ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ৪:৩৮:২১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা নান্দাইলে নারী শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

রোহিঙ্গা সংকটে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান: রাবাব ফাতিমা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৩১ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গা সংকটে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান যা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে জানিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সমস্যার মূল কারণগুলোকে চিহ্নিত করে তা নিষ্পত্তি, যথোপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।

বুধবার ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সাম্প্রতিক চার বছর: টেকসই সমাধান নিশ্চিতের চ্যালেঞ্জসমূহ‘ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সাইড ইভেন্টে একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বার্তায় এসব বিষয় জানানো হয়।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশন উপলক্ষে বাংলাদেশ, কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্ক ইভেন্টটির আয়োজন করে।ভার্চুয়াল এই ইভেন্টটি জাতিসংঘের সদস্য দেশ, জাতিসংঘ সদর দফতর ও এর সংস্থা, সিভিল সোসাইটি ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবর্গের বিপুল উপস্থিতি, তাদের বক্তব্য, পরামর্শ ও এ সংশ্লিষ্ট নানা উপস্থাপনার কারণে ভিন্ন মাত্রা পায়।

আলোচনা পর্বে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মিয়ানমার বিষয়ক স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া (আইআইএমএম) -এর প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান। পর্বটির সঞ্চালক ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত বব রায়।

ইভেন্টটিতে আরও বক্তব্য রাখেন গাম্বিয়ার বিচার মন্ত্রণালয়ের আইন-উপদেষ্টা হুসেইন থামাসি, সংঘাতকালে যৌন সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেন, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার এর পরিচালক রুভেন মেনিক দিওলা, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজ-এ গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মধ্যকার মামলার গাম্বিয়া পক্ষের আইন উপদেষ্টা ড. পায়াম আখওয়ান, গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট এর নির্বাহী পরিচালক ড. সাইমন অ্যাডামস্, গ্লোবাল জাস্টিজ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আকিলা রাধা কৃষ্ণান, আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়নের মহাপরিচালক ড. ওয়াকার উদ্দিন। এছাড়া জাতিসংঘে নিযুক্ত সৌদি আরব, তুরস্ক, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস ও ইন্দোনেশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ও প্রতিনিধিগণ সাইড ইভেন্টটিতে বক্তব্য রাখেন।

ইভেন্টটিতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও সর্বোচ্চ মানবিক উদারতা প্রদর্শনের মাধ্যমে সীমান্ত উন্মুক্ত করে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারের ব্যর্থতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সৃষ্ট বর্তমান অচলাবস্থার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি অবনতির বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ সংকটের বহুমাত্রিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে অনুধাবন করে এবং তা আমলে নিয়ে এর স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানকল্পে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।

দায়বদ্ধতা নিরূপণের বিষয়টির উদাহরণ টেনে তিনি আইআইএমএমসহ আন্তর্জাতিক তদন্ত ও জুডিশিয়াল প্রক্রিয়াসমূহকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা এবং এই নৃশংস অপরাধের ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকার নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ খুঁজে বের করতে আসিয়ানসহ আঞ্চলিক অন্যান্য জোট ও দেশকে আরও জোরদার ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

২০১১ সাল থেকে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণসমূহ ও তথ্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য অংশীজনদের কাছ থেকে সংগ্রহের জন্য আইআইএমএম এর প্রধান হিসেবে যে সব প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন তা তুলে ধরেন নিকোলাস কৌমজিয়ান। আইআইএমএম এর কাজ পূর্ণ করতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী দেশসমূহের কাছে যে সব তথ্য রয়েছে তা আইআইএমএম-কে সরবরাহ করার অনুরোধ জানান তিনি।

রোহিঙ্গা ইস্যুটি কানাডা সরকারের ধারাবাহিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত একটি বিষয় বলে পুনরুল্লেখ করেন কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত বব রায়। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজ-এর আওতাধীন বিচারকাজসহ দায়বদ্ধতা নিরূপণ প্রক্রিয়াগুলোতে তার সরকারের সমর্থন রয়েছে বলে জানান তিনি। এ সমস্যার মানবিক ও রাজনৈতিক সমাধানের জন্য তিনি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সমর্থনের আহ্বান জানান।

সঙ্কটের শুরুতেই পূর্ণ মানবিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা দেওয়ার মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়ে এবং এ পর্যন্ত এই বোঝা বহন করে বাংলাদেশ যে উদারতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে তার প্রশংসা করেন সৌদি আরব ও তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধিরা। রোহিঙ্গা নারীদের প্রতি যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতাসহ ভয়াবহ এই অপরাধের দায়ভার নিরূপণের প্রতি জোর দেন যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত। রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশন এর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর।

অন্যান্য বক্তারা দীর্ঘ এই মানবিক সমস্যা দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

বক্তারা বলেন, এর ফলে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। দায়বদ্ধতা নিরূপণ এবং দায়ীদের বিচার করা গেলে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মধ্যে মনোবল ফিরে আসতো এবং তাদের শান্তি ও মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যতের পথ সুগম হতো। রোহিঙ্গাদের ওপর সৃষ্ট মানবিক অধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে চলমান তদন্ত ও অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়াসমূহে সহযোগিতা করতে সদস্য দেশসমূহের প্রতি আহ্বান জানান তারা। নাগরিকত্ব আইন ও অন্যান্য বিধি-বিধানের পূর্ণ সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ বঞ্চনা থেকে মুক্তি দান এবং এ সংকটের মূল কারণ চিহ্নিত করার ওপর জোর দেন স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।

বক্তাগণ রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে। এ বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে জরুরিভাবে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।

-জেডসি