যেসব বিখ্যাত ব্যক্তিরা হাঁসের মাংস পছন্দ করতেন
অনু সরকার
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:২১ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০২৫ মঙ্গলবার
ছবি: সংগ্রহিত।
গত বেশ কিছুদিন ধরে হাঁসের মাংস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে পত্র-পত্রিকা টেলিভিশনে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। হাঁসের ভুনা মাংস উঠে এসেছে রাজনৈতিক আলোচনার টেবিলে।
আসলে হাঁসের মাংস খেতে কে না পছন্দে করে। দেশি হাঁসের মাংস খেতে কার না ভালো লাগে। সঙ্গে চালের আটার রুটি আমাদের দেশের জনপ্রিয় একটি খাবার। তবে এবার জেনে নেয়া হোক বাঙালীদের পাশাপাশি যেসব বিখ্যাত ব্যক্তিরা হাঁসের মাংস পছন্দ করতেন তাদের ইতিহাস।
ইতিহাস বলছে, যেসব ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হাঁসের মাংস পছন্দ করতেন তাদের মধ্যে সম্রাজ্ঞী ডাওগার সিক্সি (চিং রাজবংশ, চীন), সম্রাট কিয়ানলং (চীন), রাজা লুই চতুর্দশ (ফ্রান্স) ও রানী ভিক্টোরিয়া (যুক্তরাজ্য) উল্লেখযোগ্য।
চীনের বেশ কিছু রাজা-রাণীসহ বিখ্যাত ব্যক্তি হাঁস উপভোগ করতেন। বিশেষ করে পিকিং হাঁস (পিকিং ডাক)। উদাহরণস্বরূপ, চীনের সম্রাট কিয়ানলংয়ের কথা বলা যায়। তিনি তার রাজত্বকালে ঘন ঘন পিকিং হাঁস খেতেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। চীনা প্রধানমন্ত্রী চো এনলাই হেনরি কিসিঞ্জার এবং রিচার্ড নিক্সনের মতো অতিথিদের পিকিং হাঁস পরিবেশনের মাধ্যমে আপ্যায়ন করতেন।
এছাড়াও ভোকাল ওয়েব সাইটের তথ্য মতে, বিখ্যাত আইরিশ নাট্যকার ও লেখক অস্কার ওয়াইল্ড হাঁসের রোস্ট উপভোগ করতেন বলে জানা গেছে।
পিকিং হাঁস চীনের একটি মর্যাদাপূর্ণ খাবার। কেবল খাবার নয়; এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক যার ইতিহাস যেমন সমৃদ্ধ এবং জটিল, তেমনি এর স্বাদও জটিল। এর পরিবেশনার স্টাইলটিও বেশ শৈল্পিক ও নান্দনিক।
পিকিং হাঁস বেইজিংয়ের একটি বিখ্যাত খাবার। এই আইকনিক খাবারটি কেবল তার স্বাদের জন্যই নয়, এর গভীর সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্যের জন্যও আলাদা।
পিকিং হাঁসের উৎপত্তি চীনে। ইউয়ান রাজবংশ থেকে এ হাঁসের প্রচলন শুরু হয়। তবে এটি মিং রাজবংশের সময়ও ছিল। সে সময় এটি সাম্রাজ্যের খাবার মেনুতে প্রধান স্থান করে নেয়। রাজবাড়ি থেকে এ খাবার পরে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এখন চীনের সব অভিজাত হোটেলেই পিকিং হাঁস পাওয়া যায়। চীনারা তো অবশ্যই সেদেশে ভ্রমণে গিয়েও যে কেউ একবার হলেও পিকিং হাঁসের স্বাদ গ্রহণ করতে ভুল করেন না।
জানা গেছে, ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই হাঁস, মুরগি, টার্কি, শুয়োর, হরিণ এবং গরুর মাংসের মতো অন্যান্য মাংসের সাথে হাঁসের মাংসও উপভোগ করতেন। তিনি একটি বিশাল এবং বিস্তৃত মেনুর খাবার খেতেন। প্রায়শই হাঁসসহ বিভিন্ন মাংসের রোস্ট এবং পাইসহ, শাকসবজি, স্যুপ এবং অন্যান্য খাবার তাকে পরিবেশন করা হত।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন রেসিপি এবং খাবারের তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট ডেলিশ গ্লোবের মতে, একটি ক্লাসিক ফরাসি খাবার হিসেবে হাঁস আল অরেঞ্জের রাজত্বকালে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আল অরেঞ্জ, অর্থাৎ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকালকে বোঝায়। ১৬৫৮ সালের ৩১ জুলাই থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত শাসন করেন আওরঙ্গজেব। তার রাজত্বকাল প্রায় ৪৯ বছর ধরে বিস্তৃত ছিল, যা মুঘল সাম্রাজ্যের দীর্ঘতম রাজত্বকাল হিসেবে পরিচিত। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব কী হাঁস খেতে পছন্দ করতেন, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না, কারণ তার খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেই এবং তার আত্মজীবনীতেও এই বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তবে, মুঘল আমলে হাঁসের মাংস অভিজাতদের খাবারে প্রচলিত ছিল, যা বিরিয়ানি, কালিয়া বা কোরমা রান্না করে পরিবেশন করা হত।
এছাড়া, ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়া হাঁসের মাংস খেয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণ করা হয়। তিনি বিভিন্ন ধরণের মাংস উপভোগ করতেন, যার মধ্যে শিকারী পাখিও ছিল। তবে হাঁসের মাংসের প্রতি তার বিশেষ অনুরাগ ছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
