ঢাকা, সোমবার ২০, মে ২০২৪ ৭:৩১:০৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

হেমন্তের বিকেলগুলো ভীষণ ভাললাগার: সোমা দেব

সোমা দেব

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:২৮ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০২১ রবিবার

লেখক সোমা দেব

লেখক সোমা দেব

হেমন্তের এই বিকেলগুলো আমার ভীষণ ভাললাগার। একটা পাতলা আবরণের কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে গুটি গুটি পায়ে এসে যেনো পাশে দাঁড়ায়।
দুপুরে ভাতঘুম না দিয়ে খাওয়ার পর যখন মিঠে রোদে পিঠ পেতে একটা বই পড়বার জোগাড় করি তখনি যেনো বিকেল এসে পড়ে হুট করে। এসেই আবার চলে যাবার তাড়া। সূর্যের আলোরও তেজ কমে যায়। বই পড়ার ফাঁকে কতদূর, কত পুরোনোকে ডেকে আনে চোখের সামনে। যখন অনেক গাছপালা ঘেরা একটা বাড়িতে থাকতাম আমরা। 
এরকম হেমন্তের দুপুরে উঠোনের বিশাল এক জবা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আমি, রোদে কুসুম গরম হওয়া জলে স্নান করে হাতে-পায়ে-ঠোঁটে পমেট আর মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলীর লেবু গন্ধ মেখে। পুরো কার্তিক মাস জুড়ে নিরামিষ খেতেন আমার ঠাকুমা। সেই কালোজিরা আতপ চালের ভাতের সুঘ্রাণ আর নতুন উঠা শীতের সবজির নানা পদের সুগন্ধ এখনো নাকে এসে লাগে। 
দীদার সাথে ভাত খাবো বলে ঠাকুর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আর সূর্যের আলো আমার একটা তীর্যক ছায়া ফেলেছে উঠোনে। হেমন্তের এই দুপুর, ছোট্ট একটা বিকেল বারবার এই পুরোনো ছবিগুলোকে আমার সামনে নিয়ে আসে।
 কুয়াশার আবরণ আস্তে আস্তে যেনো বিকেলটাকে জাপ্টে ধরে, ঝুপ করে সন্ধ্যে হয়ে আসে চোখের সামনে। মাঝপথে খেলা থামিয়ে দুইপাশে ধানের ক্ষেতের মাঝ দিয়ে বাড়ি ফেরার কথা মনে পড়ে৷ যখন বাড়ি ফিরতে ফিরতে জুতাগুলো শিশিরে ভিজে উঠত আর মাটি-ঘাস লেগে যেতো।
 হেমন্তের পাকা ধানের গন্ধ, সেই ধানের ক্ষেতের উপর পড়া শিশিরে হাত ভিজিয়ে সন্ধ্যে হয়ে আসার আগে বাড়ি ফেরা, ধানের ক্ষেতে মাকড়সার জালে শিশির জমে থাকা, কারো কারো বাড়ির সদ্য পুষ্ট হয়ে উঠা লাউ ডগা, লাউয়ের সাদা ফুল, শিমের মাচায় বেগুনি রঙের শিম ফুল এর ধোঁয়াশে হয়ে অস্ত যাওয়া সূর্যের দিকে মাথা উঁচিয়ে থাকা দেখে দেখে বাড়ি ফেরা। 
কোথাও যেনো খড় পোড়ানোর গন্ধ পাওয়া যায়, একটু ধোঁয়া দেখা যায়। কারো বাড়িতে চলে সন্ধ্যে প্রদীপ দেয়ার আয়োজন। আরো আরো অনেক পুরোনো, অনেক পুরোনো ভাললাগা, গন্ধ, অনেক না থাকার মাঝে, অনেক না পাওয়ার মাঝে অনেক বেশি ভাললাগা, ভাল স্মৃতি পাওয়া। এভাবে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করে আবারো। 

লেখক সোমা দেব: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।