ঢাকা, শনিবার ০৪, মে ২০২৪ ১:২৮:৪৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সেই দূরে দেখা হাটের পিছনের ইতিকথা: তপতী বসু

তপতী বসু

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৩৬ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২২ বুধবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

‌'দূরে দূরে গ্রাম দশ বারোখানি, মাঝে একখানি হাট
সন্ধ্যায় সেথা জ্বলে না প্রদীপ, প্রভাতে পড়ে না ঝাঁট।
বেচা-কেনা সেরে বিকালবেলায়
যে যাহার সবে ঘরে ফিরে যায়;
বকের পাখায় আলোক লুকায় ছাড়িয়া পুবের মাঠ;
দূরে দূরে গ্রামে জ্বলে ওঠে দীপ---আঁধারেতে থাকে হাট'

হাট বসে৷ প্রতি গুরুবারে৷ দিল্লি এইমসের সামনে এই হাটের বয়স শত বছর, বা তারও অধিক৷ আঠারো নাম্বার হোস্টেলের মূল গেটের বাইরে এই হাট ডান দিকে গৌতম নগরের প্রান্ত ছোঁয়৷ 'নেকী কি দিওয়ার'-সামনে দাঁড়ালে  ডানদিকে বড় রাস্তা৷ চলতে চলতে পুরানো এক মসজিদ৷ শুনেছি আকবরের আমলের৷ মসজিদ ডান দিকে আর বাঁয়ে আছে সাঁই বাবার মন্দির৷ এগোতে লাগলেই বৃহষ্পতিবারের বিকেলের এই হাট৷ স্থানীয় ভাষায় 'ভিড় বাজার'৷

আমি এক বিকেলে বরিশাল পিরোজপুরের 'চলশে'র হাটের ভিতর দিয়ে এসেছিলাম৷ হাটের পাশে নদী৷ সেখানে পরিপাটি সংসারের মতন সার বাঁধা নৌকা৷ সেখান থেকে নামছে আট-দশ হাত দীর্ঘ আখ৷বাতাবী,যা ওখানকার ভাষায় সোলোম৷ মাটির হাঁড়ি-কুড়ি৷তরি-তরকারি...৷ রিকশায় ছিলাম৷ চালকের ঘন্টি বাজিয়ে হাটুরে সরিয়ে পথ করে চলার ফাঁকে যৎসামান্যই দেখা৷ সে অবশ্য রূপকথার গল্পের মতন অনেক দিন আগের কথা৷তারপর দিল্লির এই পুরানো হাটের আমি একজন ক্রেতা-সেই হিসেবে হাটুরেও বটে!

এখানে বিক্রেতা হাটুরেরা আসেন দিল্লি সীমান্তের উত্তর প্রদেশ,রাজস্থান,  বল্লভগড় হরিয়াণা, পাঞ্জাব, ফরিদাবাদের গ্রাম থেকে৷ ভাষা হিন্দি হলেও মিশে থাকে নিজ এলাকার উপকথনের ছোঁয়া৷ এরা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় ডাক দেয়-ইয়ে অমরলাল, ইয়ে আমিন....আমাদের পরিচিত এবং পাঠ্য' একটি গ্রাম্য হাট'-এর সাথে এখানে অনেক পার্থক্য৷

আজ গিয়েছিলাম হাটে৷ গত সপ্তাহে কেনা ১২০ টাকা কিলো 'রসভেরি' আজ ২০০ টাকায় বিকোচ্ছে৷ মাত্র একজনই নিয়ে বসেছে৷ অন্য সব পণ্যের দাম একই৷ আলু আড়াই কিলো ৫০ টমেটোর ৪০, কাঁচা মির্চ ৮০.....৷ চারখানা সজনে ডাঁটা ৩০ টাকা, যা প্রায় দেখাই যায় না৷ 

জাপানি এক তরুণ বাংলাদেশের একটি পত্রিকায় জানিয়েছেন, কিনতে গেলে সবাই ঠকায়। তাই তিনি বাংলাটাই শিখে নিয়েছেন৷ আমার অবশ্য সেই সমস্যা নেই৷ আমি কয়েকজনের কাছে দাম জেনে দেখেছি, প্রত্যেকে একই দাম রাখেন৷ আমার সন্ধানী চোখ এখনও খোঁজ পায়নি চালতা, বাতাবী, তেঁতুল, ডুমুর, আমড়ার৷ যেমন পাইনি পরিচিত কোনো মানুষের দেখা৷ হয়ত এদের প্রতি টানেই আমি একদিন ফিরে যাবো পুরানো জায়গায়৷

আমার হাটের সওদা সন্ধ্যার আগেই শেষ হয়ে যায়৷ দু'মিনিট দূরের হাটের কোলাহল হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে আসে৷ রাত গড়ায় আর গৃহ প্রত্যাশী বিক্রেতা ম্যাটাডোরে ফিরে চলে৷ এই রাতে আমার ভাবতে ভালো লাগে ফরিদাবাদ বা লাভপুরের গ্রামে ঘুম নেই চোখে কোনো এক বালক বা বালিকা অপেক্ষায়৷ আজ লকী (লাউ) বা গোবি (ফুলকপি) বিক্রির রুপি দিয়ে হাট থেকে বাবা নিয়ে আসবেন লাল চুড়ি কী সাদা বল ৷বাবার জন্যে এই অপেক্ষায় বরিশাল-বারাসাত বা বল্লভগড় এক৷ ঘর ওয়াপসি অমরলাল আর আমিনও এখন এক ম্যাটাডোরে উঠে বসছে৷