বিলুপ্তি থেকে রক্ষা পেল চীনের মিলু হরিণ
ফিচার ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৮:২৭ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২৫ বৃহস্পতিবার
বিলুপ্তি থেকে রক্ষা পেল চীনের মিলু হরিণ
বেইজিংয়ের শহরতলির ইয়োংতিং নদীর তীরে আরামসে ঘাস খাচ্ছে মিলু হরিণের একটি দল। কাছাকাছি পানিতে তাদের ছানারা খেলছে। একসময় এই দৃশ্য প্রায় অসম্ভবই ছিল, কারণ মিলু হরিণকে চীনে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।
‘৪০ বছর আগে যুক্তরাজ্য থেকে ২২টি মিলু হরিণ চীনে ফেরত আনা হয়, যা এই প্রজাতিকে আবার ফিরিয়ে এনেছে। তখন থেকে কৃত্রিম প্রজনন এবং বনে ছাড়ার মাধ্যমে এ হরিণের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে।’ সম্প্রতি এমনটা জানালেন বেইজিং মিলু ইকোলজিকাল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক বাই চিয়াত্য।
মিলু হরিণ, পিয়ার ডেভিডস ডিয়ার নামেও পরিচিত। এটি চীনের স্থানীয় প্রজাতি। এদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য—ঘোড়ার মতো মুখ, গাধার মতো লেজ, গরুর মতো খুর এবং হরিণের মতো শিং। এ কারণে এদের ‘সিবুসিয়াং’ বা ‘চারটির মধ্যে কোনোটির মতো নয়’ নামে ডাকা হয়।
ছিং রাজবংশের শেষ দিকে (১৬৪৪–১৯১১) মিলু হরিণ ছিল বিরল। তবে ১৯ শতকের শেষের দিকে ইয়োংতিং নদীতে বন্যা হলে রাজবাড়ির প্রাচীর ভেঙে যায় ও হরিণরা পালানোর সুযোগ পায়। পরে অবশ্য ওরা স্থানীয়দের শিকার হয়ে যায়। ১৯০০ সালের দিকে চীনে এদের বিলুপ্তি ঘটে।
দীর্ঘ প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পর চীন যুক্তরাজ্য থেকে মিলু হরিণ ফিরিয়ে আনে। ১৯৮৫ সালের আগস্টে ছিল ৭৭টি মিলু হরিণ। তিন দফায় নানহাইচি এবং চিয়াংসু প্রদেশের ইয়ানছেং শহরে আনা হয়।
বেই জানালেন, ‘আমাদের লক্ষ্য মিলু হরিণের সংখ্যা বজায় রাখা, সুস্থ প্রজনন নিশ্চিত করা, জিনগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং বুনো পরিবেশে তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটানো।’
মিলু হরিণের সংরক্ষণে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি—যেমন রোগ নিয়ন্ত্রণ, প্রজনন এবং জিনগত গবেষণায় সফল হয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য মিলু হরিণের জন্য একটি জিনেটিক রিসোর্স ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বেই জানালেন, ‘মিলু হরিণকে বলা হয় জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রের প্রকৌশলী। তাদের স্বাভাবিক চলাফেরাতেই পরিবেশগত ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে থাকে। তারা জলে থাকা উদ্ভিদ যেমন শাক, আঠালো বর্ধন রোধে সাহায্য করে, এবং তাদের খড়মাট জলজ জীবের পুষ্টিও বৃদ্ধি করে। মিলু হরিণ যেন আদতে ‘আর্সগিনিয়ার’ হয়ে ওঠে আর্দ্রভূমির ইকোসিস্টেমের জন্য।’
চীন বর্তমানে ২৬টি প্রদেশীয় অঞ্চলে ৯৫টি মিলু হরিণ সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং জাতীয় মিলু সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
