ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৯:৩০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

আজ নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস, দেশে কমছে না প্রসবঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৯:৪০ পিএম, ২৮ মে ২০১৮ সোমবার

আজ সোমবার ২৮ মে আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। মাতৃস্বাস্থ্য, নিরাপদ প্রসব, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান বৃদ্ধি সম্পর্কে মা, পরিবার ও সমাজের সকল স্তরের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সকলের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করাই এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য। মা ও শিশুমৃত্যু রোধ এবং তাদের অসুস্থতার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করার পাশাপাশি এসব সমস্যা প্রতিরোধ করার প্রত্যয়ে ১৯৮৭ সাল থেকে সারা বিশ্বে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালন করা হচ্ছে।

 

’কমাতে হলে মাতৃমৃত্যু হার, মিডওয়াইফ পাশে থাকা একান্ত দরকার’ প্রতিপাদ্যে সুস্থ মায়ের সুস্থ সন্তানের মাধ্যমে সমৃদ্ধ জাতি গঠনের প্রত্যয় নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ দিবসটি পালিত হবে।

 

কিন্তু আজও দেশে নিশ্চিন্ত হয়নি নিরাপদ মাতৃত্ব। সরকারের সদিচ্ছা যথেষ্ট থাকলেও সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাবে নারীরা আজও অবহেলিত। একজন গর্ভবতী নারী গর্ভকালীন সেবা, নিরাপদ প্রসবের জন্য যাবতীয় সেবা, প্রসব পরবর্তী সেবা পাওয়ার সব অধিকার রাখেন। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী এসব সুযোগসুবিধা থেকে কোন না কোন কারণে বঞ্চিত হয়। 

 

আজও দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন মা প্রসব সমস্যায় মৃত্যুবরণ করছে। মাতৃ স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়লেও এখনও মাত্র ৫৫ শতাংশ মায়ের নিরাপদ মাতৃত্ব সুবিধা নিশ্চিত করতে পেরেছে সরকার। গর্ভকালীন সময় শতকরা ১৪ জন মহিলাই নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতায় ভোগেন, যা মাতৃমৃত্যুর জন্য বহুলাংশে দায়ী। শতকরা ৫১ ভাগ মৃত্যুই রক্তক্ষরণ ও খিচুনির কারণে হয়ে থাকে।

 

মূলত গর্ভকালীন জটিলতা, দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা দানকারীর অনুপস্থিতি, প্রয়োজনীয় যত্নের অভাব, এ বিষয়ে পরিবারের অসচেতনতা, অবহেলা, প্রসব পরবর্তী সেবার অদূরদর্শিতায় একজন মা তার প্রাপ্ত নূন্যতম এ অধিকার বঞ্চিত। অসংখ্য পরিবার আছে যাদের কাছে এসব সেবা পৌঁছায় না। মাত্র শতকরা ৬৮ ভাগ গর্ভবর্তী মহিলা ১টি প্রসবপূর্ব সেবা এবং ২৬ ভাগ মহিলা ৪টি প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করে থাকেন। 

 

আবার অসংখ্য পরিবারকে দেখা যায়, যারা অজ্ঞতা, বিভ্রান্তির কারণে চিকিৎসার সেবা নিতে আগ্রহী হয় না। এ দুই বিপরীত প্রথায় শিকার হচ্ছে গর্ভবতী নারীরা। নিরাপদ মাতৃত্বের বিষয়টি কর্মজীবী মায়েদের ক্ষেত্রে আরও ঝুকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মেয়েদের কমপক্ষে ছয়মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে কয়জন নারী এ সুযোগ পায়। ফলে তাদের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়।

 

তাছাড়া দেশে বেড়েছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান নেয়ার প্রবণতা, যা অনেকাংশেই মাতৃ স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। ৫৮ শতাংশ গর্ভবতীর ডেলিভারি অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী বা আত্মীয়-স্বজনের হাতে হয়ে থাকে। আর মাত্র ৩৭ শতাংশ গর্ভবতীর ক্লিনিক বা হাসপাতালে প্রসব হয়ে থাকে। মা ও শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ বাড়িতে অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী বা আত্মীয়স্বজনের দ্বারা প্রসব করানো।

 

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, রোগী সিজারিয়ানের উপযোগী না হওয়া সত্ত্বে কোনো চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি তার সিজারিয়ান অপারেশন করেন তাহলে তাদের জরিমানাসহ হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হবে।

 

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সিজারিয়ান অপারেশন নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য উদ্বেগজনক। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সিজার হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এ হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।

 

প্রতিমন্ত্রী জানান, এ সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ্য থেকে একটি ফরম করা হয়েছে। ফরমে যদি কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান হয় তাহলে তার বিষয়ে বিস্তারিত জবাবদিহি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোগীর কোন কোন সমস্যার কারণে সিজার করা হলো তা উল্লেখ করতে হবে।

 

পাশাপাশি শিশুদের মায়ের দুধ পানের সুযোগ দিতে প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ব্রেস্টফিডিং জোন করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমানে তিন হাজার মিডওয়াইফকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ১৫’শ জনের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়োগ দেয়া হবে।

 

চলমান চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচিতে (২০১৭-২০২২) মাতৃস্বাস্থ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সকল মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালের সঙ্গে ১৫৯ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সমন্বিত জরুরী প্রসূতি সেবা কার্যক্রম বিদ্যামান আছে। পাশাপাশি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতেও সীমিত আকারে এ সেবা দেয়া হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জরুরী প্রসূতি সেবার মান উন্নয়নে অধিদপ্তরের আওতাধীন চিকিৎসকদের প্রসূতি সেবার প্রশিক্ষণ চলছে। আর চলমান সেক্টর কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর ১০ টি করে উপজেলায় এটি সম্প্রসারণ করা হবে। ফলে ২০২২ সালের মধ্যে ১০৩টি উপজেলায় এ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে।

 

বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস পেয়ে প্রতি লাখে জীবিত জন্মে ১৯৪ এ কমে এসেছে বলে দাবি করে আসছে সরকার। কিন্তু সরকার ঘোষিত মাতৃহার হ্রাসের পরিসংখ্যান ও প্রচলিত মাতৃস্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পেলেও মায়েদের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য দেশে এখনও স্থায়ী ব্যবস্থাপনা নেই। মায়ের গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী যত্নের অভাব প্রকট।