ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:১৬:৩৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মথুরাপুর দেউল অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:০৪ পিএম, ২২ জুন ২০২৫ রবিবার

মথুরাপুর দেউল অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে

মথুরাপুর দেউল অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে

ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নে মোঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত মথুরাপুর দেউল। অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে শত শত বছর ধরে।

ষোড়শ শতাব্দীর শেষার্ধে নির্মিত এই দেউলটি শুধু স্থাপত্য নয়, বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন হিসেবেও বিবেচিত। তবে কালের বিবর্তনে অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে স্থাপত্যটি।

এটি ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। ফরিদপুরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে মধুখালী-বালিয়াকান্দি আঞ্চলিক সড়কের পাশেই এর অবস্থান। রাস্তার বিপরীতে শান্তভাবে বয়ে চলেছে চন্দনা নদী। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই মনোমুগ্ধকর দেউলটি দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীরা। অথচ পর্যটকদের জন্য নেই কোনো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা। ফলে দর্শনার্থীদের মুখোমুখি হতে হয় নানারকম বিড়ম্বনার।

দেশের ইতিহাসে মোগল সাম্রাজ্যের যেসব স্মৃতি বিদ্যমান, তার মধ্যে এই দেউলটি অন্যতম। সরকারের উদাসীনতার কারণে দেউলটির ইতিহাস ধরে রাখতে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। কাগজে-কলমে ইতিহাসে থাকলেও বাস্তবিক অর্থে নেই কোনো সংরক্ষণের ব্যবস্থা।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গাজুড়ে বিস্তৃত প্রায় ৮০ ফুট উচ্চতার দেউলটির গায়ে খচিত টেরাকোটার চিত্রকর্ম ও স্থাপত্য শৈলী চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রাচীন ইট ও চুন-সুরকির মিশ্রণে নির্মিত এই দেউলের দেয়ালে ফুটে উঠেছে হিন্দু পুরাণের রামায়ণ ও কৃষ্ণলীলা, গায়ক, নৃত্যশিল্পী, পবনপুত্র হনুমান ও যুদ্ধদৃশ্যের নিপুণ চিত্র। প্রতিটি কোণের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে কৃত্তিম মুখাবয়ব, যা সেই যুগের শিল্পভাবনার পরিচায়ক।

দেউলটির একমাত্র প্রবেশপথটি দক্ষিণমুখী এবং এটি বারো কোণা বিশিষ্ট যা বাংলার স্থাপত্যধারায় বিরল। রেখা প্রকৃতির এই দেউল বাংলায় নির্মিত একমাত্র এরকম কাঠামো বলেই প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

দেউলটি নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত। এক সূত্রমতে, সংগ্রাম সিং নামক এক সেনাপতি এটি নির্মাণ করেন। ১৬৩৬ সালে ভূষণার জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিং-কে এই অঞ্চলের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার পর তিনি মথুরাপুরে বসবাস শুরু করেন এবং এক স্থানীয় বৈদ্য পরিবারের কন্যাকে বিবাহ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারই উদ্যোগে এই দেউলটি নির্মিত হয়।