গাছের তলায় `গাছের ইস্কুল`
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৬:৫৯ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২১ শুক্রবার
ফাইল ছবি
রাজনীতির ম্যানিফেস্টোতে গাছের কথা লেখা থাকে? বোধহয় না। মানুষ যেমন গাছ কাটে, সেই মানুষই কিন্তু আবার গাছের পরিচর্যা করে। হাতড়াতে থাকে শেকড়, যা মানুষের অধিকার। গাছেরা কথা বলতে পারে না, কিন্তু গাছের হয়ে কথা বলে যদি একদল শিশু? মুর্শিদাবাদ-এর ফরাক্কার বাসিন্দা অংশুমান ঠাকুরের চিন্তাভাবনা থেকেই শুরু হয়েছে ‘গাছের ইস্কুল’। কার্যত লকডাউনের আগে থেকেই একদল শিশু এখানে আসছে, ছড়া আওড়াচ্ছে, হাসছে, খেলছে, খুনসুটি করছে। আর গাছের মতো তাদের পরিচর্যা করছে অংশুমানরা।
‘গাছের ইস্কুল’, প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থানার অন্তর্গত বাগদাবড়া অঞ্চলের শামলাপুর গ্রামে মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে (মার্চ ২০২১ থেকে) চালু হয়েছে গাছের তলায় ‘গাছের ইস্কুল’। আর্থিক সমস্যার কারণে যারা বইমুখী নয়, ইস্কুলে যাওয়া যাদের আর হয়ে ওঠে না, সেই সমস্ত আদিবাসী শিশুদের নিয়েই এমন উদ্যোগ। প্রকৃতির মাঝে পড়াশোনা। তাই তাদের সিলেবাসে যেমন বাংলা ছড়া আছে, নামতা আছে, তেমনই আছে গাছেদের পরিচর্যার কথাও।
গাছের ইস্কুল-এর পক্ষ থেকে অংশুমান ঠাকুর জানান, “পিছিয়ে পড়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার সম্প্রসারণ আর প্রকৃতি চেতনা গড়ে তোলাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পুষ্টির অভাব দূর করার জন্য সপ্তাহে দুই দিন ডিম বিতরণের ব্যবস্থা করি। কিন্তু করোনা মহামারী ও লকডাউনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের পঠনপাঠন ও খাবারের ব্যবস্থা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই অনেকের আর্থিক সহায়তায় ‘গাছ সংগঠন’ এই ‘গাছের ইস্কুল’-এর বাচ্চাদের ২৫ মে থেকে গোটা একমাস দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। লকডাউনে বাচ্চাদের খাদ্য সুনিশ্চিত করারও দায়িত্ব নিয়েছি আমরা।”
অংশুমান জানান অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের পরিকল্পনার কথা। ওই অঞ্চলেই একটা ফাঁকা জায়গা দেখে মাটির বাড়ি করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁদের। সেটিই হবে গাছের ইস্কুল। আদিবাসী বাচ্চারা একেবারে নিজের মতো করে, স্বাধীনভাবে পড়াশোনা করবে, বড়ো হয়ে উঠবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বাচ্চারা বড়ো হলে নিজেরা হাতের বিভিন্ন কাজ করে যাতে রোজগার করতে পারে, তার ব্যবস্থাও পরবর্তীকালে গ্রহণ করা হবে।
