যমুনার চরে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:০১ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৩ বৃহস্পতিবার
সংগৃহীত ছবি
যমুনা নদীর চরাঞ্চলের কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তিল চাষ। চরের মাটি প্রচুর পলিযুক্ত হওয়ায় কম পরিশ্রমে তিলের ভালো ফলন পাওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন হয়। বাজারে তিলের চাহিদাও রয়েছে অনেক। ফলে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তিল চাষিদের সংখ্যা। যমুনার ভাঙনে সব হারানো কৃষকরা তিল চাষে স্বপ্ন বুনছেন।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চরাঞ্চলে তিলের আবাদ ভালো হয়। চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে তিল কাটা হলে এখান থেকে ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন তিল উৎপাদন হবে। তিল উৎপাদনের জন্য যে চাষি আছে তাদের মধ্যে চরঞ্চালের চাষিরা বেশি। চরের পলি মাটি তিল চাষের জন্য উপযোগী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তিল চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা, রোগবালাই দমনে সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে তিল চাষিদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, তিলের তেল যেকোন রান্নার তেলের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিলের তেল রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন-ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এই তেল। তিলের তেলে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে কাজ করে। তিলে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়কে সবল রাখে। মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে তিলের তেলে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড। খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি চুলের পরিচর্যাতেও সমানভাবে ব্যবহার করা যায় তিলের তেল। এই তেল মাথার ত্বক এবং চুলে পুষ্টি জোগানোর সঙ্গে চুলকে রোদের ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি ও দূষণ থেকে রক্ষা করে।
সরেজমিন দেখা গেছে, যমুনার চরে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি তিলের আবাদও হয়েছে। যতদূর চোখ যায়, শুধু তিলের সবুজ গাছের সমাহার। বেশকিছু অংশে তিল পরিপক্ক হয়ে উঠেছে। কয়েকদিনের মধ্যে সংগ্রহ করবেন চাষিরা। বিঘাপ্রতি ৫-৬ মণ তিল পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, যমুনার চরাঞ্চলে ফসলের ফলন বেশ ভালো হয়। এখানে সারা বছর নানা ধরনের ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। চলতি বছর তিলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন জেলা কৃষি অফিস ও কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ও তিল ঘরে তুলতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবেন চরাঞ্চলের তিল চাষিরা।
যমুনা চরের একাধিক তিলচাষি জানান, আগের তুলনায় চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে তিলের আবাদ তুলনামূলক বেশি হয়েছে। তিল চাষ সহজ ও লাভজনক। জমির মাটি সমান করে বীজ ছিটানোর তিন মাস পর সেচ, সার, কীটনাশক ছাড়াই তিল ঘরে তোলা যায়।
তিল চাষি বাচ্চু মিয়া বলেন, এক একর জমিতে তিল চাষ করেছি। উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহারে ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি বিঘাপ্রতি ৫-৬ মণ করে তিল পাবো। তিলের দামও ভালো। ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকা মণে বিক্রি করা যায়। আমাদের সরকারিভাবে আরো সহযোগিতা করলে তিল চাষের আবাদ বাড়াবো।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আহসানুল বাসার বলেন, তিল একটি তৈলজাত ফসল। যা আমাদের দেশে আগে খুব কম চাষ করা হতো। এখন ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিল অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতেও ফলানো সম্ভব। আর তিল উৎপাদনে খরচ ও পরিশ্রম কম লাগে। আমরা চাষিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি। আশা করছি আগামীতে তিল চাষের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে।