ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ১:১৮:৫৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

জেলে পাখি নীল মাছরাঙা

আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১২:০৫ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ছবি : সোমা দেব

ছবি : সোমা দেব

ঝুপ্ ঝুপ্ দেয় ডুব/নীল মাছরাঙায়,/জল থেকে মাছ তুলে/উড়ে যায় ডাঙায়।

 

মাছরাঙা আমাদের অতি পরিচিত পাখি। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পাখিগুলোর মধ্যে অন্যতম মাছরাঙা। ওর শরীরের বিভিন্ন রঙের বাহার আর আকর্ষণীয় চঞ্চল চলাফেরা পাখিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে। জলের দিকে তাকিয়ে গাছের ডালে কিংবা বাঁশের মাথায় যখন শিকারের আশায় চুপ করে বসে থাকে তখন দূর থেকে দেখে মনে হয় শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা কোনো শিল্পকর্ম।

 

ঢাকা শহরের কোলাহলমুখর পরিবেশ থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খাল-বিল, নদী-নালা ও পুকুরসহ সব জায়গাতেই মাছরাঙা ঘুড়ে বেড়ায় মনের আনন্দে। নির্জন দুপুরে পুকুর বা জলাশয়ের আশপাশে বাঁশের খুঁটির ওপর কিংবা ঝুলন্ত তারের ওপর ঘাপটি মেরে বসে থাকে মাছের অপেক্ষায়। চুপ করে বসে সজাগ দৃষ্টি রাখে পানির ওপর।

 

আমাদের দেশে মোট ১১ প্রজাতির মাছরাঙা দেখা যায়। এদের মধ্যে পাকরা মাছরাঙা, কালো মাথা মাছরাঙা, সাদা বুক মাছরাঙা, সবুজ মাছরাঙা, লাল মাছরাঙা এবং নীল বা ছোট মাছরাঙা পাখিকে দেশের সর্বত্রই বিচরণ করতে দেখা যায়। তবে লাল মাছরাঙা দেখা যায় শুধু সুন্দরবনে। এই ১১ প্রজাতির মাছরাঙার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে ছোট বা নীল মাছরাঙা।

 

অন্যান্য মাছরাঙার চেয়ে আকারে প্রায় অর্ধেক এই নীল মাছরাঙার পিঠের রঙ উজ্জ্বল নীল। দূর থেকে দেখলে মনে হয় ওর গায়ে কেউ শিল্পীর ক্যানভাসের নীল রঙ ঢেলে দিয়েছে। মাথার পালকের রঙও নীল। ডানাগুলো গাঢ় নীল তাতে আবার হালকা আভা আছে। ডানার নীলের সঙ্গে রয়েছে সবুজের ছোঁয়া। গলার কিছু অংশ সাদা। কানের পাশেও সামান্য সাদা পালক রয়েছে। চোখের চারপাশে হালকা খয়েরি। গলার পর থেকে লেজের আগা পর্যন্ত বুক ও পেট কমলা-খয়েরি। লম্বা সুচালো চঞ্চুর রঙ কালো। পা লাল। ছোটখাটো গোলগাল শরীর। লেজ প্রায় নেই বললেই চলে। হঠাৎ দেখলে মনে হয় কোনো দুষ্ট ছেলে লেজটি ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। এই পাখির শরীরে নীলের এতো বাহার, তাই ওকে নীল মাছরাঙা বলে ডাকাই ভালো।

 

নীল মাছরাঙার ইংরেজি নাম Common Kingfisher (কমন কিং ফিশার বা স্মল কিং ফিশার) আর বৈজ্ঞানিক নাম Alcedo atthis (আলসেডো অ্যাটফিস)। গোত্র আশসেডিনিদি।

 

নীল মাছরাঙা একা কিংবা একজোড়া এক জায়গায় বসবাস করে। মাছরাঙা খাদ্য সংগ্রহের ব্যাপারে একটা নির্দিষ্ট নীতি মেনে চলে। ওরা খাদ্য সংগ্রহের জন্য নিজের নিজের নির্দিষ্ট এলাকা ঠিক করে নেয়। সেখানে অন্য মাছরাঙার প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। এই পাখির শিকার ধরার স্টাইলটিও বেশ অদ্ভুত। পানির ওপর ঝুঁকে পড়া কোনো চিকন ডাল বা পানিতে পুঁতে রাখা বাঁশ-খুঁটির ওপর বসে নিচে মাছের গতিবিধির দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখে। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন ধ্যানমগ্ন ঋষি। তাক সই হলেই ঋষির ধ্যান ভেঙে যায়। ঝুপ করে তীব্র গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছটিকে ধরে ফেলে। মাছ আকারে বড় হলে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে গাছের ডালের ওপর আছরে মারে। তারপর গিলে ফেলে। এই পাখি কখনো কখনো পানির ২/৩ মিটার ওপরে এক জায়গায় ডানা নাড়িয়ে শূন্যে ভেসে থেকে শিকারকে লক্ষ্য করে। নীল মাছরাঙা চিচি-চিচি-চিচি শব্দে জলাশয়ের ধার ধরে উড়ে চলে। ওদের প্রিয় খাবার ছোট মাছ, জলজ পোকা-মাকড় এবং ব্যাঙাচি।

 

বর্ষা আসার ঠিক আগে আগে নীল মাছরাঙা ডিম পাড়ে। পুকুরের পাড়ে বা খাড়া মাটির পাড়ে এক ফুট দীর্ঘ গর্ত করে ওরা বাসা তৈরি করে। গর্তের শেষ প্রান্তটি প্রশস্ত হয়। এ বাসায় নীল মাছরাঙা ৫ থেকে ৬টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ সাদা। বাসা তৈরি থেকে বাচ্চার যতœ নেয়া পর্যন্ত সব কাজই বাবা-মা মিলে করে।

 

আমাদের চারপাশের খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাধারে বিচরণ করে বেড়ায় নীল মাছরাঙা। কিন্তু ইদানীং অবাধে গাছ কাটা এবং জলাভূমি ভরাট করে ফেলার কারণে এই স্বাধীন পাখিটির ভবিষ্যৎ মারাত্নক হুমকির মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া দুরন্ত ছেলেরা মাছরাঙার বাসা থেকে ডিম চুরি করে তা ধ্বংস করে ফেলে। ফলে দিনে দিনে আমাদের চারপাশে অবাধে বিচরণ করা এই অদ্ভুত সুন্দর পাখিটির বিভিন্ন প্রজাতি কমে যাচ্ছে। এমন অমানবিক নির্যাতন চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অন্য অনেক পাখির মতো মাছরাঙাও আমাদের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে।