সিরিয়া সীমান্তে সাংবাদিক সেরেনার রহস্যজনক মৃত্যু আজও প্রশ্ন
শিহাব শাহীন
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৩:২৬ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৩:২৪ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০১৭ সোমবার
তিন বছর আগে এই অক্টোবরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া সীমান্তে রহস্যজনকভাবে নিহত হন ইরানি সংবাদ সংস্থা `প্রেস টিভি`র সাংবাদিক সেরেনা শিম। ২৯ বছর বয়স্ক সেরেনা লেবানিজ বংশোদ্ভূত আমেরিকার নাগরিক। তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে সিরিয়ার `কোবানি` শহরের কাছে আইএস মিলিট্যান্ট ও কুর্দি বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করে সিরিয়া সীমান্তের কাছাকাছি তুরস্কের শহর সুরুক থেকে ভাড়া করা গাড়িতে নিজ হোটেলে ফিরছিলেন তিনি।
গাড়ি দুর্ঘটনায় সেরেনার মৃত্যু সত্যি সত্যি দুর্ঘটনা না হত্যা, সেই সন্দেহের ঘোর এখনো কাটেনি! বিশ্ব সম্প্রদায়, যুদ্ধক্ষেত্রে কাজকরা অন্যান্য সাংবাদিক ও ইরানিয়ান প্রেস টিভি কর্তৃপক্ষের মাঝে এই সন্দেহ ঘনীভূত হওয়ার কারণ রয়েছে। নিজ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে প্রেস টিভিকে সাক্ষাৎকার দেয়ার একদিন পরই গাড়ি দুর্ঘটনায় সেরেনা নিহত হওয়া।
সাক্ষাৎকারে সেরেনা বলেছিলেন, তুরস্ক গোয়েন্দা সংস্থা (এমআইটি) তাকে স্পাই হিসাবে চিহ্নিত করেছে এবং মৃত্যুর হুমকী দিয়েছে’। ১৯৮৫ সালে জন্ম নেয়া সেরেনা তার ২ বছর বয়সী শিশু কন্যা ও ৪ চার বছর বয়সী শিশু পুত্রের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যত নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন।
তুরস্ক গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ট্রাকে করে আইএস জঙ্গিরা সিরিয়া প্রবেশ করছে। তুরস্ক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করছে। সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করে সেরেনা এই সমস্ত ছবি ধারন করেন এবং ভিডিও করেন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেরেনার পাঠানো সংবাদ, ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্ব গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সিরিয়ার যুদ্ধে তুরস্কের সম্পৃক্ততার বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়। সেই সাথে জঙ্গি পরিবহনে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ট্রাক ব্যবহার ছিল আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর পরপরই তুরস্ক গোয়েন্দা সংস্থা সেরেনাকে হত্যার হুমকী দেয়। এই হুমকীর কথা প্রকাশ করে দেয়ার একদিন পরই সেরেনা গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হন।
আমেরিকার বন্ধু এবং ন্যাটো জোটভুক্ত দেশ তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা আমেরিকান নাগরিক সেরেনাকে হত্যার হুমকী দিলো এবং পরবর্তীতে তুরস্ক সীমান্ত শহরেই সেরেনা নিহত হলো। কিন্তু এ হত্যার নিন্দা বা দুর্ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত কারণ উদঘাটনে আমেরিকার প্রশাসন ও মিডিয়ার মাঝে কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। বরং তারা একেবারে নীরব ছিলো।
অথচ আমেরিকার আরেক সাংবাদিক জেমস ফলি অপহরণ হলে আমেরিকা আইএস দমনের নামে সিরিয়ায় আক্রমনের অজুহাত খুঁজে পায়। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফলিকে অপহরণ ও হত্যায় নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তার কর্মের বয়ান দিয়ে শোক গাঁথা রচনা করে বাণী দেন! দেশের প্রেসিডেন্টের এই ধরনের বিবৃতিতে ফলির মৃত্যুতে আমেরিকার রাজনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব কি তা প্রকাশ পায়। কিন্তু সেরেনার ব্যাপারে তিনি কোন বিবৃতি দেন নি।
সেরেনার হত্যার ব্যাপারে আমেরিকার জনগণ, মিডিয়া এবং রাষ্ট্র হিসাবে আমেরিকার মৌনাতা ছিল, আমেরিকান প্রশাসনের ডাবল স্ট্যান্ড-এর এক অনন্য উদাহরণ।
