ঢাকা, রবিবার ০৭, ডিসেম্বর ২০২৫ ৫:২৬:৩২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

নারীর উন্নয়নে বিশ্বের অনন্য নারীরা

ফিচার ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৭:২০ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ১২:৩৬ এএম, ৮ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার

নারী অধিকার, নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নারীদের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন নারীরাই। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ম্যাডোনা থেকে শুরু করে পাকিস্তানের ছোট্ট কিশোরী মালালা ইউসুফজাই, নারী অধিকার রক্ষায় স্ব-স্ব অবস্থান থেকে তাদের ভূমিকা অনন্য। নিজস্ব ক্ষেত্রকে কাজে লাগিয়ে দরিদ্র ও নিপীড়িত নারীদের জন্য কাজ করা অন্যন্য নারীদের নিয়ে এই আয়োজন।

 

কিরণ বেদি : ভারতের প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তা কিরণ বেদি। ৬৫ বছর বয়সী এ নারী ১৯৭২ সালে ভারতীয় পুলিশে প্রথমবারের মতো নারী সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। তিনি সাবেক টেনিস খেলোয়াড়। সামাজকর্মী হিসেবে এক জ্বলজ্বলে নাম কিরণ বেদী। তিনি অমৃতশ্বর থেকে পশ্চিম দিল্লি পর্যন্ত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনিই প্রথম জাতিসংঘের বেসামরিক পুলিশের উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৫ সালে তিনি ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)তে যোগ দেন।

কিরণ বেদি ১৯৪৯ সালের ৯ জুন ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় পুলিশ অফিসার, সমাজকর্মী, সাবেক টেনিস খেলোয়াড় এবং রাজনীতিবিদ। ভারতীয় এ সমাজসেবী বর্তমানে পুদুচেরির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৭২ সালে ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস) যোগদান করা প্রথম নারী সদস্য। পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যুরোর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের আগে ৩৫ বছর ধরে সেবা করেন ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর হয়ে।

পশ্চিম দিল্লিতে তিনি নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ কমাতে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীকালে একটি ট্রাফিক পুলিশ অফিসার হিসেবে, তিনি দিল্লি মধ্যে ১৯৮২ এশিয়ান গেমস এবং গোয়া ১৯৮৩ সিএইচওজিএম দেখা জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা ওভার স উত্তর দিল্লি এর ডিসিপি হিসাবে, তিনি ওষুধের অপব্যবহার বিরুদ্ধ প্রচারণা, যা নবজ্যাতি দিল্লি পুলিশ ফাউন্ডেশন (২০০৭ সালে নবজ্যাতি ভারত ফাউন্ডেশন পরিবর্তন করা হয়।

পদুচেরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। স্বাধীনভাবে কাজ করার অনেক সুযোগ পান। ২০১৫ সালে তিনি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েছিলেন। কিরণ বেদি দেশের প্রথম মহিলা আইপিএস কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালে পুলিশে যোগ দিয়ে একটানা ৩৫ বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।


২০০৭ নবজ্যাতি দিল্লি পুলিশ ফাউন্ডেশন বেদি ও তার সহকর্মীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। আগে এর নাম ছিল নবজ্যাতি ভারত ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ফাউন্ডেশনটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের থেকে, বিভিন্ন ভারতীয় ও বিদেশি দাতব্য সংস্থা এবং সরকারের সহযোগিতা পায়। পরবর্তী ২৫ বছর ধরে এ কার্যক্রম চলতে থাকে। এটি এলকোহল আসক্তসহ প্রায় ২০ হাজার মাদকাসক্তকে আবাসিক চিকিৎসা প্রদান করে। ফাউন্ডেশনটি একদিকে পথ ও বস্তির শিশুদের শিক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কর্মসূচি চালু করেন। এটি সমাজের অসহায়দের শিক্ষা দিতে প্রায় ২০০ একক শিক্ষক স্কুল, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা ও পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করে।

২০১০ সালে এটি নবজ্যাতি কমিউনিটি কলেজে আইজিএনওইউ অধিভুক্ত হয়। কিরণ বেদি পুলিশ সংস্কার, কারাগার সংস্কার, নারীর ক্ষমতায়ন ও গ্রামীণ ও সামাজিক উন্নয়ন ক্ষেত্রে ১৯৯৪ আইভিএফ কাজ ভারত ভিশন ফাউন্ডেশন (আইভিএফ) প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া পুলিশ সংস্কার এলাকায়, বেদি উন্নততর প্রশিক্ষণের উপর জোর দেন। নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘন ঘন স্থানান্তর বিরোধিতা করেন। নারী অধিকার এলাকায়, সে ন্যায়সঙ্গত শিক্ষাগত সুযোগ এবং মহিলাদের জন্য সম্পত্তি মালিকানা (সহ-মালিকানা সহ) শিল্পমন্ত্রী হয়েছে. তিনি গ্রামীণ নারীদের দ্রুত ক্ষমতায়নের উপর জোর দেন। পারিবারিক সহিংসতা ও অন্যদের মত বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে কথা বলে যাচ্ছেন। ২০১০ সালে তিনি দ্য টিএডিতে ওয়াশিংটনে বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।


এলিস ওয়াকার : নিজেকে মানবতার প্রতি সমর্পিত করা এক নারী এলিস ওয়াকার। এলিস ১৯৪৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাবা-মায়ের আট সন্তানের কনিষ্ঠ। ছোটবেলায় এক ভাইয়ের অসতর্ক গুলি তার এক চোখ অন্ধ করে দেয়। ভাইকে শাস্তি থেকে বাঁচাতে বাবা-মাকে সে কথা বলেননি।

মার্কিন এ সমাজসেবী একই সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ লেখক ও নারীবাদী। তিনি ফেমিনিস্ট শব্দের বদলে উইম্যানিস্ট শব্দটি বেশি পছন্দ করেন। প্রতিবাদী একজন মানুষ, বজ্র্রকন্ঠ একটিভিস্ট, প্রতিবাদী কবি, সাহিত্যিক, গল্পলেখক এবং নিজের বিশ্বাসের প্রতি নিবেদিত মানুষ।

১৯৬০ সালে মার্টিন লুথার কিং এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার। আটলান্টার লরেল কলেজ বৃত্তি পেয়ে পড়াশুনা করেন। কলেজের অধ্যাপক হাওয়ার্ড জিনের প্রভাবে সিভিল রাইট মুভমেন্টে যোগদান করেন। ১৯৮২ তে বর্ণবিদ্বেষী শেতাঙ্গ সভ্যতা আর পুরুষতান্ত্রিক কৃষ্ণাঙ্গ মানসিকতা নিয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস ” দ্য কালার পার্পল” লেখেন। ‘দ্য কালার পার্পল উপন্যাস রচনার জন্য প্রশংসিত হন বেশ। ১৯৮৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পান এ উপন্যাসের জন্য। এই উপন্যাস থেকে পরবর্তীকালে স্টিভেন স্পিলবার্গ সিনেমা বানান। আর প্রতিভা পারমার এলিস ওয়াকারকে নিয়ে বানান বিউটি ইন ট্রুথ নামে একটি সিনেমা। প্রতিভা পারমারের সিনেমো ‘বিউটি ইন ট্রুথ,’ এলিসের জীবন ও কর্ম নিয়ে তৈরি, তা একটা মনোমুগ্ধর দৃশ্যকল্প তৈরি করেছে। অনেক কিছু অনেক স্থানে অনেক মানুষের সঙ্গে কাজ করার অনুভূতি নিয়ে করা।

২০০৩ তিনি হোয়াইট হাউসের সামনে ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন ও গ্রেপ্তার হন। তিনি বলেন – এখানে আমরা প্রতিবাদীরা বিশ্বাস করি ইরাকের নারী ও শিশুরা আমাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের মতোই মূল্যবান। ২০০৮ সালে বারাক ওবামাকে ভাই ওবামা সম্বোধন করে অভিনন্দনপত্র পাঠান-তুমি তোমার নিজস্ব স্থানে পৌঁছতে পেরেছ।

২০০৯ সালে টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে ইসরায়েল ফিল্ম “সিটি টু সিটি” এর বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদপত্র পাঠান–ইসরায়েল, তোমরা একটি এপারঠাইড দেশ। ২০০৯ সালে কোড পিঙ্কের সঙ্গে গাজা অভিযান করেনর ফিলিস্তিনের সমর্থনে। অথচ তাঁর স্বামী ছিলেন ইহুদি। অবশ্য ১৯৭০ তেই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। এরা ছিলেন প্রথম আইনত বিবাহিত মিশ্রবর্ণের দম্পতি। এজন্য তাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল সবচেয়ে বড় টেররিস্ট। আমেরিকা আর ইসরায়েল হলো সংঘবদ্ধ লিগ্যাল টেররিস্ট অর্গনাইজেশন বলতেন তিনি। পুলিৎজার ছাড়াও পেয়েছেন লেনন–ওনো শান্তি পুরস্কার, ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড এবং আরও অনেক পুরষ্কার।

এলিস সমাজ সেবায় কখনো মেক্সিকো, কখনো হাওয়াই আর কখনো উত্তর ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকেন। পুরো জীবনটাই এমনই তার সপে দিয়েছেন সমাজ সেবায়। পূর্বপুরুষদের থেকে সকল উদ্যম পেয়েছেন এলিস ৪০০ বছর এই উপনিবেশ ত্যাগ করার অনুমতি ছিল না আর এলিস তাদের সকল ইচ্ছাগুলো পেয়েছের এই পৃথিবীর অংশ হতে।

জর্জিয়ার কৃষ্ণাঙ্গবিদ্বেষী শাসনব্যবস্থায় এলিসের বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে। এলিসের পরিবারের আর্থিক অবস্থা বেশি ভালো ছিল না কিন্তু তার মা প্রচন্ড দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষ ছিলেন। সমাজে বিভিন্ন ধরনের মা ছিলেন, যারা পুরুষ এবং শ্বেতাঙ্গপ্রধান কর্তৃত্ব নীরবে মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু এলিসের মা কোনো দিন মেনে নেননি, তিনি তা করতে পারেননি। এই ব্যপারটা তার মধ্যে ছিলই না।

এলিস লেখালেখি শুরু করেছিলেন শৈশবে। মা-বাবার চেষ্টায় স্কুলে পড়তেন এবং একটা বৃত্তি নিয়ে কলেজেও গেলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার ফিরে আসেন। প্যারিসে গিয়ে পড়াশোনা করার জন্য বৃত্তির প্রস্তাব পেয়েছিলেন তবে এটা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কারণ এলিস অনূভব করেছিলেন সত্যিকারের দায়িত্ব হলো ফিরে গিয়ে সেই মানুষদের সাহায্য করা যারা সত্যি তার পরিবারের মতো। কাজেই তিনি তার ভেতরকার কথা শুনলেন। আর মিসিসিপি ফিরে গেলেন।

সমাজসেবী, শিক্ষক, সাহিত্যিক ও বক্তা এলিস ওয়াকার সাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়ে সকলের নজরে আসেন এলিস ওয়াকার। পুরষ্কার পাওয়ার পর তিনি নারী অধিকারকর্মী হিসেবে সক্রিয় হয়ে উঠেন। এলিস যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রো-আমেরিকানদের সমধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছেন। এলিসের জনপ্রিয় বই ‘দ্য কালার পার্পল’ নিয়ে বিখ্যাত মার্কিন পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ছবিটি এলিভেন একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও ২০০৫ সালে ব্রডওয়ে মিউজিক্যাল মুভিসহ বেশ কয়েকটি পুরষ্কার অর্জন করে।

 

মালালা ইউসুফজাই : মালালা ইউসুফজাই ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। একজন পাকিস্তানি শিক্ষা আন্দোলনকর্মী, যিনি সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াত উপত্যকা অঞ্চলে শিক্ষা এবং নারী অধিকারের ওপর আন্দোলনের জন্য বেশ পরিচিত। স্থানীয় মেয়েদের বিদ্যালয় শিক্ষালাভের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তালেবান জঙ্গিরা। তাঁর পরিবার সেই স্থানে অনেকগুলো বিদ্যালয় পরিচালনা করে থাকেন।

২০০৯ সালে মালালা বিবিসির জন্য ছদ্মনামে একটি ব্লগ লেখেন, যেখানে তিনি তালেবান শাসনের অধীনে তার জীবন ও সোয়াত উপত্যকায় মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন। পরের বছর গ্রীষ্মকালে সাংবাদিক অ্যাডান এলিক তাঁর জীবন নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের জন্য একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এরপর মালালা সংবাদমাধ্যম ও টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিতে থাকেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলনকর্মী ডেসমন্ড টুটু দ্বাএয়া আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।

২০১২ সালের ৯ অক্টোবর, স্কুলের বাসে একজন বন্দুকধারী তাকে চিহ্নিত করে তিনটি গুলি করে, যার মধ্যে একটি তাঁর কপালের বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে চামড়ার তলা দিয়ে তাঁর মুখমন্ডলের মধ্যে দিয়ে কাঁধে প্রবেশ করে। পরবর্তী বেশ কয়েকদিন তিনি অচৈতন্য ছিলেন ও তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর অবস্থার উন্নতি হলে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য বার্মিংহ্যাম শহরের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। ডয়েশ ওয়েল ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত কিশোরী বলে মনে করে। জাতিসংঘের বৈশ্বিক শিক্ষা কার্যক্রমের বিশেষ দূত গর্ডন ব্রাউন ইউসুফজাইয়ের নামে জাতিসংঘের একটি আবেদনে ২০১৫ সালের শেষে বিশ্বের সকল শিশুকে বিদ্যালয়মুখী করার দাবী করেন; যা পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষার অধিকার বিলের আনুষ্ঠানিক সমর্থনের পক্ষে সহায়ক হয়।

২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে টাইম পত্রিকা ইউসুফজাইকে বিশ্বের ১০০জন সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের একজন বলে গণ্য করেন। তিনি ২০১১ সালে পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় যুব শান্তি পুরস্কার এবং ২০১৩ সালে শাখারভ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার পক্ষে সওয়াল করেন ও অক্টোবর মাসে কানাডা সরকার তাকে সাম্মানিত কানাডীয় নাগরিকত্ব প্রদান করার কথা ঘোষণা করে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে সুইডেনের বিশ্ব শিশু পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়।

২০১৪ সালের মে মাসে হ্যালিফ্যাক্সে ইউনিভার্সিটি অব কিংস কলেজ তাকে সাম্মানিক ডক্টরেট প্রদান করে। ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর, শিশুদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে ও শিক্ষার অধিকারের লড়াইয়ের জন্য মালালা ও ভারতীয় সমাজকর্মী কৈলাশ সত্যার্থীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। মাত্র ১৭ বছরে মালালা এই পুরস্কার লাভের সময় বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ীর সম্মান লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানী আব্দুস সালামের পর তিনি দ্বিতীয় পাকিস্তানি নাগরিক যিনি এই পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর নোবেল জয় সম্বন্ধে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

২০১৪ ইগুয়ালা গণ অপহরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মেক্সিকোর একজন নাগরিক এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বাধা দিলেও নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যান। মালালা পরে এই ব্যক্তির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। ২০১৫ সালের একাডেমি পুরস্কারের জন্য বাছাইকৃত তথ্যচিত্র হি নেমড মি মালালা তার জীবন নিয়ে তৈরি হয়।

বর্তমানে নারী শিক্ষার প্রসারে বিশ্বব্যাপী কাজ করছেন মালালা। তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বব্যাপী নারী শিক্ষায় সহায়তার জন্য তিনি ‘মালালা ফান্ড’ নামে একটি তহবিল পরিচালনা করেন। এই সংস্থার কাজ বিভিন্ন দেশের সুবিধা বঞ্চিত নারীদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া।

 

তিজিয়ানা সি ডিয়ারিং : বোস্টন গ্রেজুয়েট কলেজের এ্যাসোসিয়েটস প্রফেসর ও সমাজ কর্মী তিজিয়ানা সি ডিয়ারিং। মার্কিন ওয়েব পোর্টাল হাফিংটন পোস্টের নিয়মিত কনট্রিবিউটর তিজিয়ানা। হাভার্ড ইউনিভার্সিটির হাউসার সেন্টারের নির্বাহী পরিচালকও তিনি। এছাড়া তিনি বোস্টনের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন। সমাজে সচেতনতা তৈরি, সরকারি নীতিতে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন তিজিয়ানা। নগরায়ণের পাশাপাশি সমাজে দারিদ্র্যদূরীকরণ ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এ নারী সমাজসেবী। সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা রোধে সমহায়তার জন্য ২০১২ সালে তিজিয়ানা কমনওয়েলথ ম্যাসাচুয়েটসের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান।

তিজিয়ানা সি ডিয়ারিং অলাভজনক, শিক্ষা ও ব্যবসার প্রসারে একজন মার্জিত সমাজসেবী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিচি পেয়েছেন। দারিদ্র্যতাদূরীকরণ, বিশ্বপ্রেম এবং অলাভজনক নেতৃত্বে জন্য তার কর্মজীবন নিবেদন করছেন। তিজিয়ানা বোস্টন কলেজ স্কুলে অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের পূর্বে একটি দারিদ্র বিমোচন তহবিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বোস্টনের আর্কডিওসেস (যেখানে বিশপের দায়িত্ব দেওয়া হয়) ক্যাথলিক দাতব্য সংস্থায় প্রথম নারী সভাপতি ছিলেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হাউসির সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তিনি ফরচুন ৫০০ কোম্পানি নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে এক দশকের বেশি সময় ধরে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন।

তিজিয়ানা সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন কমিউনিটির পরিচালন পর্ষদে কাজ করছেন। এছাড়া তিনি বোস্টনের ভজনা, ৯০.০ ডব্লিউবিইউআর, আইন ও পাবলিক পলিসি, ইউটিইসি রাপাপোর্ট কেন্দ্র, ইন্টারসিটি ওয়েটলিফিং ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য। যে কোনো সামজিক সংকট মোকাবেলায় সক্রিয় থাকেন। তিজিয়ানা হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল থেকে পাবলিক পলিসি এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্টসে ব্যাচেলর ও মাস্টর্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এমএসএনবিসি ও সিএনএনসহ জাতীয় ও স্থানীয় খবর সংবাদমাধ্যমে তার একাধিক জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে।

 

 

রুশনাহ জাফর : রুশনাহ জাফর নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কাজ, পাকিস্তানে একজন উন্নয়ন কর্মী। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। কাশফ ফাউন্ডেশন নামে প্রথম বিশেষ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। রুশনাহ জাফর ১৯৯৬ সালে এ ফাউন্ডেশনটির প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।

এই ফাউন্ডেশন স্থাপনের আগে, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে ইসলামাবাদে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কাজ করেন। রুশনাহ জাফর পাকিস্তানের প্রথম অশোক ফেলোর মধ্যে একজন। সামাজিক প্রতিষ্ঠান শোয়াব ফাউন্ডেশনের একজন উদ্যোক্তা। রুশনাহ জাফর ২০০৪ সালে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার তামগা-ই-ইমতিয়াজ ভূষিত করা হয়। সামাজিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এ পুরষ্কার প্রদান করেন। ২০০৭ সালে সামাজিক বাণিজ্যিকে অবদানের জন্য তাকে স্কুল পুরস্কার প্রদান করা হয়। রুশনাহ জাফর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়র হোয়ারটন বিজনেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

সক্রিয় সমাজ উদ্যোক্তা রুশনাহ জাফর। তিনি বিশ্বব্যাংকের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার ওপর কাজ করছেন। এছাড়া সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে তিনি অবদান রেখে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এক অভিনব উদ্যোগ নেন। ১৯৯৬ সালে তিনি পাকিস্তানে কাশফ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন।

তিনি বর্তমানে এই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়া পাকিস্তানের এই সমাজসেবী নারীদের উন্নয়নে কাশফ মাইক্রোফিনান্স ব্যাংক লিমিটেড চালু করেছেন। নতুন ব্যবসা চালু করতে এই ব্যাংক সমাজে সহায়তা করছে। এ সংস্থায় নারীরা বেশিরভাগ কাজ পরিচালনা করে। গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে করা পাকিস্তানের এই ফাউন্ডেশনটি এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ নারী ও তাদের পরিবারকে সহায়তা করেছে। নারীদের কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে অবদান রাখছে। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে সহায়তা করে যাচ্ছে।

  

মারসিও পিট ক্যাটসোপিস : সমাজ থেকে ঘৃণা দূর করতে কাজ করছেন মারসিও পিট ক্যাটসোপিস একজন সমাজকর্মী। তিনি একাধারে প্রফেসর, পরিচালক, নেত্রী, তদন্তকর্মী ও চিকিৎসক। তিনি মাঠ পর্যায়ের সমাজসেবায় নিজেকে সমর্পন করেছেন। মিডলসেক্স ইউনির্ভাটি অব লন্ডনেও কাজ করছেন মারসিও।

প্রাথমিকভাবে মারসিও সামাজিক ন্যায় বিচার নিয়ে কাজ করেন। কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অবদানের জন্য ২০১০ সালে তাকে হোয়াইট হাউজে ডাকা হয় এবং কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য তাকে উৎসাহিতও করা হয়। এছাড়া স্বাচ্ছন্দ্যভাবে সমাজ সেবায় তাকে হোয়াইট হাউজ সহায়তা করার ঘোষণা দেয়।