নারী সাংবাদিকতার সংগ্রাম ও সম্ভাবনার দলিল
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:৩৮ এএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ সোমবার
বইয়ের প্রচ্ছদ
সংবাদ প্রকাশের পেছনের গল্প সাধারণত সংবাদ হয় না। আর নারী সাংবাদিকদের কর্মজীবনের লড়াই তো আরও বেশি আড়ালেই থেকে যায়।সেই নীরব বাস্তবতাকে সামনে এনে যে বইটি কথা বলেছে স্পষ্ট ও সাহসী ভাষায়, তার নাম ‘বাংলাদেশের নারী সাংবাদিক: অন্তরায় ও উত্তরণ’। বইটি যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন সাংবাদিক আইরীন নিয়াজী মান্না এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোমা দেব। এতে দেশের ৩৫ জন অভিজ্ঞ সাংবাদিক, সাংবাদিকতার শিক্ষক ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক তাঁদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি, অভিজ্ঞতা ও গবেষণালব্ধ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। ফলে বইটি হয়ে উঠেছে একাধিক কণ্ঠের সমবেত দলিল।
এ বইয়ের লেখক তালিকায় রয়েছেন, আফরোজা নাজনীন, আহমেদ মুশফিকা নাজনীন, আঞ্জুমান আরা, আলফা আরজু, ইয়াসমিন রীমা, ঈহিতা জলিল, ঝর্ণা মনি, দৌলত আকতার মালা, নাসিমুন আরা হক, নাদিরা কিরণ, নাজনীন নাহার, নুসরাত জাহান, পারভীন সুলতানা ঝুমা, প্রতীক ইজাজ, ফরিদা ইয়াসমিন, ফারহানা নীলা, মাহমুদা চৌধুরী, মাহফুজা জেসমিন, মাজেদুল হক তানভীর, মাহাসরুপা হাসান টবুন, বনশ্রী হালদার, রীতা ভৌমিক, রাশেদ মেহেদী, রীতা নাহার, সাজেদা পারভীন সাজু, স্বপ্না গুলশান, সজীব সরকার, মেহেনাজ হাসান, মো: জাহাঙ্গীর আলম, সালমা আফরোজ, স্মৃতি মন্ডল, শান্তা মারিয়া, শাহনাজ শারমিন, শাকেরা আরজু ও স্বপ্না বিশ্বাস।
ভেতরের গল্প, বাইরের কাঠামো:
এই গ্রন্থের প্রবন্ধগুলো পাঠ করলে বোঝা যায়—নারী সাংবাদিকদের অন্তরায় কেবল ব্যক্তিগত নয়; এটি একটি কাঠামোগত সমস্যা। নিউজরুমের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিট বণ্টন, মাঠপর্যায়ের রিপোর্টিং, নিরাপত্তা, এমনকি পদোন্নতির ক্ষেত্রেও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য কীভাবে কাজ করে—তা বিভিন্ন লেখায় ভিন্ন ভিন্ন কোণ থেকে উঠে এসেছে। এখানে আছে মাঠে কাজ করা সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা, আবার আছে শ্রেণিকক্ষ ও গবেষণাগারের বিশ্লেষণ। এই দ্বৈত দৃষ্টিভঙ্গিই বইটির বড় শক্তি।
অভিযোগ নয়, বিশ্লেষণ:
বইটি শুধু হতাশার বয়ান নয়। বরং প্রতিটি লেখায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে—কেন এই বৈষম্য টিকে আছে, কারা এর দায় বহন করবে এবং কীভাবে উত্তরণ সম্ভব। সামাজিক মানসিকতা, প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালা ও ক্ষমতার কাঠামো—সবকিছুকেই বিশ্লেষণের আওতায় আনা হয়েছে।
‘উত্তরণ’ মানে কী?:
শিরোনামের দ্বিতীয় অংশ—উত্তরণ—এখানে নিছক আশাবাদী শব্দ নয়। লেখকরা বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিয়েছেন—নিরাপদ কর্মপরিবেশ, জেন্ডার-সংবেদনশীল সম্পাদকীয় নীতি, নারী নেতৃত্ব তৈরি এবং সাংবাদিকতা শিক্ষায় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। ফলে বইটি কেবল সমস্যা চিহ্নিত করে না, সমাধানের ভাষাও নির্মাণ করে।
সম্পাদনার সংযম ও ভারসাম্য:
৩৫ জন লেখকের লেখা একত্র করা সহজ কাজ নয়। তবু সম্পাদকদ্বয় বিষয়গত ভারসাম্য ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছেন। ফলে বইটি বিচ্ছিন্ন প্রবন্ধের সংকলন নয়, বরং একটি সমন্বিত পাঠ।
কেন এই বই জরুরি:
‘বাংলাদেশের নারী সাংবাদিক: অন্তরায় ও উত্তরণ’ নারী সাংবাদিকদের জন্য যেমন আত্মপরিচয়ের আয়না, তেমনি গণমাধ্যম মালিক, সম্পাদক ও নীতিনির্ধারকদের জন্য আত্মসমালোচনার সুযোগ। সাংবাদিকতা শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বাস্তবতার পাঠ্যবই। এই বই মনে করিয়ে দেয়—সংবাদ যতটা নিরপেক্ষ হওয়ার দাবি করে, সংবাদ তৈরির কাঠামো ততটাই প্রশ্নবিদ্ধ। আর সেই প্রশ্ন তোলাই এই বইয়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য। ২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন দেশের স্বনামধন্য প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ। প্রকাশক সপ্তডিঙা। মূল্য: ৪০০ টাকা।
