ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৮, এপ্রিল ২০২৪ ২৩:১৮:৩৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

কুমড়ো বড়ি: শতাধিক পরিবার দেখেছে সচ্ছলতার মুখ

ফিচার ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:২৫ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার

কুমড়ো বড়ি: শতাধিক পরিবার দেখেছে সচ্ছলতার মুখ

কুমড়ো বড়ি: শতাধিক পরিবার দেখেছে সচ্ছলতার মুখ

ডাল-চালকুমড়ার মিশ্রণ রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় কুমড়ো বড়ি। এই বড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের শতাধিক পরিবার। এই পরিবারগুলো এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। আগে শীতকালে এই পণ্যটির বেশি চাহিদা থাকতো। সে কারণে শুধু শীতকালেই কুমড়ো বড়ি তৈরি হতো। সারাদেশে চাহিদা ক্রমশ বেড়েছে। ফলত, পরিবারগুলোর ওপর তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে সারা বছরই সরবরাহের।
সরেজমিনে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কুমড়ো বড়ি তৈরি করে শুকানোর জন্য সারি সারি রোদে দেওয়া। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও এই কাজ করছেন।
কুমড়ো বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ মাষ কলাইয়ের ডাল, চালকুমড়া এবং সামান্য মসলা। তবে অন্য ডাল দিয়েও বানানো হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি মাষকলাই ১০০ থেকে ১২০ টাকা আর চালকুমড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি। সাইজ বিবেচনায় চালকুমড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকায় কিনতে হয়। পাঁচ কেজি চালকুমড়ার সঙ্গে দুই কেজি মাষ কলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়োবড়ি ভালো হয়। প্রথমে মাষকলাই রোদে শুকিয়ে যাতায় ভেঙে পরিষ্কার করে পানিতেি ভজিয়ে রাখতে হয়। ছাড়িয়ে নেওয়া হয় খোসা। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা মাষকলাই পানিতে ভেজাতে হয়। তারপর পাটায় পিষে কুমড়ো বড়ির মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এরপর দুইটির মিশ্রনে বড়ির উপকরণ তৈরি হয়। রৌদ্র উজ্জ্বল ফাঁকা স্থান, বাড়ির আঙিনা, ছাদ বা খোলা জায়গায় ভোর থেকে বড়ি তৈরি করার কাজশুরু হয়। পাতলা কাপড়ে সারি সারি বড়ি রোদে রাখা হয় শুকানোর জন্য। দুই থেকে তিন দিন টানা রোদে শুকাতে হয়। বিক্রির উপযোগী হয় তারপর।
কারিগররা আরও জানান, এই বড়ি দিয়ে কৈ, শিংবা শোল মাছের ঝোল বেশ মুখরোচক ও জনপ্রিয়। বড়ি বানানোর উপযুক্ত সময় শীতকাল। তবে চাহিদা বাড়ায় এখন সারা বছরই তৈরি করা হচ্ছে। নওগাঁ গ্রামের নারীরা সারা বছর ব্যস্ত কুমড়োবড়ি বানানোয়। বাড়ির আপন চাহিদা মিটিয়ে এই বড়ি হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।
বড়ি তৈরির কারিগর তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের শেফালী সাহা বাসস’কে বলেন, দুই টাকা কেজি থেকে শুরু করে আজ ১২ টাকা কেজিতে বড়ি তৈরির কাজ করছি। বিশ বছরের অভিজ্ঞতা আমার। প্রতিদিন ৪ থেকে ৬শ’ টাকা আয় হয়। মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আমরা পাই। সেটি দিয়ে পরিবার ও নিজের চাহিদা মিটিয়ে থাকি।
আরেক কারিগর লতা মাহাতো বাসস’কে জানান, এলাকার শত শত নারী এই কাজে এখন ব্যস্ত। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে কুমড়োবড়ি বানানোর ধুমপড়েযায়।
এখানকার বড়ি সুস্বাদু। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, রংপুর, দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই বড়িগুলো সরবরাহ করা হয়।
কুমড়োবড়ির কারিগর তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের ভাংশিং পাড়ার আব্দুল হামিদ জানান, এই পেশাটি আমাদের বাপ-দাদার আমলের। তাই আজও তা করে আসছি। বড়ি মূলত মাষকলাই, চালকুমড়া, জিরা, কালোজিরা, মোহরী দিয়ে তৈরি করা হয়। প্রতি কেজিবড়ি ৩০০-৩৫০ টাকা (বড়) এবং ১৫০-২০০ টাকা (ছোট) করে পাইকারি বিক্রয় করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়তই পাইকাররা এসে আমাদের কাছ থেকে এই বড়ি কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন হাটেও খুচরা বিক্রয় করা হয় এই পণ্য।
বগুড়া জেলা থেকে বড়ি কিনতে এসেছেন ব্য্যবসায়ী এনামুল হক। তিনি বলেন, এখানকার কুমড়াবড়ি যেমন নরম, তেমনি খেতেও বেশ ভালো লাগে। একবার যে এই বড়ি খায়, পরের বার আবার খুঁজে এই বড়ি কিনে নিয়ে যায়। আমার কিছু নিজস্ব খরিদ্দার আছেন, যাদের প্রধান পছন্দ এখানকার বড়ি। অন্য বড়ি কম দামে পাওয়া গেলেও নিতে চান না গ্রাহকরা। তাই বাধ্য হয়ে তাদের জন্য এখান থেকেই বড়ি নিয়ে যাই।
একই গ্রামের বড়ি-কারিগর রহিম শাহ বলেন, আমরা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কোনো মতে এই পেশাটি কিয়ে রেখেছি। ইচ্ছে থাকলেও এই শিল্পকে প্রসারিত করতে পারছি না, কারণ পুঁজি কম। এখন উপকরণের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় লাভ অনেকটাই কমে গেছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তরুণ সরকার জানান, সারা দেশে নওগাঁর কুমড়াবড়ির সুনাম রয়েছে। অনেক দূর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এই গ্রামের কুমড়াবড়ি নিয়ে যান। তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সরকারি ভাবে কিংবা কোনও সংস্থার কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পান না। আর্থিকভাবে সহযোগিতা পেলে এই শিল্পটি আরও প্রসারিত হতে পারতো।