শব্দদূষণের শাস্তি কি জেনে নিন
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:২৩ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার
শব্দদূষণকে চিহ্নিত করা হয় নীরব ঘাতক হিসেবে। যানবাহনের হর্ন,উচ্চ শব্দে গান ও মাইক বাজানো, কলকারখানার আওয়াজ, পাথর ভাঙ্গার যন্ত্রের শব্দ, মিক্সার যন্ত্রের শব্দ প্রভৃতির মাধ্যমে এই নীরব ঘাতক মানবদেহে প্রবেশ করে।
বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও এর আশেপাশের মানুষসহ দেশের জনবহুল নগরের বাসিন্দারা প্রতিনিয়তই কম-বেশি এই শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে। আমাদের দেশে শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো যানবাহনের হর্ন। সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনগুলো কোনো কারণ ছাড়াই হর্ন বাজিয়ে শব্দ দূষণের সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের জন্য শব্দের সহনীয় মাত্রা ৩৫ থেকে ৫০ ডেসিবেল। অন্যদিকে যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্নের শব্দ মানুষের জন্য সহনীয় এই শব্দের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। এই শব্দদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মূখীন হয় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। শব্দদূষণের ফলে অন্যান্যদের তুলনায় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের শ্রবণশক্তি হ্রাস পায় সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি এই নীরব ঘাতক মানবদেহে ছড়াচ্ছে নানা ধরণের রোগব্যধী। শ্রবণশক্তি হ্রাসসহ হৃদরোগ, আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, হজম শক্তি ব্যাহত এমনকি বধির হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা দেখা দেয় এই ঘাতকের কারণে।
১৯৯৭ সালে প্রণীত পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিমালায় নীরব এলাকায় দিনে এবং রাতে যথাক্রমে ৪০ ও ৩৫ ডেসিবেল শব্দের সীমা নির্ধারিত আছে। এছাড়া শব্দদূষণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। শব্দের এই নির্ধারিত মাত্রা ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নীরব এলাকায় দিনে ও রাতে যথাক্রমে ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনেও রাতে যথাক্রমে ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দের মাত্রা থাকতে হবে।
এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে নীরব এলাকা ধরা হয়। এই নির্ধারিত শব্দের বাইরে কেউ উচ্চ শব্দের প্রয়োগ ঘটালে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান আছে।পরবর্তী অপরাধের জন্য আছে ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ড।
তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এটাই যে,আমাদের দেশে শব্দদূষণের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও নেই আইনের প্রয়োগ।আর তাই যেখানে কলকারখানা নির্মাণের কথা লোকালয়ের বাইরে সেখানে নিয়ম-নীতির তুয়াক্কা না করেই কলকারখানা নির্মাণ চলছে লোকালয়ের অভ্যন্তরে। পারিবারিক অনুষ্ঠান ও বিশেষ দিনগুলোতে অনেক বাসা ও বাড়িতেই আনন্দের নামে জোরে গান বা মাইক বাজিয়ে প্রতিবেশিদের করা হচ্ছে হয়রানি।
আবাসিক এলাকায় মিক্সার মেশিনসহ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য মেশিন সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত চালানোর কথা থাকলেও তা চালানো হয় অনেক রাত অবধি। পাশাপাশি যানবাহনগুলো যত্রতত্র হাইড্রোলিক হর্নের অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে মানবদেহে প্রবেশ করাচ্ছে নীরব ঘাতক।