খনি বেগমের স্মৃতিবিজরিত বাকরখানি
শিহাব শাহীন
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:১৮ এএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ রবিবার
সংগৃহীত ছবি
খনি বেগমের স্মৃতি চিরজাগরুক রাখতে আগা বাকের রুটির নাম দিয়েছিলেন 'বাকেরখনি'। মানুষের মুখেমুখে যা কালক্রমে আজ বাকরখানি নামে জনপ্রিয়!
পুরনো ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে সকাল-সন্ধ্যার হালকা খাবার হিসেবে বাকরখানি এখনো চাহিদার শীর্ষে। আড়াই শতাব্দীর ঐতিহ্যের ধারক এ বাকরখানি আর মগ ভর্তি চা না হলে যেন সকালটাই চাঙ্গা হয় না। ইদানিং বাকরখানির চাহিদা আরো বেড়েছে বলেই মনে হয়। কারণ ডাউন টাউনের বাহিরেরও নতুন ঢাকার অভিজাত এলাকার তারকা শপিংমল, চেইনশপগুলিতেও এখন প্যাকেটজাত অবস্থায় বাকরখানি পাওয়া যায়। যদিও পুরান ঢাকার তৎনগদ গরম গরম বাকরখানির মজাই আলাদা।
বাকরখানির ইতিকথাঃ পুরান ঢাকার ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাকরখানি তৈরির পিছনে রয়েছে অমর এক প্রেমকাহিনী। আগা বাকের নামে তুর্কিস্তানের এক ভাগ্যবিড়ম্বিত বালক ক্রীতদাস হয়ে এসেছিলো এদেশে। বাংলার সুবেদার নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ সুদর্শন এ বালককে কিনে নিয়েছিলেন। আগা বাকেরের বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ নবাব তাকে লেখাপড়া ও সামরিক বিদ্যায় সুশিক্ষিত করে তোলেন। যৌবনে আগা বাকের প্রথমে চট্টগ্রামে ফৌজদারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি বাকলা চন্দ্রদ্বীপের শাসনকর্তা ছিলেন। তার নামানুসারে বাকেরগঞ্জ (পরবর্তীকালের বরিশাল) জেলার নামকরণ হয়।
আগা বাকের ভালোবেসেছিলেন সুন্দরী নর্তকী খনি বেগমকে। তার প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন উজির জাহান্দার খাঁর ছেলে কোতয়াল জয়নুল খাঁ। এই নর্তকীকে ঘিরে আগা বাকের ও জয়নুল খাঁর দ্বন্দ্ব ছিল তুঙ্গে। নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ এই দ্বন্দ্বের জের ধরে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বাকেরকে বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করেছিলেন। শক্তিধর বাকের বাঘকে হত্যা করে খাঁচা থেকে বীরদর্পে বেরিয়ে এসেছিলেন।
কিন্তু ভাগ্যের কাছে বুদ্ধি ও শক্তি সবসময়ই মার খায়! তাই দেখা যায়, বাঘকে হত্যা করে খাঁচা থেকে বীরদর্পে বেরিয়ে আসলেও আগা বাকের 'খনি বেগম'কে পাননি। কারণ ততক্ষণে, খনি বেগমকে অপহরণ করে দুর্গম চন্দ্রদ্বীপের গহীনে পালিয়ে গিয়েছিলেন জয়নুল খাঁ। আগা বাকের প্রেমিকাকে উদ্ধারে রণসাজে চন্দ্রদ্বীপে উপস্থিত হলে জয়নুল খাঁ খনি বেগমকে হত্যা করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
প্রখ্যাত লেখক নাজির হোসেন তাঁর ‘কিংবদন্তীর ঢাকা’ গ্রন্থে বলা বলেছেন, খনি বেগমকে না পেলেও প্রেমের স্মৃতি চিরজাগরুক রাখতে আগা বাকের নতুন ধরনের শুকনো রুটি তৈরি করিয়ে তার নাম দিয়েছিলেন বাকেরখনি। সাধারণ মানুষের উচ্চারণে যা কালক্রমে আজ বাকরখানি নামে জনপ্রিয়।