ঢাকা, বুধবার ০৯, অক্টোবর ২০২৪ ৩:২৪:৩৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন জন হোপফিল্ড ও জিওফ্রে হিন্টন সেই তাপসী তাবাসসুমের বিরুদ্ধে এবার মামলা শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু বুধবার চিকিৎসায় নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, শেরপুরে নিহত বেড়ে ৯ কোথায় আছেন শেখ হাসিনা, জানালেন জয়

বন্যায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, সড়কে-গাছতলায় চলছে চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৪৮ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার পর পানি কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে বেড়েছে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, জ্বরসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক।

চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুর জেলায়। এসব জেলার কোথাও কোথাও দুই সপ্তাহ ধরে টানা পানিবন্দি দিন যাপন করছে মানুষ।

টিউবওয়েল পানিতে ডুবে যাওয়ায় সুপেয় পানির অভাবে চার জেলার গ্রামীণ জনপদের অনেক জায়গায় মানুষ বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। চারদিকে পানি থাকায় অনেকে বের হতে না পেরে বাড়িতেই প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যখন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে তখন তারা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন।

চার জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, বন্যা কবলিত এলাকায় তাদের চিকিৎসক দল দিনরাত কাজ করছেন। তাদের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন রয়েছে। হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকলেও ওষুধের বা সেবার কোনো ঘাটতি নেই।

সড়কে-গাছতলায় শয্যা

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার প্রায় ১০ গুণ বেশি রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ফেনীর সবচেয়ে বড় সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র ফেনী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শয্যা সংকটে মেঝে ও ওয়ার্ডের বাহিরে গাছতলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।

ওয়ার্ডে ১৭ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭৬ জন। এখানে শূন্য থেকে ৩০ বছরের রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। অন্য আরেকটি ভবনে তদুর্ধ্ব রোগীরা সেবা নিচ্ছেন। সেখানেও ২১ শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা ৮০ জন। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতাল আঙিনা ও গাছতলায় বিছানা পেতে খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডেও ২৬ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৩৬ জন।

সদর উপজেলার ধলিয়া এলাকা থেকে চার বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন পায়রা আক্তার। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা না পেয়ে সামনের গাছতলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, এখানে এতো বেশি রোগীর চাপ, ওয়ার্ডে থাকার মতো কোনো অবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে গাছতলায় খোলা আকাশের নিচে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছি। এ পরিস্থিতিতে রোদের মধ্যে আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে।

দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুরের বাসিন্দা আলী আহম্মদ বলেন, তিন দিন ধরে নাতনিকে নিয়ে এখানে আছি। পরীক্ষায় নিউমোনিয়া শনাক্ত হয়েছে। এখানে এতো বেশি গরম যে সঙ্গে থাকা স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।

পরশুরাম উপজেলার টেটেশ্বর এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না আক্তার বলেন, দুই দিন কষ্ট করে বাইরে ছিলাম। এতো রোগীর চাপ ঠিকমতো কাউকে কাছে পাই না ডাকলে। কোনোভাবে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। পুরোপুরি সুস্থ না হয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

শর্শদি এলাকা থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে এসেছেন সালমা রিয়া। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর নার্সরা স্যালাইন লাগিয়ে গেলেও ভেতরে জায়গা না পেয়ে রাস্তার পাশে মাদুর পেতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

সালমা রিয়া বলেন, হাসপাতালে এসেও খোলা আকাশের নিচে বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আমার মতো এমন অসংখ্য মানুষ জায়গা না পেয়ে রাস্তায় ও বাগানে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকা সাথী আক্তার বলেন, ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগীর চিকিৎসা স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করে ও জনবল বৃদ্ধি করে তাহলে রোগীরা বেশি উপকৃত হবেন।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সাম্মী বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে ফেনীতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিপুলসংখ্যক রোগীকে স্বল্প পরিসরে সেবা দেওয়া আমাদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ কারণেই মূলত রোগীরা কেউ মেঝেতে কেউ বাইরে অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বলেন, বন্যা পরবর্তী অন্যান্য রোগের পাশাপাশি পানিবাহিত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার আরো পাঁচটি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রতিনিয়ত ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলার সকল সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ২ হাজার ৩৬৮ জন। সীমিত জনবল থাকলেও সকল রোগীকে সেবা দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

শয্যার ১০ গুণ বেশি রোগী

নোয়াখালীতে বন্যা দুর্গত এলাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সরা। বেডে জায়গা না হওয়ায় মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অনেক রোগীকে।

জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার জানিয়েছেন, নোয়াখালীর আট উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বুধবার ২২০ জন এবং নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ২৮০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম জানান, তাদের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা ১৬টি। চিকিৎসা নিচ্ছেন এর কয়েকগুণ বেশি রোগী। বেডে জায়গা না হওয়ায় মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় জরুরি ভিত্তিতে একটি ডায়রিয়া ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। সেখানেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতে রোগী রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।