ঢাকা, রবিবার ০৭, ডিসেম্বর ২০২৫ ৫:২৪:১৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

চা কন্যা বুলবুলি বেগম

সালেহীন বাবু

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৪:৫৮ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০২:২০ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ভোর ৬.৩০ মিনিট। তড়িঘড়ি করে মনোহরি দোকান খুলছেন বুলবুলি বেগম। প্রতিবেদককে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলে কেটলি ভরে গরম পানি চড়ালেন চুলায়। আর একটি কেটলিতে চা পাতা দিলেন। দোকান হালকা ঝাড়ও দিলেন নিজ হাতে।

 

এর মধ্যে চায়ের পানি গরম হয়ে গেল। এই সকালেই চায়ের জন্য দোকানের সামনের কাঠের বেঞ্চে বসে আছে বেশ কয়েকজন। সবাইকে চা দিয়ে কিছুটা হাফ ছাড়লেন। তারপর বললেন, বলেন কি জানতে চান। 

 

কেমন আছেন?


এই যেমন দেখতাছেন তেমনি। খুব ভোরে দোকান খুলি,আর রাত ১২ টায় যাই। কেমনে দিন যায়,রাত যায় ঠাহর পাইনা। এমনেই যাইতাছে জীবন।


ঢাকা শহরে অর্থ্যাৎ সাভারে কতদিন ধরে?


১৯৯৫ সাল থেইক্যা। ২৩ বছর দেখতে দেখতে চইল্যা গেছে।


আপনার দেশের বাড়ি -


আমার দেশের বাড়ি জয়পুরহাট, থানা পাঁচবিবি, গ্রাম উচিতপুর।


ঢাকায় আসার পর কি করতেন-


ঢাকায় এসে ইপিজেডে চাকরি নেই। একটা গার্মেন্টসে সুইং হেল্পার হিসেবে যোগ দেই। দুই মাসের মধ্যে প্রমোশন পেয়ে সুইং অপারেটর হই। তারপর অনেকদিন চাকরি করছি। দুই বছর হল চাকরি বাদ দিছি।


কেন? চাকরি কি চলে গেছে নাকি?


না, যতদিন চাকরি করেছি কেউ আমার ভুল ধরতে পারেনি। এই ব্যবসার জন্য ২ বছর আগে চাকরি ছাড়ি।


কেন আপনার স্বামী এনামুল হক কি আর দোকানে বসে না?


বসে। কিন্তু এত বড় দোকান ও একা দেখতে পারে না। তাছাড়া হিসেব-কিতাবেও পটু না। বেচারা সহজ সরল। এখন দোকানের যে হাল, দুই বছর আগে তেমন ছিলো না। দোকানের অবস্থা হয়েছিল করুণ। সে সময় দোকানে প্রচুর লোকসান হয়। অনেক মানুষ ২০-৩০ হাজার বাকী খেয়ে সটকে পড়ে। অনেকে আবার অর্ধেক টাকা দিছে। বাকী টাকা মাইর‌্যা খাইছে। আমি তখন চাকরি করতাম। যখন দেখলাম দোকানের এ হাল, ব্যবসা তো লাটে উঠছে, ভেবে চিন্তে চাকরি ছেড়ে দেই, আর ব্যবসার হাল ধরি।


দুই বছর ধরে হাল ধরেছেন, এখন কী অবস্থা?


ইনশাললাহ ভাল। আগের থেকে এখন বেচাকেনা অনেক ভাল। এখন আর আগের মত বাকী যায় না। বাকী দিলেও আমি নিজে হিসেব রাখি। তবে চোখকান সবসময় খোলা রাখতে হয়।


এত সজাগ থাকতে হয় কেন?


দুনিয়ায় মানুষ চেনা বড় দায় গো বাপু। রঙ্গিন দুনিয়ায় রঙ্গের রঙ্গের মানুষ। খদ্দেরকে চা দিলাম, সিগারট দিলাম, সব দিলে বিল হয় ৬০ টাকা দেয় ৫০ টাকা। চোখেমুখে মিথ্যা বলে। এক বিক্রিতেই যদি ১০ টাকা লোকসান হয় তাহলে সরাদিন কত টাকার লোকসান হতে পারে। আবার আরেক খদ্দেরকে মুদি ও জিনিস দিতে গেলে আর একদিক থেকে লাড্ডু, বিষ্কুট খেয়ে অস্বীকার করে। পরে দাম দেয় না। তাই সবদিকে চোখ রাখি। অবশ্য সব খরিদ্দার এক রকম না। 


সারাদিন দোকানে ব্যতিব্যস্ত থাকেন। বাসায় সময় দেন কখন?


সারাদিনের মধ্যে ফাঁকে ফাঁকে আমার মেয়েকে স্কুলে পাঠাই। বাসায় যেয়ে রান্নাও কইরা আসি। সে সময় এনামুল (স্বামী) সময় দেয়। আমার এক পোলা, এক মাইয়া। পোলা কলেজে পড়ে আর মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। সব দিকেই ঠিক রাখতে হয়।


সারাদিন এত পরিশ্রম করেন, কষ্ট লাগে না?


কেন কষ্ট লাগব? সৎ পয়সায় খাই, কামাই করি, হয়ত শারিরীক পরিশ্রম হয়। তাও কষ্টকে কষ্ট মনে হয় না। দম ফেলার সময় পাই না। মনোহরি দোকান হলেও চায়ের খদ্দের বেশি। আর আমি ভেজাল জিনিস বেচি না।


তবে কি সারাজীবন এবাবেই চলবে?


মোটেও না। আমি আমার সন্তানদের পড়াশোনা করাইয়া শিক্ষিত বানামু। আর আমরা দেশে যামুগা। সেখানে নতুন দোকান দিমু। শেষ জীবনে নিজের গ্রামে থাকতে চাই।