ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ১০:২৭:৪৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

ব্যারিস্টার মঈনুল ‘রাজনৈতিকভাবে চরিত্রহীন’: প্রতিবাদ সভায় বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৯:০১ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৮ শনিবার

ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন রাজনৈতিকভাবে কলঙ্কিত ও চরিত্রহীন। তিনি একজন গণশত্রু। তার ক্ষমা নেই। তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আমাদের নারীদের চরিত্র রক্ষার দায়িত্ব কাউকে দেয়া হয়নি।

 

সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলার প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে ‘রাজনৈতিকভাবে চরিত্রহীন’ বলে আখ্যা দিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।

 

সভায় নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, আমি আমাদের নারীদের চরিত্র রক্ষার দায়িত্ব কাউকে দিতে চাই না। আমাদের চরিত্র আমরাই রক্ষা করতে পারবো। এই দায়িত্ব আমি কাউকে দেবো না। সাংবাদিক সমাজকে এভাবে যারা হেনস্থা, অপদস্থ ও অসম্মান করছেন, তাদের বয়কট করা জরুরী। এর আগেও আমরা দেখেছি, প্রকাশ্যে-টকশোতে ভয়ঙ্করভাবে অপমান করা হচ্ছে, সেই দৃশ্য আমরা সবাই দেখেছি। এধরনের লোকদের টকশোতে আনা উচিত না বলে আমরা সাধারণ মানুষ মনে করি।’

 

সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেন, আমার দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝেছি যে, যুক্তিহীন মানুষই সাধারণতঃ ব্যক্তিগত আক্রমণ করে এবং একজন নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টি সব সময়ই তার চরিত্রকে নির্দেশ করেই এই আক্রমণ করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আপনিও তার ব্যক্তিক্রম নন। একাত্তর টক শোর উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা আপনাকে বলেছেন, আপনি ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন এবং এটা তিনি মেনে নেবেন না। কিন্তু আপনি অত্যন্ত রূঢ় হয়ে পুরো অনুষ্ঠানে কথা বললেন এবং বরাবরের মতোই সেটা ছিল আক্রমণাত্মক।

 

তিনি ব্যারিস্টার মঈনুল উদ্দেশ্য করে বলেন, একজন প্রবীণ আইনজীবী হিসেবেই শুধু নয়, আপনি ১/১১-র শাসনামলে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে আপনার আচরণ কি একজন প্রবীণ আইনজীবীর মতো ছিল? এই মুহূর্তে আপনি রাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক ফ্রন্ট-এর নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছেন, যারা একটি সুন্দর ও সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে চাইছে। কিন্তু একটি টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভ অনুষ্ঠানে যে একজন সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলে গাল দেওয়া যায় না সেই বোধ যেমন সকলের মাঝে তৈরি হওয়া প্রয়োজন তেমনই ভবিষ্যতের বাংলাদেশে যাতে এরকম কোন কাজ কেউ না করে সেটাও নিশ্চিত করা সকল সচেতন নাগরিকের কর্তব্য।

 

তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে বিষয়টি আর আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভের ব্যাপার নেই। কারণ, আমি মনে করেছি আমাকে বা যে কোনো নারীকেই এরকম আক্রমণের শিকার হয়েই এগুতে হবে। বিষয়টি এখন দেশের গণমাধ্যমকর্মীসহ সকল পেশাজীবী নারী ও সচেতন নাগরিকের ওপর আঘাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আঘাতকারী যখন একজন প্রবীণ আইনজীবী হয় তখন এটি আর আঘাত না থেকে হয়ে ওঠে চরম অপমানকর, অবমাননাকর ও আইনের লংঘনও।

 

মুন্নি সাহা বলেন, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন এবং আপনারা যারা নানা সময়ে রাজনৈতিকভাবে কলঙ্কিত ও রাজনৈতিকভাবে চরিত্রহীন। আপনারা ‍একটু সাবধান থাকবেন। আজকের এই প্রতিবাদ সকল রাজনৈতিক কলঙ্কিত ও চরিত্রহীনদের প্রতি আমাদের সকলের প্রতিবাদ।

 

তিনি আরো বলেন, আমরা এই রাজনৈতিক চরিত্রটা একটু ঠিক করতে চাই। বাংলাদেশের পক্ষে যারা কথা বলবেন, বাংলাদেশে বসে যারা রাজনীতি করবেন, বাংলাদেশের পক্ষে যারা থাকবেন। সেটায় আমাদের ফিল্টার, সেটাই আমাদের একক। এই এককের মাপকাঠি নিয়ে আপনারা রাজনীতি করতে আসবেন। সোজা-সাপটা কথা আমাদের সকলের তরফ থেকে।

 

মুন্নি সাহা বলেন, শুধুমাত্র নারী সাংবাদিক আমরা এক হইনি, বাংলাদেশের সকল স্বাধীনতাকামী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের এক স্বর, এক গলা—সবাই আজকে অন্তত ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের এই ধৃষ্টতার প্রতিবাদ করতে গিয়ে এটা আরও জোরে উচ্চারণ করতে চাই।

 

সাংবাদিক নেতা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, মইনুল হোসেনকে যখন বলা হলো, একজন অতিথি হয়ে আরেকজন সম্পর্কে এসব কথা বলতে পারেন না। তখনও তার অভিব্যক্তিতে দাম্ভিকতা ছিলো! এমন দাম্ভিক একজনকে আমি কোনো আয়োজনে ডাকতে চাই না। আমার বন্ধুদেরও বলেছি যেন তাকে ডাকা না হয়। তার কোনো প্রোগ্রাম আমরা কাভার করবো না। তিনি একজন গণশত্রু। তার ক্ষমা নেই। তার বাইরে কোনো শাস্তি থাকলে চিন্তা করতে পারেন।

 

ব্যারিস্টার তানিয়া আমির বলেন, মাসুদার ক্ষত, ব্যাথা তার একার না, আমাদের সবার। এটা শুধু নারী সমাজের না, এদেশের সব সচেতন মানুষের ক্ষত। এই প্ল্যাটফর্মে আমরা একটি পজিটিভ আউটকাম আশা করতে পারি কিনা? অর্থাৎ আমাদের যারা জনপ্রতিনিধি হবেন, তাদের একটি মিনিমাম সহনশীলতা আশা করতে পারি কিনা?

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক নুজহাত চৌধুরী বলেন, টকশোতে যেভাবে কথাটা বলা হলো, সেভাবে কোনো মানুষ কোনো মানুষকে বলতে পারেন না।  সেদিন যা ঘটেছে তা ক্লিয়ারলি একটা নির্যাতন। তিনি পেশাগত কাজ করছেন সেখানে কেন তিনি নির্যাতনের শিকার হবেন। এটাই প্রমাণ করে যে আমরা পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বাস করি এবং মানসিকভাবে পিতৃতান্ত্রিক মনোভাব ধারণ করি।  চরিত্র বিষয়টি খুব ধোঁয়াটে। এখানে খুন করলে বা এসিড ছুঁড়ে মারলে কেউ চরিত্রহীন হয়না। এমন কুরুচিপূর্ণ মানুষকে কোনো নেতৃত্বস্থানে কেউ দেখতে চান কিনা সেটা আমার প্রশ্ন।

 

গত মঙ্গলবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির এক লাইভ আলোচনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে আখ্যায়িত করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল।

 

প্রতিবাদ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান আরা শিল্পী। সাংবাদিকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন মিথিলা ফারজানা, নাসিমা খান মন্টি, আইরীন নিয়জী মান্না, ফারজানা রূপা, আঙ্গুর নাহার মন্টি, আহমেদ মুশফিকা নাজনীন, রীতা নাহার, নাদিরা কিরণ  প্রমুখ।