ঢাকা, বুধবার ২৪, এপ্রিল ২০২৪ ৫:৩৪:২৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

আগ্রাসনের শিকার শিশুদের স্মরণে দিবস

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১২:৪৪ এএম, ১৩ জুন ২০১৮ বুধবার

বিশ্বজুড়ে আজ সোমবার পালিত হচ্ছে আগ্রাসনের শিকার নির্দোষ শিশুদের স্মরণে একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক দিবস। বিশ্বে সংঘটিত বিভিন্ন ধরনের আগ্রাসন ও পীড়নের শিকার শিশুদের স্মরণ করতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এ বিশেষ আন্তর্জাতিক দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। আগ্রাসনের শিকার আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের সূচনা হয় ১৯৮২ সালে। সে বছর লিবিয়ার যুদ্ধে বৈরুতে ইসরায়েলের হানাদার বাহিনীর বিমান আক্রমণে লিবিয়া ও প্যালেস্টাইনের ৬০ জন নির্দোষ শিশু নিহত হওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করতে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা এ দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

 

এ দিনে সারা পৃথিবীতে যত শিশু-কিশোর যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসবাদী আগ্রাসনের শিকার হয়েছে তাদের সবাইকেই স্মরণ করা হয়। লিবিয়া ও প্যালেস্টাইনের ঘটনার পর আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা সারা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর বেসলানে সন্ত্রাসবাদীদের বন্দি হয়েছিল একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সন্ত্রাসবাদীরা সেখানে বর্বর হত্যাকান্ড চালায়। এখানেও অনেক হতাহত হয়।

 

পৃথিবীজুড়ে শিশু-কিশোররা নানা রকম আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। সাধারণত সামাজিকভাবে উন্নত নাগরিকরা প্রাথমিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে, যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ এবং হিংসা-বিদ্বেষ ও ধ্বংসাত্মক ঘটনাবলি থেকে শিশুদের যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখা হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর বিপরীত ঘটনাই ঘটে। 

 

 

এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশেই নিরীহ শিশুরা অনাহার, এইডস, অশিক্ষা ও যুদ্ধের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। গড়পড়তা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কম উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের মর্মান্তিক সমস্যার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেশি। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সংঘটিত যুদ্ধ ও ধ্বংসাত্মক ঘটনাগুলোতে নানাভাবে শিশুদের জড়িয়ে ফেলতে দেখা যাচ্ছে।

 

জাতিসংঘের প্রকাশিত এক তথ্য বলছে, উন্নয়নমুখী দেশগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার শিশু অনাহারে মারা যাচ্ছে। তাছাড়া এইডস রোগের বিস্তারও অসংখ্য শিশুর ক্ষতি করছে। জাতিসংঘের দেয়া বিভিন্ন জরিপে জানানো সারা বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি শিশু যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদীদের আগ্রাসনের শিকার। তারা শুধু গৃহহীনই নয় তারা বসবাস করছে অন্য আরেকটি দেশে। নিজ দেশ তাদের জন্য নিরাপদ নয়।এই সব শিশুদের কোন না কোন সময় নির্যাতন করা হয়েছে যে কোন ভাবে।তাদের মধ্যে ১ কোটির বেশী শিশু রয়েছে যাদের বয়স ১৮ বছরের নীচে। এরা অন্যত্র বাস করছে এবং এর মূল কারণ হল যুদ্ধ। এসব বিভিন্ন যুদ্ধে মারা গেছে আরো ২ কোটি শিশু। ৬০ লক্ষ শিশু গুরুতর আহত হয়েছে এবং প্রায় ১০ লক্ষ হয়েছে বাবা-মা হারা।

 


বিশ্বের প্রায় ৮৭ টি দেশের শিশুরা বসবাস করছে ৬ কোটি স্থল মাইনের মধ্যে। প্রতি বছর অন্তত ১০ হাজার শিশু শিকার হচ্ছে এসব স্থল মাইনের। ৩ লক্ষ মেয়ে যাদের বয়স ১০ বছরের নীচে তাদের জোর করে শিশু সৈন্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বয়স একটু বাড়লেই তাদের জোর করে পাঠানো হচ্ছে পতিতালয়ে। এইডসের মতো প্রাণঘাতী রোগও শিশুদের অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এটা সেই ধরণের সমস্যাগুলি অন্যতম যার জন্য শিশুরা কোন ভাবেই দায়ী নয়। সারা বিশ্বে এইডসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে প্রায় ৪০ লক্ষ শিশু। অন্তত ১৫ লক্ষ শিশু বাবা-মা হারিয়েছে । অশঙ্কা করা হচ্ছে, সারা বিশ্বে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলিতে যত শিশু রয়েছে তার অর্ধেকই ১৫ বছর বয়স পার হওয়ার আগেই মারা যাবে এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে। আধুনিক বিশ্বের শিশু পরিস্থিতিও খুব ভাল তা বলা যাচ্ছে না। পশ্চিম ইউরোপের অন্তত ২০ হাজার শিশু প্রতি বছর একাই বেড়ে ওঠে। তাদের আশে পাশে থাকে না তাদের বাবা কিংবা মা। অবিভাবকহীনতাও শিশুদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়ার একটি জটিল সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে চলছে। উন্নয়নশীল বিশ্বে এই সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাষ্ট্রসংঘ, সরকার ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংঘঠনগুলো এ সমস্যার মুখোমুখি হতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। তবে কিছু প্রশংসনীয় কাজও তারা করে চলছে নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও। আফ্রিকার গ্রেট লেকস অঞ্চলে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬৭ হাজার শিশুকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই দূরহ কাজটি করে প্রশংসীত হয়েছে।


তারপরও ধর্ষণ থেকে শুরু করে শিশু শ্রম, গৃহ কর্মী হিসাবে নির্যাতন, খুন, অপহরণ, পাচার ইত্যাদি চলছেই আমাদের দেশে। আশা করা হয়, বিশেষ এই দিবসকে কেন্দ্র করে সকল দেশের সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসবে। শিশুদের সকল অধিকার বাস্তবায়নের জন্য সন্মিলিত পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। আর এজন্য আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। শিশু শ্রম, শিশু নির্যাতন, শিশু পাচার এবং যুদ্ধকালীন সময়ে শিশুদের অপব্যবহারের পথ বন্ধ করে দিতে হবে চিরতরে।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কন্যা শিশুদের প্রতি অবহেলা, অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া, অপহরণ করে অন্যত্র পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। জোরপূর্বক পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়াসহ কন্যা শিশুদের উপর নানামুখী আগ্রাসন চলে আসছে। আফ্রিকার দেশগুলোতে শিশুদের হাতে বই-খাতা-কলমের পরিবর্তে গোলা-বারুদ তুলে দেওয়া প্রচলিত রীতি হয়ে দাড়িয়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়।

 

সব প্রতিকূল অবস্থা থেকে শিশুদের মুক্ত করাই এই দিবসটির অন্যতম প্রতিপাদ্য বিষয়। প্রতিবছরের মত এবারও আশা করা হচ্ছে, আগ্রাসনের শিকার নিরপরাধ শিশুদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবসকে কেন্দ্র করে সব দেশের সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এগিয়ে আসবে। শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে তাদের কথা রক্ষা করতে হবে। শিশুশ্রম, শিশু নির্যাতন, শিশু পাচার এবং যুদ্ধকালীন সময়ে শিশুদের অপব্যবহারের পথ বন্ধ করে দিতে হবে চিরতরে। শিশুশ্রম, শিশু নির্যাতন, শিশু পাচার, শিশুযুদ্ধ বন্ধ করো, কেবল এসব স্লোগান দিয়ে এগিয়ে গেলেই হবে না, এ ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

 

আশা করা হয়, বিশেষ এই দিবসকে কেন্দ্র করে সকল দেশের সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসবে। ১৯৮২ সালে লিবিয়ার যুদ্ধে বেইরুটে ইজরায়েলের হানাদার বিমান আক্রমণে লিবিয়া ও প্যালেস্টাইনের ৬০ টি নির্দোষ শিশুর নিহত হওয়ার ঘটনার স্মরণে রাষ্ট্রসংঘের সাধারন সভা এই দিনটি কে আন্তর্জাতিক ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। লিবিয়া ও প্যালেস্টাইনের ঘটনার পর আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা সারা পৃথিবীকে নড়িয়ে দিয়েছিল। ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বরে বেসলানে সন্ত্রসবাদীদের বন্দী হয়েছিল একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অবিভাবকরা। সন্ত্রসবাদীরা সেখানে বর্বর হত্যাকান্ড চালায়। ফলে মৃত্যু হয়েছিল কম করে হলেও ৩৩০ জন মানুষের। যাদের মধ্যে ছিল ১৭২ জন ছাত্র-ছাত্রী।

 


সম্প্রতি নাইজেরিয়ার তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোকো হারামের হাতে অপহৃত হয় প্রায় ৩০০ ছাত্রী যার প্রায় সকলেই বোকো হারামের নির্মমতার শিকার। গত ১৪ এপ্রিল উত্তর নাইজেরিয়ার একটি বোর্ডিং থেকে তাদের অপহরণ করে বোকো হারামের সশস্ত্র জঙ্গিরা।

 

 


আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের প্রতি আমাদের সকলের যত্নশীল হতে হবে। আগ্রাসনের শিকার নিরীহ শিশু বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবসে আশা করি, শিশুদের সকল অধিকার বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বের সকল দেশের সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এগিয়ে আসবে। সাথে আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে শিশুদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে চেষ্টা করি।