যে দুটি গ্রামে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৮:৩৯ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২১ সোমবার
ফাইল ছবি
নওগাঁর রানীনগরে দুটি গ্রাম পাখির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পাখির কিচিরমিচির শুনতে ও দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেছেন পাখি প্রেমিরা।
উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের সর্বরামপুর ও গোনা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে পাখির কিচিরমিচির শব্দে। পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় পেলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজনন ও বংশবিস্তারে ভূমিকা পালন করবে এমনটাই আশা সচেতন মহলের।
জানা গেছে, সর্বরামপুর গ্রামে রতনডারিখাল ও দুর্গাপুর গ্রামের কুজা পাড়ায় শিমুল, কড়ই ও ইউক্যালিপটার্স গাছে বাসা বেধেছে শামুকখৈল ও বকসহ কয়েক প্রজাতির পাখি। নিরাপদ আশ্রয় ভেবে গত তিন বছর থেকে পাখিরা বসবাস করছে। সারা বছরই তারা বসবাস করে ও প্রজনন হয়। সারাক্ষণ চলে ওদের ডানা ঝাপটানো ও দল বেধে আসা-যাওয়ার দৃশ্য। কেউ যাচ্ছে খাবার সংগ্রহে আবার কেউ বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।
সারাদিন চলে তাদের এমন কর্মযজ্ঞ। বিকেল থেকে এ এলাকাটি মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির কল-কাকলিতে। নির্বিঘ্নে রাত কাটিয়ে আবার ভোর হলেই খাবারের সন্ধানে চলে যায়। দিনশেষে আবারও তারা নীড়ে ফিরে আসে। কিন্তু মাঝে মাঝে পাখি দেখতে আসার নামে কিছু কতিপয় ব্যক্তিরা সবার অজান্তেই পাখি শিকার করছে। এতে ভয়ে অনেক পাখিই অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
দুর্গাপুর গ্রামের সোহেল রানা ও সর্বরামপুর গ্রামের আসলাম হোসেন, গৃহবধূ ফারজানাসহ অনেকেই বলেন, ভোরে পাখির কিচিরমিচির শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙে। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে পাখিদের আনাগোনা ও কিচিরমিচির বেশি থাকে। পাখিগুলো বর্তমানে আমাদের পরিবারের এক সদস্যে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক বছর থেকে পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় ভেবে এখানে বসবাস করছে।
পাখি শিকার রোধে মানুষকে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তারপর গোপনে অনেক শিকার পাখি শিকার করে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে গ্রামে প্রবেশের আগেই যদি সর্তকতামূলক ও সচেতনমূলক কিছু পোস্টার, ব্যানার কিংবা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হলে পাখি শিকার কমে যাবে। এছাড়া আগামীতে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রজাতির পাখিগুলো প্রজনন ও বংশবিস্তার করতে পারবে।
উপজেলা প্রকৃতি ও পাখি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে বিলুপ্ত প্রায় এই পাখিগুলোর টিকে থাকা অনেক জরুরি। কিন্তু আমরা অনেকেই নির্বিচারে বিলুপ্ত প্রায় এই পাখিগুলো শিকার করছি যা আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ। তাই এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, এলাকা দুটি পরিদর্শন করে পাখিগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে এই সম্পদগুলো রক্ষা করতে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। পাখি রক্ষায় নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।