বাবা কবে ফিরবে, অপেক্ষায় ছোট্ট মেয়ে জোহরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৯:৩০ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৩:৩৩ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
জোহরা
বছর খানেক আগে ভারতের কাশ্মীরের রাস্তায় নিরস্ত্র অবস্থায় পুলিশের এক এএসআই-কে গুলি করে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। ভূ-স্বর্গে এমন ঘটনা আর চমকে দেয় না। মাস-বছর ঘোরে, ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু, সেবার ছোট্ট জোহরার কান্না নাড়িয়ে দিয়েছিল দেশবাসীকে।
আরও একটি বছর কেটে গেলো। আরো একটি ২৮ অগাস্ট পেসরিয়ে গেলো। মৃত পুলিশকর্মী আব্দুল রশিদ শাহের সেই মেয়ে আজও বিশ্বাস করে না, বাবা সত্যি আর ফিরবে না।
গত বছরই কাশ্মীরের অনন্তনাগে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল আব্দুল রশিদ শাহের। বাবা কোথায়? এই প্রশ্নে পাগল করে তুলেছিল আট বছরের জোহরা। কোনও শান্ত্বনাতেই মানানো যায়নি তাকে। আজও হাসেনা জোহরা। মা নাসিমা, বড় বোন বিলকিস অনেক কষ্টেও জোহরার মুখে হাসি ফেরাতে পারেনি। তাকে বলা হয়েছে, হজে গিয়েছে বাবা। বছরখানেক সেটাই মেনে নিয়েছে সে। শুধু বারবার বলে ওঠে, ‘এবার এলে, বাবাকে আর যেতে দেব না।’
খেলাধুলোয় জোহরাকে ভুলিয়ে রাখে বড় বোন বিলকিস। আজও যদি কেউ তাকে জিজ্ঞেস করে, ”কাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাস?” কাশ্মীরি মেয়ের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, উত্তর দেয়, ‘পাপা’।
২০১৭-র ২৮ অগস্ট মৃত্যু হয় আব্দুল রশিদ শাহের। তার শেষকৃত্যে জোহরা যখন পৌঁছায়, তখনও তার গায়ে স্কুল ইউনিফর্ম। হাতে মেহেন্দি। কোমল চোখ-ঠোঁট মেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। জোহরার সেই ছবি ভেদ করে যেন বেরিয়ে আসছিল তার বুক ফাটিয়ে দেয়া কান্নার আওয়াজ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ”জোহরার চোখের জল আমি মেনে নিতে পারছি না।” জোহরার পড়াশোনার সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর।
একবছর ধরে কঠিন সময় কাটিয়েছে শাহের গোটা পরিবার। প্রথম স্ত্রী নাসিমার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর শগুফতাকে বিয়ে করেছিলেন ওই পুলিশকর্মী। নাসিমা ১০,০০০ টাকা খোরপোষ দিতেন। কিন্তু তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সেই টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আপাতত বাপের বাড়ির ভরসাতেই দুই মেয়েকে মানুষ করছেন নাসিমা। আর শগুফতাও সরকারি সাহায্যের জন্য দরজায় দরজায় ছুটে বেড়াচ্ছেন।
তবে জোহরার খবর নিতে মাঝে-মধ্যেই ফোন করেন গৌতম গম্ভীর। স্কুলে ফি ঠিকমত দেয়া হল কিনা, সে খোঁজও রাখেন তিনি। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় জোহরা। প্রিয় গান কী? জোহরার মুখে ফোটে হাসি, ‘পাপা জলদি আ জানা।’