ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ৩:০৮:১৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

গর্বে আমাদের মাথা আকাশ ছুঁয়ে যায়: ঝর্ণা মনি

ঝর্ণা মনি | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৪২ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৯ শুক্রবার

ঝর্ণা মনি

ঝর্ণা মনি

‘কে আছেন?
দয়া করে আকাশকে একটু বলেন -
সে সামান্য উপরে উঠুক,
আমি দাঁড়াতে পারছি না।’

‘রাখালের বাঁশি’ শিরোনামে কবিতায় বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এমনটাই বলেছিলেন যৌবনের কবি হেলাল হাফিজ। একটি ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিকামী সাড়ে সাত কোটি পরাধীন বাঙালিকে বন্দিত্বের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র শুনিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। নিরস্ত্র বাঙালিকে করেছিলেন সশস্ত্র। বিশ্বের দুর্ধর্ষ প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনার নেতৃত্ব, সাহস, উদ্দীপক এবং প্রেরণার নাম বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে দিয়েছেন লাল-সবুজ পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ভূ-খন্ড। স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ। বিশ্বের বুকে বীরের জাতির নাম।

পাকিস্তানের পোড়ামাটির নীতির কারণে মৃত্যু উপত্যকা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যাণ্ড বানানোর স্বপ্ন ছিল জাতির পিতার। স্বপ্ন ছিল অসাম্প্রদায়িক-ধর্ম নিরপেক্ষ-জঙ্গিবাদ মুক্ত-ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সুজলা সুফলা বাংলাদেশের। মাত্র সাড়ে চার বছরের মধ্যেই দেশি-বিদেশি একদল ষড়যন্ত্রকারীর বুটের তলায় পিষ্ট হয় সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন। ১৮ টি বুলেটে ঝাঁঝরা নিথর দেহ লুটিয়ে পড়ে সিঁড়িতে। লুটিয়ে পড়ে অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশ। শুরু হয় উল্টো চলা নীতি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র- হারিয়ে যায় সংবিধান থেকে।

বাঙালি হৃদয় থেকে চিরতরে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিতে জারি করা কুখ্যাত ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ। পুরস্কৃত হয় খুনীরা। বন্দুকের ডগায় চলে ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব। এভাবেই কেটে যায় সুদীর্ঘ ২১ বছর। কিন্তু ২১ বছর যে বড় দু:সহ। বাঙালি ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় প্রান্তরে কোটি কোটি তুফান, টাইফুন আর টর্ণেডো প্রবল বেগে ছুটে। পদাঘাতে ভাঙতে চায় বাধার বিন্দ্যাচল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাতিল করা হয় ইনডেমিনিট আইন। অর্গল খুলে বিচার বন্ধের সংস্কৃতির। দীর্ঘদিনের বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি জাতির বুক থেকে নামে এক জগদ্দল পাথর। ললাটে লেপ্টে থাকা পিতৃহত্যার কলঙ্কচিহ্ন থেকে মুক্তি পায় জাতি। ফাঁসি কার্যকর পাঁচ খুনীদের। কফিনবন্দি থেকে বেরিয়ে এসে স্বমহিমায় জাতির হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হন জাতির পিতা। ইতিহাসের মহানায়কের প্রত্যাবর্তনে প্রাণ ফিরে পায় বাঙালি। আবার স্বপ্ন দেখে সোনার বাংলা গড়ার।

আজ শুধু বাঙালির বন্ধুই নন, শিগগিরই বিশ্ব বন্ধু হতে যাচ্ছেন বাঙালির জাতির পিতা। বিশ্বের শোষিত প্রাণের প্রতিধ্বনি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ফ্রেন্ড অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ বা ‘বিশ্ব বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় জাতিসংঘে কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধি, কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, নিউইয়র্কস্থ যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার মানবাধিকার কর্মী, লেখক, চলচিত্র শিল্পী, টিভি উপস্থাপক, ফটোগ্রাফার এবং প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা। এতে বক্তারা বঙ্গবন্ধুকে ওইসময়ের বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা এবং বিশ্ব মানবতার মুক্তির প্রতিভূ ও বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তারা বলেন, বিশ্বের বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার সংগ্রাম ও ত্যাগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে। জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে পরিচিতি করা, বহুপাক্ষিকতাবাদকে এগিয়ে নেয়াসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বনেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু অবদান তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকে ‘ফ্রেন্ড অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ বা ‘বিশ্ব বন্ধু’ আখ্যা দেন জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল, রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী। সার্বিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি মিলান মিলানোভিচ্ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভিকা দাচ্চির বাণী পড়ে শোনান। এ বাণীতে সার্বিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রনায়ক জোসেফ ব্রোজো টিটোর বন্ধুত্ব ও গভীর সম্পর্ক তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত উক্তি ‘বাংলার মানুষের প্রতি ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি, আর আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতাও এটা যে আমি তাদের অনেক বেশি ভালোবাসি’ উল্লেখ করেন। কিউবার রাষ্ট্রদূত আনা সিলভিয়া রদ্রিগেজ নির্যাতিতের পক্ষে ও মানবাধিকারের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব, প্রচেষ্টা ও সাহসের কথা তুলে ধরে ১৯৭৩ সালে কিউবার মহান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর বিখ্যাত উদ্বৃতি ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি, তাই হিমালয় দেখার সাধ আর আমার নেই’ উল্লেখ করেন।

খুনীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, হত্যা করতে পারেনি তার আদর্শ, তার মহৎ চিন্তা, তার সুবিশাল কর্মযজ্ঞ। জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে হাজার গুণ শক্তিশালী আজ বঙ্গবন্ধুর দর্শন। একজন পিতা, একজন নেতা, একজন অভিভাবক, যিনি এতদিন বাঙালি জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন দুর্গম মরু কান্তার গিরি পেরিয়ে কাঙ্খিত লক্ষে এগিয়ে যাবার, তিনি আজ বিশ্বের পথপ্রদর্শক। জাতির পিতার গর্বে গর্বিত বাঙালির মাথা আজ আকাশ ছুঁয়ে যায়।

ঝর্ণা মনি: সিনিয়র রিপোর্টার, ভোরের কাগজ। সাবেক নারীবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি।