শোকগাথা : সুলতানা কামাল, ক্রীড়াঙ্গনের রক্তাক্ত নক্ষত্র
সালেহীন বাবু | উইমেননিউজ২৪.কমআপডেট: ০২:১৪ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০১৮ শুক্রবার
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন সুলতানা কামাল। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে যখন এ দেশের রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থায় মেয়েদের ঘরের বাইরে বেরোনোই কঠিন ছিল সে সময়টায় সুলতানা কামালের অ্যাথলেটিকসে যাত্রা শুরু। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অ্যাথলেটিক ট্র্যাক দাপিয়ে বেরিয়েছেন তিনি। ১৫ আগস্ট সব কিছুই তুচ্ছ হয়ে উঠেছিল ঘাতক চক্রের কাছে। আর তাইতো বঙ্গবন্ধু পরিবারে নববধূ হয়ে আসা এই অ্যাথলেটকেও সেদিন নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। খুব সম্ভবত বিশ্বে আর কোনো নারী অ্যাথলেটের এভাবে বুলেটবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করার নজির নেই।
কথাবার্তা, আচার-আচরণ, পারফরম্যান্স সবকিছুতেই তিনি ছিলেন অনন্য। খেলার মাঠে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সুলতানা কামালের মানবিক গুণাবলি সবাইকে মুগ্ধ করত। তিনি ছোটদের খুব স্নেহ করতেন আর বড়দের প্রতি ছিল তার অসীম শ্রদ্ধা। তাই সবার প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছিলেন সুলতানা। তার মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকত। এই হাসি দিয়েই তিনি সবার মন জয় করে নিতেন। তার মধ্যে কোনো অহংকার ছিল না। বঙ্গবন্ধুর পুত্রবধূ হওয়ার পরও তার মধ্যে অহংকারের ছিটেফোঁটার লেশও পড়েনি। এ কারণেই আর সবার চেয়ে তিনি ছিলেন একেবারেই আলাদা।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সুলতানা কামালের পুরো নাম সুলতানা আহমেদ খুকি। নয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বোনদের সবার ছোট এবং ভাই-বোনদের তালিকায় অষ্টম। সবার ছোট হওয়ায় খুকির আদরের পরিমানটাও বেশি ছিল। বাবা দবির উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী। মা জেবুন্নেছা বেগম ছিলেন গৃহিণী। বকশিবাজারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে ১৯৫২ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্ম নেন সুলতানা কামাল।
১৯৬৭ সালে তিনি মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ভর্তি হন তৎকালীন গভ: ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (বর্তমানে বদরুন্নেসা)। ১৯৬৯ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এরপর অনার্স পাশ করে ভর্তি হন এম এ ক্লাসে। ১৯৭৫ সালে এমএতে লিখিত পরীক্ষাও দেন। তবে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই নির্মমভাবে প্রাণ হারান তিনি। সে সময় তার বয়স ছিলো মাত্র ২৪। জীবনের শুরুতেই জীবন শেষ হয়ে গেছে তার!
৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ফরিদপুরের কোনো এক পার্লামেন্ট সদস্যকে দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠান সুলতানার বাবা দবিরউদ্দিনের কাছে। তারপর দু পরিবারের সম্মতিতে কামাল ও সুলতানার বিয়ে সম্পন্ন হয়। জানা যায়, সুলতানাদের পরিবারের সাথে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সখ্যতা ছিল স্বাধীনতার আগে থেকেই। সেই কারণে কামাল-সুলতানা একে অপরকে ভালোভাবেই জানতেন, চিনতেন। আবার দুজনেই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। সুলতানা আহমেদ, ১৯৭৫ এর ১৪ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের বউ হয়ে আসেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারে। এরপর থেকেই তিনি সুলতানা কামাল নামে পরিচিত।
তবে বঙ্গবন্ধুর প্রথম পুত্র শেখ কামালের সাথে বিয়ে হওয়ার আগে থেকেই ক্রীড়াঙ্গনের অদ্বিতীয়া এক নারী হিসেবে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তারপর বঙ্গবন্ধু পরিবারের বধূ হয়ে আসায় সন্দেহাতীতভাবেই তিনি উঠে এসেছিলেন আরো উচ্চতায়।
অ্যাথলেট হিসেবে সুলতানা কামাল যে অসাধারণ ছিলেন জাতীয় অ্যাথলেটিক্সের রেকর্ডই তার বড় প্রমাণ। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় অ্যাথলেটিক্সের আসর বসে ৭৩ সালে। এই প্রতিযোগিতায় তিনি অসাধারণ কৃতিত্বেও স্বাক্ষর রাখেন। বেঁচে থাকা পর্যন্ত সুলতানা কামাল ’৭৩, ’৭৪ এবং ’৭৫ পর পর এই তিন সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। রেকর্ডপত্র অনুসন্ধান করে দেখা যায়, সুলতানা কামালের প্রিয় ইভেন্ট ছিল হার্ডলস, হাইজাম্প এবং ব্রডজাম্প। এই তিনটি ইভেন্টে বরাবরই তিনি দেশে ও বিদেশের মাটিতে অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন।
তবে তার অ্যাথলেটিকস-জীবনের সূচনা হয় বর্তমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে। খুদে অ্যাথলেটদের দৌড় প্রতিযোগিতায় জীবনের প্রথম দৌড়ে প্রথম হন। ১৯৬২-৬৩ সালে আন্তবিদ্যালয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা দিয়ে জড়িয়ে পড়েন নতুন জীবনে। তখন তিনি পড়তেন পুরান ঢাকার বকশীবাজার মুসলিম গার্লস স্কুলে। স্কুল অ্যাথলেটিকসে সবার দৃষ্টি কেড়ে পরে জাতীয় পর্যায়ে শুধু সুনামই কুড়াননি, তার সৌজন্যে অ্যাথলেটিকস অঙ্গনেও প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল।
তিনি লং জাম্পে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান আমলে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে যতবার তিনি এই ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন, প্রতিবারই প্রথম হয়েছিলেন। পরে ১০০ মিটার হার্ডলসে অংশ নিয়েও সাফল্য পেয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। ১৯৭৪ সালের জাতীয় অ্যাথলেটিকসে এই ইভেন্টে অবশ্য দ্বিতীয় হয়েছিলেন। সে সময় স্নাতক পরীক্ষা ছিল বলে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে পারেননি। তাই ফলও প্রত্যাশিত হয়নি। তবে ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রামে পরের আসরেই ১০০ মিটার হার্ডলসের স্বর্ণপদক নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি।
সেবার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট শুধু ফিরেই পাননি, ১৭ দশমিক ৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে জাতীয় রেকর্ডও গড়েছিলেন সুলতানা কামাল। তিনি যখন ফিনিশিং লাইন অতিক্রম করেন, তখন দ্বিতীয় হওয়া প্রতিযোগীর দুটি হার্ডলস পার হওয়া বাকি ছিল। বাকিদের সঙ্গে এতটাই ব্যবধান ছিল তার পারফরম্যান্সের।
ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন খেলাধুলায় পারদর্শী পরিবারের সবার আদরের খুকি এভাবেই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব খেলাতেই জিতে নেন প্রথম পুরস্কার। তিনি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শুধু মেধাবী ছাত্রীই ছিলেন না, ছিলেন সবার প্রিয় অ্যাথলেট। তিনি একে একে জিতে নেন নিজ কলেজের শ্রেষ্ঠ অ্যাথলেট পুরস্কার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট ব্লু পুরস্কার, ব্যাডমিন্টন পুরস্কার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা অ্যাথলেটের পুরস্কার। এসব পুরস্কার তিনি থরে থরে সাজিয়ে রেখেছিলেন শ্বশুরবাড়ি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক সেই বাড়িটির দোতলার বিশেষ একটি কক্ষে। ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পরে সুলতানা কামালকে একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক ও ক্রীড়া লেখক সমিতির পুরস্কারেও ভূষিত করা হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘাতকদের হাতে নিহত হন সুলতানা কামাল। সে সময় সুলতানা কামালের অর্জনগুলোকেও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ঘাতকরা। বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় নিহত হন তিনি। ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ির দোতলার ঘাতকের বুলেটের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় সুলতানা কামালের নিথর দেহটি পড়েছিল অন্য সবার মাঝে। তখনও তার দু’হাতে শোভা পাচ্ছিল সদ্য বিয়ের মেহেদির আলপনা। সে সময় তার হাতের মেহেদীর আলপনার রঙও শুকায়নি। রক্তের রঙ আর মেহেদির রঙের মাখামাখি হয়ে একাকার হয়ে গিয়েছিল সেদিনের ভোর।
পার হয়ে গেছে অনেক অনেক বছর। তারপরও এই অনন্য ক্রীড়াবিদকে নিয়ে অজস্র স্মৃতি মানুষকে আপ্লুত করে তোলে আজও। ক্রীড়াক্ষেত্রে সুলতানা কামালের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ও অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তার নামে ধানমণ্ডিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। ’বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, সুলতানা কামালের মতো গুণী অ্যাথলেটকে আমরা অকালেই হারিয়েছি। এ ক্ষতি সত্যিই অপূরণীয়। এ শূন্যতা চিরদিনের।
- ভারতে হরলিক্স আর স্বাস্থ্যকর পানীয় নয়!
- তানজানিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসে ১৫৫ জনের মৃত্যু
- নতুন করে বেড়েছে সবজি-মাংসের দাম
- এক মিনিটের জন্য শেষ বিসিএসের স্বপ্ন, হাউমাউ করে কান্না
- ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিদ্যা বালানের বিস্ফোরক মন্তব্য
- তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে
- থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
- চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই
- ‘হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে দিনে লক্ষাধিক মুরগি’
- ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু
- গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
- অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, গ্রেপ্তার ৩
- হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
- থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
- ভৈরবে বোরো ধানের বাম্পার ফলন
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- জিমন্যাস্টিকসে শিশু-কিশোরদের উৎসবমুখর দিন
- কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার নেতৃত্বে সাজ্জাদ-মোশাররফ-শরীফ