ঢাকা, রবিবার ০৫, মে ২০২৪ ১৭:১৮:০৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

গল্প : সোমার সংসার

সাহজাদা পারভীন সাজু

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৩:০৫ পিএম, ২৭ জুলাই ২০১৮ শুক্রবার

বৃষ্টি ঝরছে সকাল থেকেই। দূরে সবুজ প্রকৃতি স্নান করছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির তালে। গ্রামের আবহাওয়াটা একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে সোমার কাছে। শহুরে জীবন আর গ্রামের পরিবেশ একটু তো আলাদাই হবে। মাত্র কয়েক দিন আগে বিয়েটা হয়েছে। এখনো গা থেকে নতুনের গন্ধ যায়নি।

 

ঈদের সকাল! একটা সময় ঈদের দিনটি ছিলো জীবনের সবচেয়ে মধুর দিন। মনে হতো এই দিনটা প্রতিদিন কেন আসে না ..! এক মুহুর্তে যেন চোখের সামনে ফিরে এলো অতীত! সে অতীত যেমন মধুময় তেমনি বর্তমানটাও কম কিসের! সব ভালোলাগার মাঝে প্রিয় মানুষটার ভালোলাগা মন্দ লাগার সাথী হয়ে থাকা।

 

আগের সময়টা ছিলো শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাইরে কি হচ্ছে না হচ্ছে তার কোন পরোয়া ছিলো না। কিন্তু এখন সবার সাথে একটা সেতু বন্ধন তৈরি হয়ে গেছে। এই বন্ধনটা নিজে থেকেই হয়ে গেছে।

 

অতীত-বর্তমানের দোলাচল নিয়ে ভাবতে ভাবতে বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে গেলো। সোমার কাজের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি করতে হবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে। এমন সময় শ্বাশুড়ির গলার আওয়াজ শোনা গেলো। সোমার এতোক্ষণের চিন্তা দূর হলো। কি করতে হবে তার দিক নির্দেশনা পাওয়া গেলো।

 

ঈদের সকালে খাবারের আয়োজন শুরু হলো। নিজের মত করে আজ রান্না করবে সে। একটু ভয় তো আছেই মনে। কেমন যেন হয়। সাহায্যের জন্য দু’জন রয়েছে অবশ্য। সোমা মনে মনে ভাবছে ভয় কিসের! এদের সাহায্য তো পাওয়া যাবে। আর না হলে তো ফোন রয়েছে। মাকে ফোন করে জেনে নেয়া যাবে।

 

সোমা একে একে সেমাই, জর্দা, মাংস করে ফেললো। এগুলো রাঁধতে তেমন একটা সমস্যা হলো না। কিন্তু পোলাও রান্নার বেলায় একটু যেন থমকে গেলো সে। মনে হলো, এবার মায়ের সাহায্য দরকার। যথারীতি মাকে ফোন।

 


ওদিকে মা ভেবেছেন ঈদের দিন খোঁজ-খবর নিতেই ফোন করেছে মেয়ে। মায়েরও সকাল থেকে মনটা কেমন কেমন করছিলো। জীবনে এই প্রথম ঈদ করছেন মেয়েকে ছাড়া। সোমাকে ছাড়া বাড়িটা একদম ফাঁকা। কোনো হৈইচৈই নেই, কোনো হাকডাক নেই। সোমা বেশ চঞ্চল স্বভাবের। ঈদে তার তিন-চারটে জামা চাই-ই চাই। পেতোও তাই। একটার পর একটা পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতো। কিন্তু কোনটা তাকে ভালো লাগছে তার জন্য মায়ের মতটা না হলে তার চলতো না। সেই মেয়ে আজ ঘরে নেই। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলছেও না, মা কোনটা পরবো ..? আজ সকাল থেকে মা যেন সেই অপেক্ষাতেই ছিলেন!


ফোনের ওপ্রান্ত থেকে সোমা বলে ওঠে, মা, মা, শুনতে পাচ্ছো..?


মা তো হারিয়ে গিয়েছিলেন সোনাঝরা অতীতে। নিজেকে একটু সামলিয়ে নিয়ে সোমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কেমন আছিস মা ..?


সোমা বললো, ভালো। মা শোন, পোলাও রান্না করছি। পোলাও রাঁধতে কতটুকু পানি দিব ..? কথাগুলো এক নি:শ্বাসে বলছে সোমা।


ওদিকে মা ভাবছেন কথাগুলো কি সোমা বলছে! যে মেয়ে দুদন্ড এক জায়গায় বসে না! এসবের ধারে পাশেও যেত না সে আজ পোলাও রাঁধছে...।

 


মা পোলাও রান্নার নিয়মটা বলে দিলেন। যতটুকু চাল তার দ্বিগুণ পানি। আর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিভাবে, কি কি মশলা দিতে হবে তাও বুঝিয়ে দিলেন মেয়েকে।

 


কথা শেষ হতে না হতেই সোমা বললো, মা ফোন রাখি। পরে কথা বলবো।


ফোন কানেই ধরে রেখেছেন সোমার মা। এ ক’দিনেই মেয়ের পরিরর্তন দেখে অবাক লাগছে মায়ের। আপন মনে মা হাসেন। ফিরোজা বেগম ভাবতে পারেন নি মেয়ে তার এতো তাড়াতাডি নিজেকে মানিয়ে নেবে। ফোন কান থেকে নামিয়ে তিনি ভাবছেন গত কয়েক দিনের চিন্তার অবসান হলো বুঝি।

 


ফিরোজা বেগমের চোখে কোণে দু ফোনা পানি চিকচিক করে উঠলো। তবে এ অশ্রু বেদনার নয়, আনন্দের! মেয়েকে যে সঠিক শিক্ষা দিতে পেরেছেন। তবে ভাবনাটা আরো একটু দীর্ঘ হলো। মেয়ে তার এটা ধরে রাখতে পারবে তো...!

 

এদিকে সোমার পোলাও রান্না প্রায় শেষ। দুপুর হয়ে গেছে। সবাই লাঞ্চ করবে। খাবারগুলো একে একে সাজানো হয়েছে টেবিলে। পোলাও এরই মধ্যে হয়ে গেছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। সবাই এসে খাবার টেবিলে বসেছেন।

 

তারা সবাই গল্পে মশগুল। কথার ফাঁকে ফাঁকে রান্নার প্রশংসা করছেন তারা। সোমার কানে আসছে সে প্রশংসার বাণী। নিজের প্রশংসা শুনে কেমন জানি ভালো লাগছে ওর। এ এক অন্য রকম ভালোলাগা! জীবনে প্রথম এরকম ভালোলাগার রেশ কি সবার একই রকম …!