মায়ের সামনে প্রাণ দিলো চার বছরের সুকান্ত
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:৫৪ এএম, ৬ আগস্ট ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১২:৫৫ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে অতর্কিত হামলা শুরু হল। পাশাপাশি মিন্টো রোডের ২৭ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতেও হামলা করে ঘাতকরা। ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি চার বছরের শিশু সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতও।
১৫ আগস্টে নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি ও কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শাহানারা আব্দুল্লাহর আদরের বড় ছেলে সুকান্ত। ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট নিজের মা শাহানারার সামনেই নিহত হন চার বছরের এই শিশুটি। সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি এই হতভাগী মা।
স্মৃতি হাতরে শাহানারা আবদুল্লাহ বলেন, ঘাতকরা বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা রুমে প্রবেশ করে হ্যান্ডস আপ বলে আমাদের সবাইকে কর্ডন করে নিচতলার ড্রইংরুমে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে রাখে। সিঁড়ির অর্ধেক নেমেই বাবু (সুকান্ত বাবু) বলে, মা আমি তোমার কোলে উঠবো। আমি ওকে কোলে নিতে পারলাম না। পাশে আমার ভাসুর ওকে কোলে নিলেন।
তিনি বলেন, আমার শ্বশুর ঘাতকদের বলেছিলো, তোমাদের কমান্ডিং অফিসার কে? কিন্তু উত্তরে ওরা বলে, আমাদের কোনও কমান্ডিং অফিসার নেই। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ঘাতকরা ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। আমরা মাটিতে পড়ে যাই।
সুকান্তর জন্ম একাত্তরের ২২ জুন। সে সময় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেব মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মা শাহানারা শিশু সুকান্তকে নিয়ে প্রাণের ভয়ে গ্রামকে গ্রাম পাড়ি দিয়েছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হল ১৯৭১ সালে। সুকান্তর পরিবারে খুশি নেমে আসল।
৭৫ এর ১৫ আগস্ট হঠাৎ ঘাতকদের আগমনে চার বছরের শিশুটি অনেকটাই ভয় পেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি আশ্রয় চায় মা শাহানারা আব্দুল্লাহর কোলে। কিন্তু মমতাময়ী মা তার আদরের ছোট্ট শিশুপুত্রকে আর কোলে নিতে পারেননি। তার আগেই ঘাতকদের তপ্ত বুলেটের আঘাতে মায়ের চোখের সামনেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয় সুকান্ত বাবুকে।
সেদিন শাহানারা গুলি খেয়ে আহত হন। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ কপালগুণে বেঁচে যান। সেদিন মায়ের সামনে সন্তান রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। মা শাহানারা আহত অবস্থায় নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়েছিলেন সন্তানের দিকে। একজন মার কাছে এর চাইতে কষ্টকর, বেদনাদায়ক আর কিইবা হতে পারে। সেই দিন কোনমতে বেঁচে যান আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। সন্তানের মুখটা শেষবারের মতো দেখারও সুযোগ হয়নি তার। সেই কষ্ট এখনও তাড়িয়ে ফেরায় হতভাগ্য পিতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে। ছেলের ছবির অ্যালবামে হাত বুলিয়ে পুরনো স্মৃতি হাতরাতে গিয়ে এখনও ডুকরে কেঁদে ওঠেন মমতাময়ী মা শাহানারা আব্দুল্লাহ।
সুকান্ত বাবু জন্মগ্রহণ করেছিল ৭১ সালের ২২ জুন। বাংলাদেশ স্বাধীনও হয়েছিল ১৯৭১ সালে। সুকান্তের জন্মের সময় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। নয় মাসের যুদ্ধে আমরা পেয়েছিলাম নতুন স্বাধীন দেশ। সুকান্তও দেখেছিল নতুন বাংলাদেশকে। কিন্তু নতুন দেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠা হয়নি তার। একটি মাসুম বাচ্চাকে স্বাধীন দেশ থেকে চিরতরে চলে যেতে হল। এ লজ্জায় আমরাও লজ্জিত সুকান্ত। তুমি নেই সুকান্ত, তোমার মত নিষ্পাপ শিশুর সোনার বাংলাদেশে ঠিকই আছে।