যাদের সংসার চলে অন্যের জমির ফসল তুলে
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:৫৭ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার
ফাইল ছবি
‘অনেক আগেই স্বামী মারা গেছে। নেই কোনো সন্তানও। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই বাবার বাড়িতেই থাকি। নিজের কোনো জমিজমাও নাই। এ জন্য বেঁচে থাকার তাগিদে তাই অন্যের জমিতে ফসল তোলার কাজ করি। প্রতিদিন ২০০ টাকা রোজে এই কাজ করেই সংসার চালাই। তাতে কোনোমতে চলে যাচ্ছে জীবন। এই বয়সে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতেও অনেক কষ্ট হয়। কী করব? এছাড়া তো কিছুই করার নাই।’
এভাবেই নিজের সংগ্রামী জীবনের কথাগুলো বলছিলেন কাঞ্চন বেগম। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের রাইল্যা গ্রামে।
সাটুরিয়ার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের রাইল্যা গ্রামে দেখা যায়, জান্না গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলামের সবজিখেতে ফসল (শসা) তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাঞ্চন বেগম। তার মতো আরও দুইজন নারী শ্রমিক রিনা আক্তার ও শহিতন বেগমও ব্যস্ত ফসল তোলার কাজে। তারা প্রত্যেকেই ২০০ টাকা মজুরিতে ফসল তোলার কাজ করছেন।
কাঞ্চন বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়া পর থেকে বাবার বাড়িতে থাকেন তিনি। কোনো সন্তান না থাকায় নিজের জীবন-জীবিকার তাগিদে ২০০ টাকা রোজে প্রতিদিন অন্যের জমির ফসল তোলার কাজ করেন। এই উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলে তার জীবন। নিজের কোনো জমিজমাও নাই। এ কারণে দিনমুজুরের কাজ করেই চলছে তার জীবন। তবে বছরে ছয় থেকে সাত মাস এই কাজ করতে পারেন বলে জানান এই নারী শ্রমিক।
উপজেলার রাইল্যা গ্রামের আরেক নারী শ্রমিক রিনা আক্তার জানান, এই গ্রামেই আমার বাড়ি। স্বামীর উপার্জনের পাশাপাশি সন্তানদের চাহিদা পূরণ আর সংসারের আয়ের জন্য মাঠে কাজ করি। নিজেরে কোনো জমিজমা না থাকায় অন্যের জমিতে ফসল তোলার কাজ করে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পাই। তবে এই কাজ সারাবছর করতে পারি না।
তিনি আরও জানান, স্বামী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেটা লেখাপড়া করে। আরেক মেয়ে ছোট। স্বামীর অল্প উপার্জন আর আমি যে টাকা রোজগার করি তা দিয়েই সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। রোদের মধ্যে এ কাজ করতে অনেক কষ্টও হয়। কিন্তু কিছুই করার নাই।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আরা এ বিষয়ে বলেন, কৃষিসহ বিভিন্ন সেক্টরে নারীরা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। সাটুরিয়া উপজেলাসহ এ জেলার বিভিন্ন ধরনের সবজির বেশ সুনামও রয়েছে। আমারা কিছুদিন আগেই কৃষকদের সার ও বীজ বিরতণ করেছি।
তিনি আরও জানান, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যাতে কৃষিতে কাজ করতে পারে সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। কৃষি কাজে নারী শ্রমিকরা এই প্রশিক্ষণের আওতাভুক্ত। সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ পেলে অবশ্যই নারী শ্রমিকদের সহযোগিতা করা হবে বলে ইউএনও জানান।
