ঢাকা, মঙ্গলবার ০৭, মে ২০২৪ ১৪:০৫:১৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

শুভ জন্মদিন সাধক সনজীদা খাতুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৯:১৫ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৮:৪৯ পিএম, ৫ এপ্রিল ২০১৮ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ড.সনজীদা খাতুনের আজ ৮৫তম জন্মদিন। অন্যান্য বছরের মত এবারও দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় সনজীদা খাতুনের অগনিত ভক্ত-অনুরাগীরা। তাই তো আজ সকাল থেকেই এই ভালবাসার, শ্রদ্ধার মানুষটির বাসায় লোকে লোকারণ্য। জন্মদিনের শুভেচ্ছায় আর ভালবাসায় সিক্ত হচ্ছেন এই মহৎপ্রাণ।

 

বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা সনজীদা খাতুনের জীবনের অনবদ্য, অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংগীত তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন, আন্দোলন, সংগ্রাম, রাগ-বিরাগের হাতিয়ার। তিনি একাধারে কণ্ঠ শিল্পী, সংগীত শিক্ষক, গানের, কবিতার বিশ্লেষণকারী, তুলনাহীন সংগঠক, সাংস্কৃতিক প্রদায়ক। নিজের বলিষ্ঠ নীতি, আদর্শ, সুচিন্তিত সদূরপ্রসারী চিনতাভাবনা, বাঙালির প্রতি আত্মিক টানেই এই মহিয়সী বাংলার সংস্কৃতিকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়।

 

ভাষা-আন্দোলন, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধপরবর্তী দেশগঠনে আমরা তাকে দেখেছি অগ্রণী সাংস্কৃতিক নেত্রীর ভূমিকায়। 

 

জীবন্ত কিংবদন্তী এ শিল্পী ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। যারা সারা জীবন ধরে শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, মননশীলতার চর্চা করে নিজেকে উন্নীত করেছেন এক ঈর্ষণীয় অবস্থানে, সারা জীবনের চর্চায় তিনি তৈরি করেছেন স্বকীয় এক পরিমন্ডল, যা থেকে উত্তরকালের নাগরিকগণ পেতে পারেন উদ্দীপনা, অনুপ্রেরণা।

 

সনজীদা খাতুন ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯৫৫ সালে ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

 

তারই নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে ছায়ানটের মত প্রতিষ্ঠান, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের মত সংগঠন। সনজীদা খাতুনের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষক হিসেবে। শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরগ্রহণ করেন।

 

পারিবারিকভাবেই সম্পূর্ন সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠেন। বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক কাজী মোতাহার হোসেন। মা রত্নগর্ভা মাজেদা খাতুন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্য পাওয়া কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে সংগীত ছিল মানুষের পার্থিব জীবনের দু:খ, অশান্তি, বেদনা দূর করার একমাত্র মাধ্যম।

 

তার বাবা বিশ্বাস করতেন জীবনে একমাত্র সংগীতই মানুষকে সুখ, আনন্দেন, হাসির, উচ্ছলতার খোরাক যোগাতে পারে। সনজিদা খাতুন সেই পার্থিব জীবনের আকর্ষনের দিকে ধাবিত হন বাবার হাত ধরে,বাবার ভালবাসার আর্শীবাদ নিয়ে। এরপর সুরের ভিতর দিয়ে তার অবারিত, ক্লান্তিহীন পথ চলা।

 

তিনি রবীন্দ্র, সাহিত্য ও সংগীতের নিপুন ব্যাখ্যাতা, আবার একই সঙ্গে কবি নজরুল, জসীমউদ্দীনসহ সমকালীন সাহিত্যেরও বিশ্লেষক। সারা জীবনের বিধি চর্চায় তৈরি করেছেন সম্পূর্ণ এক মন্ডল যা গোটা বাঙালিকে আজও সতেজ করে, করে নতুন ধারায় উদ্বুদ্ধ।

 

তিনি মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ ‘কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত’, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ’, ‘ধ্বনি থেকে কবিতা’, ‘অতীত দিনের স্মৃতি’, ‘তোমারি ঝর্ণাতলার নির্জনে’, রবীন্দ্রনাথ: বিবিধ সন্ধান’, ‘কাজী মোতাহার হোসেন’, ‘রবীন্দ্রনাথের হাতে হাত রেখে’ ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতির চড়াই-উৎরাই’, ‘ধ্বনির কথা আবৃত্তির কথা’, সংস্কৃতির বৃক্ষছায়ায়’, সংস্কৃতি কথা সাহিত্য কথা’ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও তার গাওয়া গান নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য অডিও অ্যালবাম।

 


কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত), কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট ১৯৮৮ সালে তাঁকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য’ উপাধি প্রদান করে। এছাড়াও গত বছর বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে রবীন্দ্রসংগীতের সাধনা এবং তার প্রচার-প্রসারে বিশেষ অবদানের জন্য সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দেশিকোত্তম` প্রদান করা হয় সনজীদা খাতুনকে৷

 

বাঙালির সাংস্কৃতিক, মনসতাত্বিক ভুবনে তিনি যেন এক প্রস্ফুটিত চির অম্লান এক গোলাপ ফুল। যে ফুলের গন্ধ এত বছর পার হয়ে গেলেও কমেনি বরং তার তীব্রতা, সুঘ্রাণ যেন দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। সার্বজনীনভাবে বাঙালির কাছে পরিচিত সনজিদা খাতুন, শান্তিনিকেতনের মিনু দি কিংবা নিকটজনদের কাছে মিনু আপা।

 

বাংলার শতাব্দীর সাক্ষী, বাংলার গৌরবের আরেক নাম সনজীদা খাতুন। তার পঁচাশিতম জন্মবর্ষপূর্তিতে উইমেননিউজের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালবাসা জানাই।