ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১৬:১৯:০৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মৃধা আলাউদ্দিনের একগুচ্ছ কবিতা

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৪০ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২২ শুক্রবার

মৃধা আলাউদ্দিন

মৃধা আলাউদ্দিন

কষ্টের হাঁসগুলো
এখন হাঁসদের প্রচ- ইচ্ছে হচ্ছে তারা ভাজা ডিম পাড়বে। অথচ পৃথিবীর ভয়ে তারা পারছে না ভাজা ডিম পাড়তে।
কেননা, মানুষরা হয়তো তাদের এ ভাজা ডিমকে গ্রাহ্যই করবে না। 
বলবে, এ হাঁসদের আরেক ভূমি। জাতে ওঠার পাঁয়তারা। যেমনটি কিছুকাল আগে করেছিল গাছদের মধ্যে কেউ কেউ- সরে গিয়েছিল কোনো কোনো গাছ- আপেল আমরুজ হিজল তমাল পাইন আর মেপল পাতাও গিয়েছিল সরে। 
অথচ, মানুষরা কেবলই চুষে খায় গীবৎ
প্রতারক ও ধান দূর্বা
জাকাত, জাকাতের অর্থ
জহুরি জাঁদলের জোছনা। নষ্ট হয় নারী নদী- 

হিরোসিমা থেকে নাগাসাকির বদলে যায় ভূমি। স্বাধীনতার সবুজ ভূমি- ইরান ইরাক কসোভো- মিয়ানমারের মুসলমান মানেই অজস্র ছিন্নভিন্ন পাপড়ির লাশ। 

সবুজ পাখিরাও পারছে না সুখ ও কল্যাণ বয়ে আনতে।
 
এখন সভ্যতা মানেই গোলাপের বাগানে একটা পাগলা হাতি। 
এখন সভ্যতা মানেই রাস্তায় একটা ধর্ষিতা মেয়ে।
এখন সভ্যতা মানেই মানুষরা চুষে খার নারীর হাড় মাংস অস্থি-মজ্জা...

আর এতে কিছুই হয় না পৃথিবীর। শুধু হাঁসেরাই পাড়ছে না ভাজা ডিম পাড়তে 
এবঙ একদিন হাঁগুলো কষ্টের ভাজা ডিম পাড়তে পাড়তে উৎসবমুখর মুরগি হয়ে যাবে। 
উজানে বয়ে যাওয়া নদী হয়ে যাবে।


আমার যতো ভুল
আমি কিছুটা অনৈতিক উদ্বেল জলের দিকে যাচ্ছিলামÑ 
থইথই, সঘন-সুন্দর রৌদ্রের জল...
কেয়াফুল, পাহাড়ি মেঘ আমাকে আনন্দে উদ্বেলিত করছিল।

নগরের বিতর্কিত যুবতীরা আমার পিছু নিলো
তুচ্ছতাচ্ছিল্য, রঙছিটে- উসকোখুসকো আর ধূলিময় উদ্ভট যুবতীরা...

আমি কিছুটা অনৈতিক উদ্বেল জলের দিকে যাচ্ছিলাম- 
থইথই, সঘন-সুন্দর রৌদ্রের জল...
 

প্রহরের প্রথম রৌদ্র 
হে প্রহরের প্রথম রৌদ্র!
আমি তোমার জন্য গড়েছি একটি বড় বাড়ি বারান্দা
যেখানে খাল আছে- রাত্রিরে ডেকে যায় ডাহুক।

তুমি প্রাণ-প্রকৃতিরে ভালোবেসেছিলে
এখানে হাঁসেরা সোনার ডিম পাড়ে।

তুমি প্রেমের কথা বলেছিলে
আমি বাতাস কেটে কেটে বাহারি বসন্তে তৈরি করেছি রাস্তাÑ 

তুমি সাগর-সমুদ্র চেয়েছিলে 
এখানে ছলছল করে রাত্রিরে ধবল জোছনায় পাহাড়ি ঝরনা। 

হে রৌদ্র! এখন বলো তুমি কার? পৃথিবী না আমার...

যদিও আমি অল্পই করেছি তোমার জন্য
আমি অল্পই করেছি আমার জন্য।

স্বাধীনতার মূলমন্ত্র পাঠ হবে ফের
আমরা আবারও সাবয়া মুয়াল্লাকা, বৈষ্ণব কবিতা অথবা সাগরের জলরাশির সরল সৌন্দর্যে অবগাহন করতে চাই- যেনো পৃথিবী সুদ্ধ হয় একটা শৈবতান্ত্রিক কাপালিক, কালচিটে- কৃষ্ণকালো নগ্ন নারীর দৈহিক আনন্দ থেকে...
একদিন আমরা সামেরি, আজর অথবা আর্যদের আমন্ত্রণও প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আমরা প্রত্যাখ্যান করেছিলাম বর্বর-বেহায়া, ষাড়যন্ত্রিক শাদা চামড়া, পর্তুগিজ জলদস্যুদেরও- কেননা, বহুদূর পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে আমরা আর পালদের মতো সংকুচিত হতে চাইনি; কিন্তু ওদের একটা ধারণা আমরা বুঝি ঈগলের মতো উড়ে উড়ে ক্লান্ত হয়ে ঝরে যাবো বৈশাখী ঝড়ের মতো- যেমন ঝরে যায় আমের ডালপালা- সঘন রৌদ্দুরে অনেক মুকুল।
আমরা বর্তমান এই বাংলাদেশের একটা স্থিতিশীলতা চাই, ডুবে যেতে চাই ষড়ৈশ্বর্য ভক্তিধারার কবিপুরুষ- সুফি অথবা প্রেম-তত্ত্বের দারুণ দিগন্তে। রৌদ্দুরে- আয়নায়...
আমরা নবী-রাসুলদের মতো পৃথিবীর যেখানে যতো সত্য আছে তা খুঁজে পেতে চাই যেনো বখতিয়ার খিলজির অশ্বা রোহীর মতো প্রচন্ড প্রতাবে জয় করতে পারি এই পীর-মুর্শিদ- বারো আউলিয়ার বাংলাদেশ এবঙ আমরা আবারও একটা স্বাধীনতার মূলমন্ত্র পাঠ করতে চাই- স্বাধীনতার মূলমন্ত্র...  

প্রেমের শুভ্রতা 
আমি তাকে ছুঁয়ে দেখেনি
ধরে দেখিনি তার নীল চোখ-
বুকের সুডৌল মাংস
উরুদেশ বা নরম নিন্মনাভিমূল...
বসবাস করিনি এক ছাদের নিচে।

অথচ আমাদের যৌবন ফুরিয়ে গেল 
যৌবনের অজানা আয়না ও আদ্রতায়...

অবশেষে বুঝলাম- 
পৃথিবীতে প্রেমের শুভ্রতা 
মৌ মৌ ঘ্রাণ ছাড়া আর কিছুই সত্য নয়...

কিন্তু আমি দক্ষিণে যাই না
যেখানে শোনা যায় কৃষ্ণের বাঁশির সুর...

দ্রাবিত রক্ত
আমি অহরাত্রি নদীর ধারে বসে থাকি
দেখতে থাকি রাত রৌদ্র ও তারাদের যাওয়া আসা-
ভৎর্সনা করি, জল-ঝড় ও কালো মেঘের তা-ব দেখলে।

কিন্তু দেখি না, নিজের দেহÑ দ্রাবিত আর ঘণীভূত রক্ত...


চলো আমরা ঘরে ফিরে যাই 
হে নদী
হে রৌদ্র! 
হে জল-
জোছনার জলেভেজা মার্বেল পাথর আমার... 
চলো আমরা ঘরে ফিরে যাই।

ঘর মানুষকে নির্মল ঝরনাধারা, রৌদ্দুরে প্লাবিত করে।

ধুুয়ে নাও নিজেকে
রৌদ্রে স্নান করাও নিজেকে
অন্দরের গলি-ঘুচি
বড় বাড়ি, বারান্দা ও বন্দিসে-
দূরের আকাশ, বৃষ্টি ভেজা মাটি, মেঠোপথ ও প্রান্তর।

যদিঅ পৃথিবীতে বৃষ্টিভেজা মাটি ও প্রান্তরের কদর
অনেকেই বোঝে না। 

মানুষ খুব অল্পই বোঝে। নির্বোধ মানুষ।

 

গভীর রাতে 
একদিন গভীর রাতে, তারাভরা জোছনায় 
আমি একটি কালো গোলাপের ঘ্রাণে মত্ত হলাম।
বর্ণনা করতে লাগলাম গোলাপের গুণ-কীর্তন-
গুনতে ও দেখতে থাকলাম পাপড়ি ও কাঁটা
নারীর নরম মাংসের মতো সব সুললিত পেলবতা-
চিত্র-বিচিত্র
বিমূর্ত সুবাসের সারোৎরার।

আর তখনই আমার মনে হলো
কান্না ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই, কিছু নেই।

 

দূরত্ব
আমি একটা নিঃসঙ্গতার ডুব দিয়ে দেখলাম- এ নদী শ্যামল-শুভ্র নয়
এবঙ ধূলি আর মরু বালুকণায় ডুবে আছে সমস্ত রৌদ্দুর...
প্রেমের পালক
কৈতর- 
পানকৌড়ির রক্তে লেপ্টে আছে আমার এই দেহ।

তবে আর কেনো মিছে মায়া বাড়াবো- লাভ কি?
সমুদ্র আমাকে কেবল দূরত্বই দেখায়
দূরত্ব...

 

পেলব মাংস 
সমুদ্রের ধারে নিয়ে গেলাম বেদনায় ব্যাপৃত হওয়া আমার এই প্রেমময় দেহ।
ব্যথার পিরামিড
তাজমহল- 
কাটা কৈতর...

নগ্ন হয়ে ডুব দিলাম সমুদ্রের গহিনে কয়েকবার।
আবারও
আবারও
আমি আবারও আপাদমস্তক ডুব দিলাম সমুদ্রেÑ
স্বর্ণ হয়ে ভেসে গেল আমার সুডৌল সুন্দর 
সঘন সুন্দর বস্ত্রহীন- নিরাভরণ দেহ
নিন্মনাভির নিন্মাঙ্গ, উরুদেশ- পায়রা হয়ে উড়ে গেল
বেদনায় ব্যাপৃত হওয়া আমার এই প্রেমময় দেহ
দেহের আধেক
সরু গলি- 
লবণসমেত পেলব সমস্ত মাংস...


নায়েগ্রার জলপ্রপাত 
কেউ আসেও না আমার কাছে
আমিও যাই না কোথাও-

সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছি 
নীল আকাশ
সমুদ্র
নায়েগ্রার জলপ্রপাত-

বেদনার ভারাক্রান্ত নীল আকাশে দেখি 
সাইমুম ঝড়- জল-জলোচ্ছ্বাস...

 

ছিলাম আমি 
আমি তখনকার কথা বলছি
যখন না ছিল শেষ, না ছিল শুরু-
দিন ও রাত্রি।

ছিল শুধু ডিম্বাণু, শুক্র- চারিদিকে অথৈই সমুদ্র
আয়না ও আলোর কু-লী...

কিন্তু তখনো রৌদ্দুরে ভাসছিল সঘন 
জোয়ার জোছনা- আমার পৌরুষের
শাদা-শুভ্র আলোভেজা রঙ...

 

অন্ধ প্রেমিক 
আমি তার সাথে প্রেম অথবা কামকলা কিছুই করতে পারছি না।
কেননা, তার ছায়া, মায়াÑ সুডৌল দেহ
উরু বা তলদেশ
যোনি- কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না আমি।

আমি এক অন্ধ প্রেমিক। 

হে নদী- সাগর-সমুদ্র আমাকে সাহায্য করো।