। ঘরের সুখ ছাড়া কোন মানুষের পক্ষে সুখি হওয়া সম্ভব না।

সংসারে সুখি হওয়ার টিপস:

১) সংসারের সুখ বজায় রাখা একজনের পক্ষে  সম্ভব না।বরং দুইজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটা সংসার সুখি হয়। তাই, দুইজনের মধ্যে প্রথম থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে। মানুষটা কেমন এটা বিয়ের আগে জেনে সঠিক সঙ্গি বেছে নিলে এই বোঝাবুঝি, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়ার কথা।

২) পৃথিবীতে সন্তান আনার আগে ভেবে নিবেন। সারাজীবন এই মানুষটির সাথে কাটাতে চান কিনা। সন্তান আসার পর বিবাহ-বিচ্ছেদ সন্তানের জন্য আরামদায়ক কোন ঘটনা নয়। বাংলাদেশি সন্তানরা এখনো মা, বাবাকে এক বাড়িতে দেখতে চায়।  তাছাড়া একা সন্তান পালন যথেষ্ট স্ট্রেসফুল।

৩) সংসারে মেইন অশান্তি হয় যখন কেউ রেগে যায়। কিছু কিছু মানুষ রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এই রাগের সময় সে বা তারা যেসব কথা বলে অথবা যেসব আচরণ করে তার ফলশ্রুতিতে অনেক সংসারে ফাটল তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অপরাধ ঘটাও অবাক হওয়ার মতো ঘটনা নয়।

তাই, কেউ রেগে গেলে অন্যজনের মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। রেসপন্স করা যাবে। সবচেয়ে ভালো হয় রাগের  সময়ের উল্টাপাল্টা কথা না শুনতে পারলে।

যেমন অন্য ঘরে চলে যাওয়া বা অন্য কোনভাবে না শুনলে, রিয়্যাক্ট না করলে কিছুক্ষণ পর রাগ এমনিই পড়ে যায়। আর কারো ‘অ্যাঙ্গার প্রবলেম’ থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া যেতেই পারে।

৪) রাগের সময় অথবা বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে বলা কথাগুলো ভুলে যেতে হবে। ওগুলো মনে রাখার কোন প্রয়োজন নেই।

৫) বুঝতে চেষ্টা করুন। সঙ্গির সমস্যা, ক্ষোভ বা আচরণের উৎস বোঝার চেষ্টা করুন। একটা মানুষ যেমনই হোক তার মায়ের কাছে কিন্তু সে খারাপ না। কারণ তার মা তাকে প্রচন্ড ভালোবাসতে পারে। নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কতোটা ভালোবাসতে পারেন!

৬) বিশ্বাসঃ কখনো কোন সম্পর্কে বিশ্বাস নষ্ট হতে দিবেন না। একবার বিশ্বাস হারালে আর কখনো সেটা ফিরে পাবেন না। বিশ্বাসই সম্পর্কের প্রধান ভিত্তি।

৭) অনেক চেষ্টা করেও যদি আপনার মনে হয় আপনি সফল নন, আপনি যেমন চেয়েছেন বা চান সেভাবে পারছেন না, অপর পক্ষের কোন সাড়া নেই, তবে নিজে নিজে ভালো থাকার চেষ্টা করুন। চুপচাপ থাকুন।

কিছু না পেয়েই একতরফা দিয়ে যান। দেয়ার মধ্যেও সুখ আছে। কে বললো, আপনি সুখি না!

মিসিসাগা, কানাডা।