পৌষ সংক্রান্তি: পুরান ঢাকায় চলছে সাকরাইন উৎসব
নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০২:৪৮ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার
ছবি: সংগৃহীত
পঞ্জিকামতে বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন উদযাপন করা হয় পৌষসংক্রান্তি। বর্তমানে ‘পৌষসংক্রান্তি’ শুধু ‘সংক্রান্তি’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে, আর পুরান ঢাকার মানুষ একে বলে ‘সাকরাইন’। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ‘সাকরাইন’ উৎসবে পৌষসংক্রান্তি ও মাঘ মাসের শুরুর দিনটিতে আগুন নিয়ে খেলা ও আতশবাজির মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম প্রহর। সেই হিসেবে আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে পুরান ঢাকার বাড়িতে বাড়িতে সাকরাইন উৎসব উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানো ছাড়াও থাকবে নানা আয়োজন।
ছোট বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে থাকে প্রতিটি বাড়ির ছাদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে আকাশে ঘুড়ির সংখ্যা ও উৎসবের মুখরতা। সাকরাইন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় পুরান ঢাকার নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবারের। সাকরাইন উপলক্ষে পুরান ঢাকার আকাশে শোভা পায় নানা রঙ আর বাহারি আকৃতির ঘুড়ি। এছাড়াও আগুন নিয়ে খেলা, আতশবাজি ফোটানো এই উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। তবে, সকালের তুলনায় বিকেলে এই উৎসব বেশি মুখরিত হয়। সাকরাইন উৎসবকে পৌষসংক্রান্তি বা ঘুড়ি উৎসবও বলা হয়। এই উৎসবে অংশ নেন সব ধর্ম, পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
সাকরাইনের আদি কথা
ঢাকায় পৌষসংক্রান্তির এই দিনকে বলা হয় সাকরাইন। ঢাকাই ভাষায় ‘হাকরাইন’। আদি ঢাকাই লোকদের পিঠাপুলি খাবার উপলক্ষ আর সাথে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতার দিন। সাকরাইন একান্তই ঢাকার, যুগের পরিক্রমায় তাদের নিজস্ব উৎসব। এটা বাংলাদেশের কোথাও পালিত হয় না। যা ঢাকার জনপ্রিয় ও দীর্ঘ সাংস্কৃতিক চর্চার ফল।
সাকরাইন শব্দটি সংস্কৃত শব্দ সংক্রাণ থেকে এসেছে। আভিধানিক অর্থ : বিশেষ মুহূর্ত। অর্থাৎ বিশেষ মুহূর্তকে সামনে রেখে যে উৎসব পালিত হয় তাকেই বলা হয় সাকরাইন। এই সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক দেশেই এই উৎসব পালন করে। তবে ভিন্ন ভিন্ন নামে। এই উৎসবের দুটো দিক আছে। একটি ধর্মীয় অপরটি সাংস্কৃতিক।
সংক্রান্তির এই উদযাপন কবে থেকে চলে আসছে তা সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। হতে পারে হাজার বা তারও আগের পুরনো এ মকর সংক্রান্তির মহাতিথি।
মকর সংক্রান্তি বা পৌষ মাসের শেষ দিন হিন্দু জমিদারেরা তাদের জমিদারিতে ব্রাহ্মণ ও প্রজাদের আতিথেয়তা দেন। উন্মুক্ত মাঠে ভোজ উৎসব হয়। বিতরণ করা হয় চাল, গুড়, তেলের তৈরি পিঠা ও ডাবের পানি। এটি বাস্তু পূজা নামে পরিচিত। এই উপলক্ষে বিক্রমপুরে কুস্তি, লম্বদান ইত্যাদি প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এই হলো সংক্রান্তির ধর্মীয় দিক।
সাকরাইন ঢাকার বিশেষ ঘুড়ি উৎসব। আদিকাল থেকেই এই শহরের মানুষ ঘুড়িবাজ হিসেবে পরিচিত। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। এখানে ঘুড়ি উড়ানোর পেশাদারিত্ব কারুকাজ ও কলাকৌশলে অবাক হয়ে ঐতিহাসিকেরাও এর মুগ্ধতা প্রকাশ করে গেছেন। ঢাকায় ঘুড়ির আগমনের ইতিহাস জানতে আপনাকে যেতে হবে বেশি দূরে নয় ভারতের নবাবি শহর লক্ষৌ পর্যন্ত। জানেন কি? লক্ষৌ মোগল ও নবাবী খানাপিনা ছাড়াও আর কী দুটোর জিনিসের জন্য বিখ্যাত ছিল? একটি সুর-সঙ্গীত আরেকটি ঘুড়ি। ঢাকার নায়েব নাজিম ও নবাবেরা ছিলেন এই কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক। একসময় স্থানীয় নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতায় লক্ষৌর আকাশ রঙবেরঙের ঘুড়ি আর আতশবাজির আলোকসজ্জায় পূর্ণ থাকত। ধনীরা স্বর্ণ ও রুপার ঝালর ও কারচুপি খচিত নাটাই এবং ঘুড়ি উড়াতেন। এই উৎসবকে পাতাংবাজি বলা হতো। নবাব ওয়াজিদ আলী শাহর সময় এই নামে দেখা যায়।
আর ঘুড়ি উড়ানো উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় নবাব আসাফউদ্দৌলার সময় থেকে। হিন্দু শাসিত শহরে তারা পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সব সম্প্রদায়ের মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন, যা সর্বজনীন ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু মুসলিম সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা। ঢাকার শেষ নবাব গাজিউদ্দিন, যিনি পাগলা নবাব নামে পরিচিত ছিলেন, তার ঘুড়ি উড়ানোর নেশা আর আহসান মঞ্জিলের নবাববাড়ীর ঘুড়িপ্রীতি শহরের সবার জানা। শীত মওসুমের তিন মাস ঢাকার লোকদের বার্ষিক ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা ও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল। ছিল না নিদিষ্ট কোনো দিন। পৌষের শেষ দিনটাকেই তারা বেছে নিতেন ঘুড়ি উড়ানোর শেষ মওসুমি উপলক্ষ হিসেবে।
ঢাকার ঘুড়িবাজেরা নেমে পড়ত খোলা মাঠ ও মহল্লার ছাদগুলোতে। এই প্রতিযোগিতাকে বলা হতো হারিফি বা হারিফ। বিভিন্ন উপলক্ষেই তারা নামত হারিফ খেলায়। ঢাকার নবাবেরা ছিলেন এর মূল পৃষ্ঠপোষক। চকবাজার, শাহবাগ, পল্টন ময়দান (দিলকুশা), আরমানিটোলা মাঠসহ সব উন্মুক্ত স্থানেই চলত এই আয়োজন।
সাকরাইনে একটা ঘুড়ি ভোঁকাট্টা হলেই ভোঁ-দৌড়। যে আগে পৌঁছাতে পারবে, ঘুড্ডিটা তার। একসময় পৌষের শেষে পুরান ঢাকার জামাইরা শ্বশুরবাড়ি এলে তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হতো ঘুড়ি ও নাটাই। সব বাড়ির জামাই ঘুড়ি উড়ালে ঘটা করে সেসব দেখতেন গ্রামবাসী। এমনটা এখন আর হয় না। কিন্তু উৎসবটা রয়ে গেছে।
এবার পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে পুরান ঢাকার বাড়িতে বাড়িতে সাকরাইন উৎসব উপলক্ষে ঘুড়ি উড়ানো ছাড়াও থাকবে নানা আয়োজন। খাওয়ার জন্য থাকে খিচুড়ি, গরুর গোশত। সন্ধ্যার পর শুরু হয় মুখে কেরোসিন-আগুনের খেলা, ফানুস উড়ানো।
কালের ধারাবহিকতায় উৎসবে অনুষঙ্গের পরিবর্তন এলেও আমেজ ও আবেগটা কিন্তু এখনও প্রজন্মান্তরে রয়ে গেছে ঠিক আগের মতোই। শত বছরের নানা সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাত উত্তেজনার মাঝেও পৌষসংক্রান্তি এই শহরে হিন্দু মুসলিম সবার সর্বজনীন এক সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে আজো টিকে আছে।
-জেডসি
- ভারতে হরলিক্স আর স্বাস্থ্যকর পানীয় নয়!
- তানজানিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসে ১৫৫ জনের মৃত্যু
- নতুন করে বেড়েছে সবজি-মাংসের দাম
- এক মিনিটের জন্য শেষ বিসিএসের স্বপ্ন, হাউমাউ করে কান্না
- ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিদ্যা বালানের বিস্ফোরক মন্তব্য
- তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে
- থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
- চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই
- ‘হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে দিনে লক্ষাধিক মুরগি’
- ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু
- গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
- অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, গ্রেপ্তার ৩
- হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
- থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
- ভৈরবে বোরো ধানের বাম্পার ফলন
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- জিমন্যাস্টিকসে শিশু-কিশোরদের উৎসবমুখর দিন
- কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার নেতৃত্বে সাজ্জাদ-মোশাররফ-শরীফ