ঢাকা, সোমবার ০৬, মে ২০২৪ ৭:৫৩:৪৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

দিনাজপুরের সুগন্ধি কাটারিভোগ চালের ইতিবৃত্ত

ফিচার ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:৫২ এএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

আনুমানিক, একশ বছর আগে থেকে দিনাজপুর জেলায় সুগন্ধি কাটারিভোগের চাষাবাদ হচ্ছে। খেতে সুস্বাদু এই কাটারিভোগ চাল মাথার দিকে ছুরির মতো একটুখানি চোখা ও বাঁকা। 

সাধারণত চিড়ার রং ফ্যাকাশে ধূসর হলেও এ ধানের চিড়া হালকা সাদা রঙের হয়। চাল তো বটেই, কাটারিভোগের চিড়ায়ও মিষ্টি সুগন্ধ থাকে। কাটারিভোগ চাল দিয়ে পোলাও ছাড়া মজাদার বিরিয়ানি, জর্দা, পায়েশ ও ফিরনি রান্না করা হয়।

মজার ব্যাপার হলো, এই কাটারিভোগ চাল পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ তো দূরে থাক, বাংলাদেশেরই অন্য কোনো জেলায় রোপণ করলে ঘ্রাণ ও স্বাদ বদলে যায়। এমনকি দিনাজপুরের সব এলাকাতেও কাটারিভোগ ধান চাষাবাদ হয় না।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ফাশিলাহাট, ছোট বাউল, বড় বাউল, করিমুল্যাপুর, খানপুর, চিরিরবন্দর উপজেলায় কাউগাঁ, বিষ্টপুর, তালপুকুর মুকুন্দপুর, দুর্গাডাঙ্গা, ভিয়াইল, পশ্চিম বাউল ও কাহারোল উপজেলার দু-একটি উঁচু জায়গায় এ বিশেষ জাতের ধান চাষ হয়। উঁচু বেলে-দোআঁশ মাটি কাটারিভোগ চাষের উপযোগী। তাই এটি একশ বছর ধরে শুধু এই জেলায় ঐতিহ্যবাহী পণ্য হিসেবে পরিচিত।

তাই তো জিআই পণ্য হিসেবে বাংলাদেশের কাটারিভোগ চাল নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় এগিয়ে রয়েছে। G I এর পূর্ণরূপ হলো Global Identity বা ভৌগোলিক নির্দেশক। বাংলাদেশ সরকার দেশের ঐতিহ্যবাহী আরও ২৩ পণ্যের জন্য জিআই নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছেন।

কাটারিভোগ চাল নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁর দরবারে দিনাজপুরের রাজা প্রাণনাথকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। রাজার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ ছিল। স্বাভাবিকভাবেই একজন সম্রাটের সঙ্গে দেখা করার সময় যে কেউই কিছু উপঢৌকন নিয়ে যায়। রাজাও সম্রাটকে খুশি করার জন্য হীরা, পান্না, স্বর্ণমুদ্রার সাথে কাটারিভোগ চাল নিয়ে যান। সম্রাট আওরঙ্গজেব উপঢৌকন পেয়ে যতটা না খুশি হয়েছিলেন, তার থেকে বেশি খুশি হয়েছিলেন কাটারিভোগ চাল পেয়ে। ফলে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতা বিচার করার বদলে সম্রাট প্রাণনাথকে ‘মহারাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

আবহাওয়াগত পরিবর্তন, কৃষকের ন্যায্য দাম না পাওয়া ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাটারিভোগ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। তবে বর্তমানে কাটারিভোগ ধান ফিরিয়ে আনতে উচ্চ ফলনশীল সুগন্ধি ব্রি ধান-৭০ চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এতে আশাতীত ফলন পাওয়া গেছে। ফলন দেখে কৃষকেরা এ ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

আমাদের দেশের নিজস্ব অনেক ধরনের সুগন্ধি চাল আছে। সুগন্ধি চালগুলো হচ্ছে- কাটারিভোগ, কালিজিরা, টিপিএল-৬২, চিনিগুঁড়া, চিনিআতপ, চিনিকানাই, বাদশাভোগ, মদনভোগ, রাঁধুনিপাগল, বাঁশফুল, জটাবাঁশফুল, বিন্নাফুল, তুলসীমালা, তুলসীআতপ, তুলসীমণি, মধুমালা, খোরমা, সাককুর খোরমা, নুনিয়া, পশুশাইল, বিআর-৫ (দুলাভোগ), ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৩৭, ব্রি ধান-৩৮ ও ব্রি ধান-৫০।