ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ১৩:১৩:৪৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয় শেরপুরের মন্ডা

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:৫২ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ সোমবার

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

শেরপুর জেলার মিষ্টি দোকানগুলোতে মন্ডার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। মন্ডার প্রথম যাত্রা শুরু হয় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। কিংবদন্তি আছে বাংলা ১২৩১ সালে মন্ডা নামক এ মিষ্টির যাত্রা শুরু মুক্তাগাছার তৎকালীন জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর রাজদরবারে। আর এর কারিগর ছিলেন মুর্শিদাবাদের রাজদরবার থেকে আসা জনৈক গোপাল। 

জমিদার অধ্যুষিত মুক্তাগাছা ও শেরপুরের জমিদারদের সাথে আত্বীয়তা ও কর নেওয়া দেওয়ার সম্পর্ক ছিল সুদৃঢ়। এ সুবাদেই দু’অঞ্চলের জমিদারদের মধ্যে নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল। ওই অঞ্চলের জমিদাররা যখন শেরপুর আসতেন তখন জমিদারদের প্রিয় খাদ্য বিলাসের তালিকায় মন্ডা থাকতো অবধারিত। আর মন্ডা বানাতে সাথে আনতেন কারিগর। জমিদারদের বৈঠক, নানা আনন্দ বিনোদন স্থানের কাছে কারিগররা চুলা তৈরি করে মন্ডা বানাতেন। তখন শেরপুরে গরুর খাঁটি দুধ পাওয়া যেত বলে আগত কারিগররা উন্নত মানের মন্ডা বানাতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। 

ওই কারিগরদের কাছ থেকে শেরপুরের বেশ কিছু কারিগর মন্ডা তৈরির কৌশল রপ্ত করে। পরবর্তীতে মুক্তাগাছা থেকে আর কারিগর এনে মন্ডা তৈরি করতে হয়নি। শেরপুরের কারিগররাই জমিদারদের এ সেবাটি দিতেন। তবে তখনও প্রজারা এ মন্ডার স্বাদ নিতে পারতেন না। অভিজাতরাই এই মন্ডার স্বাদ নেওয়ার এক চেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করতেন। জমিদার আমল শেষ হওয়ার পর থেকে বাণিজ্যিক ভাবে মন্ডার ব্যবহার আস্তে আস্তে শুরু হয়।

শেরপুরের বিখ্যাত মন্ডার খ্যাতি আগে থেকেই স্থানীয়, আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মোটমোটি কাছের সব রাষ্ট্রেই আছে। রাতে বাড়ি ফেরার সময় আদরের সন্তানের জন্য বাবারা দু চারটি মন্ডা পকেটে তুলে নেওয়ার অভ্যাস পুরনো। সদ্য বিবাহিতরাও রাতে নতুন বধূকে খুশি করতে মন্ডা নিতে ভুল করে না। শেষ বিদায় বেলায় মন্ডা খাওয়ার আবদার স্বজনদের কাছে তো থাকেই। আত্নীয়বাড়ি বেড়াতে গেলে মন্ডার প্যাকেট একটা লাগবেই। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বিশেষ করে কোলকাতা মেঘালয় আসামের আত্নীয়দের আবদার থাকে শেরপুর থেকে রওনা দেওয়ার সময় যেন টাটকা মন্ডা সাথে নেওয়া হয়। 

এখানকার সরকারি বেসকারি বৈঠকের আপ্যায়নে মন্ডা না থাকলে চলেই না। ইতিমধ্যে ই-কামার্স বা জেলা ওয়েব সাইট আওয়ার শেরপুরসহ বেশ কিছু অল লাইন এখন অন লাইন অর্ডারে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে এ মন্ডা। জানা গেছে কেবল মাত্র অনলাইন গ্রাহকদের মাধ্যমে মাসে মণ তিনেক মন্ডা অন লাইনে বিক্রি হচ্ছে। 

এ মন্ডার এখানে বাজার দর প্রতিকেজি সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ টাকা।প্রতিটি মন্ডার দাম বিশ টাকা।আগে সকল মিষ্টির দোকানেই কমবেশী মন্ডা তৈরি হতো।নানা কারণে অনেকেই মন্ডা এখন আর তৈরি করে না। তবে অনুরাধা, আদি গিরীশ,পার্থ মিষ্টান্ন ভান্ডার, দূর্গা চরণ ও স্বদেশ মিষ্টান্ন ভান্ডার এখনও স্বকীয়তা ধরে রেখেছে। 

এসব দোকানে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ছেলে যুবক বুড়োদের মন্ডা খাওয়ার ধুম পড়ে। আর দিনে দুপুরে সামান্য ক্ষুদায় অনেকেই ঝটপট বিশুদ্ধ একটি মন্ডা ও এক গ্লাস পানি খেয়ে ক্লান্তি মিটিয়ে নেয়।

মন্ডা ব্যবসায়ী ও কারিগর সূত্রে জানা গেছে, মন্ড তৈরির প্রথম শর্ত খাঁটি দুধের ছানা। ছানা দিয়ে তৈরি করা হয় ক্ষীর। এ ক্ষীরের সাথে সামান্য চিনি ও এলাচ দানা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ কড়ায়ে জাল দিলে ময়দা রঙের সাদা ধপধপা কায়ের মত তৈরি হয়। ছানা যত টাটকা হবে মন্ডাও তত সুস্বাধু হবে। 

মিষ্টি দোকানী সূত্র জানায় মন্ডার কারিগররা শ্রমিকদের মধ্যে একটু ভিন্ন প্রকৃতির। ওদের বেতন ও কদর মলিকদের কাছে বেশী হয়ে থাকে। 

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ছানা, ক্ষীর, এলাচি ও চিনির সমন্বয়ে মন্ডা উৎপাদন হওয়ায় এতে রয়েছে অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ, সি, ডি, বি-১২, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, রিবোফ্লাভিন, ম্যাগনেশিয়াম, নিয়াসিন। নিয়মিত মন্ডা খেলে শরীরের হাড় সুঠাম হয়। চিনির পরিমান কম থাকে বলে ডায়াবেটিস রোগীরা পরিমিত ভাবে মন্ডা খেতে পারেন। যাদের সরাসরি দুধ খাওয়া সমস্যা তারা মন্ডার স্বাদ নিয়ে শরীরের দুধের চাহিদা মিটাতে পারে। 

জয়দূর্গা মিষ্টান্ন ভান্ডারের পরিচালক মঙ্গল চন্দ্র ঘোষ  বলেন, আমরা এখন অনলাইনের মাধ্যমে মন্ডা বিক্রয়ের অর্ডার পাচ্ছি। আমরা সঠিক সময়ে তা সরবরাহ করে থাকি। 

শেরপুর জেলায় উৎপাদিত খাঁটি দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ থাকায় মিষ্টান্ন শিল্পের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে মন্ডা, চমচম, কালোজাম এবং শেরপুরের বিখ্যাত মিষ্টি, সানার পায়েশ উল্লেখযোগ্য। 

তিনি আরও বলেন, আমরা মিষ্টি ব্যবসায়ীরা সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স রাজস্ব উৎপাদনের উপরে দিয়ে থাকি, তাতে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।