ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ১০:০৩:৩১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

ওরিয়ানা ফালাচি ও আজকের নারীমুক্তি

ফারহানা মিলি | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০১:৫০ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার

ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাচিকে অত্যন্ত বিতর্কিত এক মানুষ হিসেবে জানে বিশ্ব। রাষ্ট্রনায়কদের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তাদের খুঁচিয়ে বিব্রত করতেন। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি যেটি পরে ইতালীয় এক কাগজে ছাপা হয়। সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে তুলে ধরেছেন এই সাংবাদিক তা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। আজ সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। শেষ বয়সে ওরিয়ানা শ্বেতাঙ্গ-আধিপত্যবাদে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন বলে জেনেছি তার মৃত্যুর পর।


ব্যক্তি হিসেবে নানা ক্ষুদ্রতার বিষয়গুলো বাদ দিলে, একজন নারী হিসেবে ষাট ও সত্তরের দশকে সাংবাদিকতার জগতে তার দক্ষতার বিষয়টি আমাকে আকৃষ্ট করেছিল কৈশোরে। প্রায় ৩৩ বছর আগে, তখনকার সাপ্তাহিক ‘রোববার’-এ ওরিয়ানার নেওয়া কয়েকটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল। নেটবিহীন সে জমানায় ওরিয়ানার সঙ্গে পরিচয় সেভাবেই প্রথম। “ইন্টারভিউ উইথ হিস্ট্রি: বইতে সেসব সাক্ষাৎকার রয়েছে। আমি কেবল স্মৃতি থেকে একটি সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে লিখছি।
সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন একসময়কার দোর্দণ্ডপ্রতাপ ইরানি নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের উদগাতা খোমেনি রাজনৈতিক রশি-টানাটানি করেন যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে প্রায় একাই। তাকেও ছাড়েননি ওরিয়ানা। ইদানিং বোরকা-পর্দা নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে আমার মনে পড়ে ইরানি-স্টাইল পর্দা তথা চাদর নিয়ে খোমেনির সঙ্গে ওরিয়ানার কথোপকথন।


ওরিয়ানার ভাষায়, খোমেনি চোখ তুলে তাকাচ্ছিলেন না তার দিকে, তবে যে দুয়েকবার তাকিয়েছিলেন তাতে খোমেনিকে নারীদের বিষয়ে খুব অনাগ্রহী মনে হয়নি। ওরিয়ানা তাকে জিজ্ঞাস করেই ফেলেন (জিজ্ঞাস নয়, আক্রমণ বলা যায়), কেন এই বড়সড় চাদরটি তাকে পরে রাখতে হবে। পশ্চিমা নারী হলেও ইরানের রীতি মেনে তাকে চাদর পরে সেদেশে ঘুরতে হচ্ছিল। খোমেনি দুষ্টুমিভরা উত্তর দিয়েছিলেন, “আপনি না চাইলে না পরলেও পারেন। এটা সুন্দরী এবং তরুণীদের জন্য”।


ইতালিয়ানরা সৌন্দর্যের জন্য সুখ্যাত। ওরিয়ানাও যথেষ্ট সুন্দরী, কেবল বয়সে তখন তিনি তরুণী নন। উত্তপ্ত হয়ে তিনি বলে বসলেন, “আপনি আমাকে সুন্দরী মনে করছেন না? জানেন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময আমি যখন তরুণী ছিলাম, তখন…”।


খোমেনির আরও দুষ্টুমিভরা উত্তর ছিল, “আপনি কী করেছেন সে আপনিই জানেন..:”।


তখনই ফুঁসে উঠে ওরিয়ানা খুলে ফেলেন তার চাদর... “ঠিক আছে, খুলে ফেললাম এই মধ্যযুগীয় পোশাক.. আমি আর এদেশে এটা পরব না...”।


এবার রেগে গিয়ে খোমেনি উঠে চলে গেলেন। ওরিয়ানা তবু অপেক্ষা করছিলেন। খানিক বাদে ইরানের তখনকার প্রেসিডেন্ট বনি সাদর এসে জানালেন, ওরিয়ানা চাদর না পরলে খোমেনি আর সাক্ষাৎকার দিতে রাজি নন, উনি বরং চলে যেতে পারেন। একরোখা ওরিয়ানাও জানালেন, তিনি আর ওটি পরবেন না।


ওরিয়ানা আর খোমেনির সাক্ষাৎকারের এই বাক-বিতণ্ডার বিষয়টি মনে পড়ল আমাদের বিনোদন জগতের নক্ষত্র মোশাররফ করিমের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও তা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে। ইসলামিক পর্দা প্রসঙ্গে একজন ব্যক্তি যা-ই বলুন না কেন, তা তার ব্যক্তিগত মত, তাতে অনুভূতি আহত হয়ে যাওয়ার যেসব মধ্যযুগীয় কায়দা-কানুন চলছে এখন তা থেকে মুক্তির আর উপায় দেখি না.... অসহায় বোধ করি...।


প্রবল প্রতাপশালী খোমেনির মুখের ওপর পর্দা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলার পরও ওরিয়ানা প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন। ইরানের মোল্লাতন্ত্র অত্যন্ত শিক্ষিত বলে সেখানে প্রশ্ন তোলার ও দ্বিমত করার সুযোগ খানিকটা আছে বা ছিল। কিন্তু আমরা যে অশিক্ষিত মোল্লাতন্ত্রের জিম্মায় দেশটাকে দিয়ে দিচ্ছি তার পরিণতি বুঝতে মনে হয নভোবিজ্ঞানী হতে হবে না।

ফারহানা মিলি : সিনিয়র সাংবাদিক