ঢাকা, মঙ্গলবার ০৭, মে ২০২৪ ১২:২২:৫৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বাউৎ উৎসব যেন মিলনমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:১৩ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২১ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

কুয়াশার কাছে না গেলে বিলের মধ্যে কী হচ্ছে সেটা বোঝা বড়ই দুরূহ ব্যাপার। হেমন্তের সকালে বিল অভিমুখে মানুষের ঢল নেমেছে। ভোরের আকাশে উঁকি দেয় সূর্য। ধীরে ধীরে পরিষ্কার আলোয় দেখা মেলে বাউৎ উৎসবে মানুষের ঢল। প্রতিবছরই এই সময়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুঁটে আসেন হাজারো মানুষ ঐতিহ্যবাহী এই বাউৎ উৎসবে যোগ দিতে। 

ভোরের আলোয় রুহুল বিলের কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। শিশু থেকে নানা বয়সী মানুষের বিচরণ। পলো, ধর্মজাল, চাকজাল, ঠেলাজালসহ নানা ধরনের মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে সবাই নেমে পড়েছে অর্ধপানিতে। মাছ ধরার এই উৎসব যেন একে অপরের মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে। কেউ ঠান্ডায় জুবুথুবু অবস্থা। আবার কেউ মাছ ধরতে পেরে আনন্দ উল্লাস করছেন। বাউৎ উৎসবের হাসি যেন সবার মুখেই বরণ করছেন।

টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর থেকে আব্দুল্লাহ  নামের এক ব্যক্তি পাবনার চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া সীমান্তবর্তী রুহুল বিলে এসেছেন শীতের রাতে মাছ ধরার নেশায়। এই বিলে বাউৎ উৎসব হয়। এটা দেশের অনেক এলাকার মানুষ জানেন। শখ করে বাউৎ উৎসবে যোগ দিয়ে মাছ শিকার করতে পেরে তিনি ভুলে গেছেন দূরের পথ থেকে শীতের রাতে এই বিলে আসার কথা।

চাটমোহরের বামনগ্রামের হাফিজুর রহমান। তিনি মাছ কপালে। ছোটবেলা থেকে এই বিলের বাউৎ উৎসব শুরু হলেই তিনি ছুঁটে আসতেন মাছ ধরতে। মাছ ধরতে এসে তিনি কখনো নিরাশ হননি। রুহুল বিলে নামলে তিনি মাছ না নিয়ে কখনো বাড়ি ফিরে যাননি। পলো দিয়ে তিনি ৬ কেজি গজার মাছ ধরেছেন। মাছ পেয়ে বড়ই খুশি মনে বারেবারে পলো চালিয়ে যাচ্ছেন।

সদরের দুবলিয়া থেকে আগত আফজাল হোসেন মিয়া বলেন, আমরা প্রায় ১৫ জন একটি করিমন গাড়ি নিয়ে ৫৫ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে মাছ শিকার করতে এসেছি। এক সপ্তাহ ধরে আমরা এখানে মাছ শিকার করব। রাত ৩টার দিকে রওয়ানা দিয়ে থাকি আমরা। মোটামুটি ২০/২৫ হাজার টাকা মাছ ধরতে পারব আমরা।

এবারে বাউৎ উৎসবে এসে রাগান্বিত কণ্ঠে বলছিলেন সদরের কামারডাঙ্গা গ্রামের মো. মাহফুজুর রহমান নামের মাঝ বয়সী ব্যক্তি। তার অভিযোগ এটা প্রতিবছর একটি আনন্দ উৎসবের ব্যাপার। অথচ কিছু মানুষ অতিলোভে এই আনন্দটাকে মাটি করে দিতে বাউৎ উৎসবের আগেই গ্যাস ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন উপায়ে মাছ শিকার করে নেয়। ফলে এখন আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। 
 
নাটোরের আমানুল্লাহ, সিরাজগঞ্জের মোমিন, পাবনার ইকরাম, সাইফুল ইসলাম, আকাশসহ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, ভালো মন নিয়েই এসেছিলাম। বরাবরের মতো এবারও কিছু মাছ নিয়ে যাবো। কিন্তু কপাল মন্দ। বেশ কয়েকঘণ্টা চেষ্টা করেও মাছের দেখা পাইনি।

আসলে মাছ না থাকলে মাছ পাবো কী করে এমন দাবি নিয়ে তারা বলেন, আগে ভাগেই মাছগুলো অসাধু মানুষ মেরে নেওয়ায় আজ আমাদের নিরাশ হতে হচ্ছে। 
চাটমোহরে ফৈলজানা ইউনিয়নের মৎসজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাউৎ উৎসব প্রতি বছর হয়ে থাকে যেটা আমাদের প্রাণের উৎসব।  এই সময় উৎসব দেখার জন্য জামাই মেয়ে নিয়ে আসা হয়। পারা মহল্লায় আনন্দ উৎসবে মনে হয় এটা ঈদ। সব শ্রেণিপেশার মানুষজন এখানে অংশ নিয়ে থাকেন। মৎস্য শিকারের চেয়ে সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ করা সবচেয়ে বড় ব্যাপার।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, দ্বৈত উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাই হলো রুহুল বিল। শুনেছি প্রতি বছরের এই সব সময়ে এই বিলে বাউৎ উৎসব হয়। হাজার হাজার মানুষ আসেন বাউৎ উৎসবে যোগ দিতে। এটি এ অঞ্চলের মানুষে অতীত ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে। 

তিনি বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় বর্তমান সরকার আন্তরিকতার সাথেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই অতীত ঐতিহ্য যেন নষ্ট না হয় সে বিষয়ে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। মাছের অভয়ারণ্য হিসাবে খ্যাত এই অঞ্চলের নির্ধারিত সীমারেখায় কোনো মানুষ অসাধু প্রক্রিয়ায় যাতে মাছ ধরতে না পারেন সে বিষয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরদারি রাখার তাগিদ দেন তিনি।