ঢাকা, শুক্রবার ১০, মে ২০২৪ ১১:০২:৪৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বর্ষায় ভেড়ামারার গাছে গাছে ঝুলছে কদমফুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:১৯ পিএম, ১৯ জুন ২০২৩ সোমবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

আষাঢ় কিংবা শ্রাবণেই বাংলাদেশের গ্রাম বাংলায় গাছে ফোটে কদমফুল। কিন্তু কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাতে জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে দেখা মিলল আষাঢ়ের ঘণ বর্ষায় ফোটা কদমের। শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখন গাছে গাছে ছেয়ে গেছে বর্ষার এ ফুলে। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা বর্ষার স্মারক কদম ফুল। কদমের শুভ্র রাগে হৃদয় রাঙিয়ে নেয়ার সুযোগ এখন শহরের লোকের কমই আছে।
শুধু শহর নয় গ্রাম থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে কদম। চোখ জুড়ানো ঘন সবুজ পাতার মধ্যে সাদা-হলুদ মঞ্জুরি ফুলের চিরচেনা কদমগাছ এখন চোখে পড়ে কমই। ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান/মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান আজ এনে দিলে, হয়তো দেবে না ক্লান্ত রিক্ত হবে যে তোমার ফুলের ডাল। এ গান আমার শ্রাবণে শ্রাবণে তব বিস্মৃতি স্রোতের লাবনে ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবে তরণী বহি তব সম্মান’ -কবিগুরুর বিখ্যাত এই গানের শুভ্র কদমফুল এখন আর রাঙাতে পারে না মানুষের মন।


এক সময় সর্বত্র চোখে পড়ত কদমগাছ। বর্ষার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়ত সেই কদম ডালে ফোটা ফুল থোকায় থোকায়। বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আদিকাল থেকে কদম আমাদের প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে আসছে। শুধু সৌন্দর্য্য নয়, ভেষজ গুণের পাশাপাশি কদমের রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও। বীজ থেকে চারা হয়। চারা গজানোর ৯-১০ বছরের মধ্যে ফুল ফোটে। আষাঢ় মাসে গাছে ফুল আসে। ফুলগুচ্ছ আকারে গোলাকার সাদা বর্ণের হয়ে থাকে।

কিন্তু ভেড়ামারায় আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি নেই। তবে গাছে গাছে ঝুলছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হলুদ-সাদা রঙের কদমফুল। আদিকাল থেকে বর্ষার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে যাওয়া নান্দনিক কদমফুল আজ ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।

হলুদ-সাদা রঙের কদমফুল গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হাসতে থাকে প্রকৃতির মাঝে। ফুলে ভরা কদমগাছ দেখতে নান্দনিক হলেও এর আর্থিক মূল্য খুবই স্বল্প। কদম কাঠ নরম বলে আসবাবপত্র তৈরিতে অনুপযোগী। তবে কাঠ দিয়ে দিয়াশলাই ও কাগজ তৈরি হয়ে থাকে।

শুধু সৌন্দর্যে আর মাধুর্যে নয়, ভেষজগুণের পাশাপাশি কদমে রয়েছে আরো বিশেষ গুরুত্ব। কদমের ছাল, পাতা কিংবা ফুলের রস পিপাসা নিবারণের পাশাপাশি কৃমি ও জ্বরনাশক এবং বলকারক হলেও গ্রাম বাংলায় সেই কদমের ঘ্রাণ এখন অনেকটাই অতীত। আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টিতে দক্ষিণা হালকা বাতাসে হলুদ-সাদা ফুলে দোল খাওয়া কদমের নেই আগের মতো জৌলুস। দূর থেকেও দৃষ্টিনন্দন গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে যেন বেরিয়েছে হলুদ-সাদা ফুলের ঝর্ণা। প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধণ ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এ বৃক্ষের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।

ভেড়ামারা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল জব্বার বলেন, গাছ মানবদেহের অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত ও বায়ু দূষণমুক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। গাছের পাতা, ফুল ও ফল যেমন সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক তেমনি আমাদের চারপাশকে কদম গাছের সবুজ পাতা ও ফুল সৌন্দর্যবর্ধন করে।

তিনি আরো বলেন, ভেড়ামারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে বাড়ির সামনে, রাস্তার পাশে, পুকুর ও খালের পাড় কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নান্দনিক কদম গাছের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেলেও বর্তমানে তা শুধুই স্মৃতি আর স্মৃতি। 

ভেড়ামারা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আ. রাজাক রাজা বলেন, ভেড়ামারা সড়কের দুইধারে ঝুলছে মনোরম সাদা-হলুদ রঙ্গের কদমফুল। শহরে আসার পথে গাড়িতে বসাবস্থায় সড়ক ডিভাইডারে নান্দনিক কদম ফুলের দৃশ্যে মনটা ভরে যায়। বর্তমানে বৃক্ষ রোপণের তালিকায় নান্দনিক কদমগাছ নেই, তবে নিয়মিত কর্তন হচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বিলুপ্ত হওয়া কদমগাছ সংরক্ষণ ও বনায়নে রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।