ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৩৪:৫৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

আমিনালীর গল্প

লুৎফর রহমান রিটন | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৯:২৯ পিএম, ২ মে ২০১৮ বুধবার

আমিন আলী নামের এক কিশোরের গল্প লিখেছিলাম একটি ছড়ায়। ছড়াটা কোনো পত্রিকায় ছাপা হয়নি। সরাসরি বইতে অন্তর্ভূক্ত করেছিলাম। বইয়ের নাম `রিটন গেলো পালিয়ে`। প্রকাশক ছিলো মিলন নামের এক তরুণ, যার প্রকাশনীর নাম `শিকড়`। বইটি বেরিয়েছিলো ২০০১ সালের বইমেলায়।

 

বইটির প্রচ্ছদ আর অলঙ্করণ করেছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী রফিকুন নবী। বইটির ছাপা বাঁধাই সব কিছুই পরিপাটি ছিলো। দৃষ্টিনন্দন বইটার দাম ছিলো মাত্র পঞ্চাশ টাকা। এই বইটি প্রকাশিত হবার কয়েক মাস পরেই আমি দেশান্তরি হয়েছিলাম। আজ সকালে বইয়ের র্যা ক থেকে বইটা টেনে নিয়ে ঊনিশ বছর আগে লেখা কিছু ছড়া পাঠ করে মনে হলো বাজারে আর পাওয়া না যাওয়া এ বই থেকে পাঠক বন্ধুদের উদ্দেশে একটি দুটি ছড়া আপলোড করা যেতেই পারে।

 


`আমিনালীর গল্প` সেই পরিকল্পনার প্রথম প্রয়াস। সিরিয়ালি চারটি পাতা ধারাবাহিক ভাবে পড়লে তবেই পড়া হবে `আমিনালীর গল্প`টি। তবে আমার চাইতে বয়েসী বন্ধুদের চোখের চাপ কমাতে অকহতব্য আলস্য ঝেড়ে ছড়াটা শেষমেশ কম্পোজই করে ফেললাম!


আমিনালীর গল্প
লুৎফর রহমান রিটন
কোন অভিমানে মা-টা মরে গেলো জানে না তা আমিনালী
এতোটুকু ছেলে মাকে খোঁজে আর কাঁদে বসে খালি খালি।
মায়ের ছবিটা খুঁজে হয়রান আমিনালী ভীতু হাবা
সে কি ভুলে গেছে মায়ের সঙ্গে ছবিও তোলেনি বাবা!
সে কি ভুলে গেছে প্রতিদিনই বাবা কী ভাবে পেটাতো মাকে?
আমিনালী রাতে কান্না শুনতো ঘুমানোর ফাঁকে ফাঁকে।
আমিনালী কতো জানতে চেয়েছে--`ক্যান্‌ বাবা এতো মারে?
খালি কান্দো ক্যা? তুমি ক্যান্‌ মাগো কিচ্ছু কও না তারে?
এমুন বাবার দরকার নাই, কী হয় পলায়া গেলে?`
কিন্তু দুখিনী যেতে চাইতো না এই সংসার ফেলে!
সেদিন বিকেলে কী যে হলো মা-র! সাজলো মা নিজে নিজে
`মা তুমি দ্যাখতে পরীর লাহান` আমিনালী খুশি কী যে!
পরীর মতোন রূপসী মায়ের কোলে শুয়ে আমিনালী
নিরবে গোপনে রাগী বাবাটাকে খুব করে দিলো গালি--
`বাবায় একটা জানোয়ার, মাগো আমি ভালোবাসি তরে
তরে আমি আর থাকতে দিমু না জানোয়ারডার ঘরে।
চল্‌ মাগো চল্‌ শহরে যাইগা, পলায়া যাইগা, যাবি?
শহরত গেলে গারমেন্ট আছে চাকরি মা তুই পাবি।
আর এই ফাঁকে আমি বড় হমু, বড় হওনের পরে--
জানোয়ারডার ঠ্যাং ভাঙি দিমু--ইমুন পিডামু অরে...!`
শুনে মা-টা ওর মুখ চেপে ধরে--`এ-কথা কওন পাপ
তাঁর পদতলে তোমার বেহেশত, তিনি যে তোমার বাপ!`
`দোজখ-বেহেশত কিচ্ছু বুঝি না, আমার মায়েরে মারে!
বড় হয়া লই বুঝামু নে মজা, আমি ছাড়মু না তারে।`
কেঁদে ওঠে মা-টা, মায়ের আদরে আমিনালী কেঁদে ওঠে
মাতা-পুত্রের অশ্রুতে যেনো হাজারো বকুল ফোটে!
বাড়ি ফিরে বাবা অভ্যাস মতো শুধু গজরাতে থাকে--
আমিনালী ভয়ে বিছানায় কাঁপে--কখন পেটাবে মা-কে?
`কী বিষয় এতো সাজন কিসের?` হুংকার ছাড়ে বাবা
`কতো ধানে কতো চাইল হয় সেটা আইজ তুমি টের পাবা,
হারামজাদীর সাজনের শখ--আর আমি খাঁইট্টা মরি!`
ক্ষতবিক্ষত মা-টা তবু বলে--`আপনের পায়ে পড়ি--
আইজকা আমারে মাফ করি দ্যান ওগো পরাণের স্বামী
কাইল থিকা যতো খুশি পিডায়েন, কিচ্ছু কমু না আমি।
মনে নাই বুঝি? আইজকার রাতে আমিনালী আইছিলো!
আল্লাতায়ালা এই সংসারে সোনারে পাডায়া দিলো...
আসেন নামাজে রহমত চাই আল্লার দরবারে।`
জানোয়ার শোনে মানুষের কথা? পুনরায় মা-কে মারে...!
এরকম মার কতো খেয়েছে মা! কপালে লিখন থাকে
আমিনালী ফের কান্না শুনলো ঘুমানোর ফাঁকে ফাঁকে।
রাত শেষ হয় সুবহে সাদিকের আজানের ধ্বনি ভাসে
ঘুম ভেঙে গেলে আমিনালী দেখে রূপসী মা নেই পাশে!
আস্‌সালাতু খাইরুম্মিনান নাউম উচ্চারণে
ভয়াবহ এক শিহরণ জাগে আমিনালীটার মনে!
মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে কি কোনো কান্না লুকিয়ে আছে?
আমিনালী দেখে দুখিনী মা তার ঝুলছে বকুল গাছে!
আস্‌সালাতু খাইরুম্মিনান নাউম আস্‌সালাতু
খুদে আমিনালী মাতম করছে আল্লাহু আল্লাহু...!

অটোয়া ২১ এপ্রিল ২০১৮

(লুৎফর রহমান রিটনের ফেসবুক থেকে)