আজ পৌষসংক্রান্তি, পুরান ঢাকায় চলছে ‘সাকরাইন’ উৎসব
অণিমা মিত্র | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ১১:০০ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার
ফাইল ছবি
আজ বৃহস্পতিবার ‘পৌষসংক্রান্তি’। অর্থাৎ বাংলা বছরের পৌষ মাসের শেষ দিন। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে পৌষ মাসের শেষ দিনটি কোন কোন স্থানে মকর সংক্রান্তি হিসেবেও পালন করা হয়। আজ পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী ‘সাকরাইন’ উৎসব। ‘পৌষসংক্রান্তি’র দিনটি ‘সংক্রান্তি’ নামেও পরিচিত। মূলত সংক্রান্তি শব্দই লোকমুখে সাকরাইন হয়ে গেছে।
আজ দিনটির প্রথম প্রহর শুরু হয়েছে গান-বাজনা, বোম ফুটানো ও ঘুড়ি উড়ানোর মধ্য দিয়ে। সন্ধ্যা হতেই আতশবাজি আর ফানুশের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে পুরান ঢাকার নীল আকাশ।
পুরান ঢাকায় দিনটির অন্যতম অনুষঙ্গ ঘুড়ি ওড়ানো বা ঘুড়ি উৎসব। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দক্ষিণ সিটির আকাশ রাঙাতে প্রথমবারের মতো সাকরাইন তথা ঘুড়ি উৎসব আয়োজন করতে যাচ্ছে।
কৃষি নির্ভর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ভাবে পালিত হয় এই দিনটি। এদিন থেকেই সূর্যের দক্ষিণায়ন ছেড়ে উত্তরায়ণের পথে যাত্রা শুরু হয়। একই ভাবে এদিন থেকেই দিন বড় ও রাত ছোট হয় এবং ধীরে ধীরে শীত বিদায় নেয়। দৃক পঞ্জিকা অনুসারে মকর সংক্রান্তির পবিত্র সময় হচ্ছে আগামীকাল সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে এবং শেষ হচ্ছে বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে। মকর সংক্রান্তির শুভক্ষণ থাকবে ৯ ঘণ্টা ১৬ মিনিট। মকর সংক্রান্তির মহাপূণ্যকাল সকালে ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে সকাল ১০টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হবে। ১২ মাসের ১২টি সংক্রান্তি মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মকর সংক্রান্তি ও কর্কট সংক্রান্তি।
পৌষ সংক্রান্তিতে দেশের অনেক জায়গায় ঘুড়ি ওড়াানো হয়। বিশেষ করে রাজধাণীর পুরানো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। এছাড়াও গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে এদিন নানা ধরনের পিঠে ও পায়েস করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। নতুন শস্য রোপণ করে এদিন থেকে বসন্তকালের স্বাগত জানানো হয়। মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রে এটি একটি ‘ক্ষণ’। এই দিন সুর্য তার নিজ কক্ষপথ থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। তাই এই দিনটিকে মকর সংক্রান্তি বলে।
ইতিহাস বলছে, পুরান ঢাকায় এই উৎসব হচ্ছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে। পুরনো ঢাকায় ঘুড়ি ওড়ানো বিনোদন শুরু হয়েছিল মুঘল আমলে। ১৭৪০ সালে নবাব নাজিম মহম্মদ খাঁ এই ঘুড়ি উৎসবের সূচনা করেন, সেই থেকে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। আদি ঢাকাইয়াদের ঐতিহ্যের সাকরাইন উৎসব।
প্রতি বছর ১৪ জানুয়ারি সাকারাইন উৎসব পালিত হয়। সকাল থেকে গান বাজনার তালে তালে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ফুটতে থাকে নানা রকম বোম। নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রতিটি বাড়ির ছাদ, চলছে ঘুড়ির সাম্যবাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উৎসবের মুখরতা। বাড়ে আকাশে ঘুড়ির সংখ্যাও।
এই দিন পুরান ঢাকার রূপলাল দাস লেন, শ্যাম বাজার, গেণ্ডারিয়া, মুরগীটোলা, ধূপখোলা, দয়াগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতী বাজার, সদরঘাট এবং লালবাগসহ প্রায় সব এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ান। আয়োজন করেন নানা খাবারের। এছাড়া সন্ধ্যায় আগুন নিয়ে খেলা, আতশবাজী ফোটানো এ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ।
দিনটিতে পুরান ঢাকার আকাশে শোভা পায় নানা রং আর বাহারি আকৃতির ঘুড়ি। এছাড়াও আগুন নিয়ে খেলা, আতশবাজি ফোটানো এ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। তবে সকালের তুলনায় বিকালে এ উৎসব বেশি মুখরিত হয়।
সাকরাইন উৎসব বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক উৎসব। এটি দেশের পুরানো ঢাকার বৃহত্তম উৎসব। এ উৎসবে অংশ নেন সব ধর্ম, পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
সাকরাইন, নাকি পৌষ সংক্রান্তি, নাকি মকর সংক্রান্তি! এই সংক্রান্তি আর সাকরাইন নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। মূল উৎসবটি মকর সংক্রান্তি হলেও স্থানভেদে এর নামে রকমফের হয়। তবে আধুনিক সময়ের ঢাকা শহরে পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির চেয়ে সাকরাইন নামটিই অধিক প্রচলিত।
যদিও এই সাকরাইন শব্দটি নানা পথ পরিক্রমায় সংস্কৃত শব্দ সংক্রন থেকে এসেছে। আর এই সংক্রনের আভিধানিক অর্থ হলো ‘বিশেষ মুহূর্ত’, অর্থাৎ বিশেষ মুহূর্তকে সামনে রেখে যে উৎসব পালিত হয় তাকেই বলা হচ্ছে সাকরাইন উৎসব। পুরো উৎসবের সবকিছুতেই থাকে তাই বিশেষ মুহূর্তের ছোয়া।
ভারতে পৌষ সংক্রান্তি নামে, নেপালে মাঘী নামে, থাইল্যান্ডে সংক্রান, লাওসে পি মা লাও, মিয়ানমারে থিং ইয়ান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান নামে পরিচিত।
মকরসংক্রান্তি হলো সেই ক্ষণ যাকে ঘিরে এ উৎসব পালিত হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এ উৎসব চলে আসছে। তবে সুস্পষ্টভাবে এর কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয় এটা হাজার বছরের উৎসব বা তারও আগের। পুরাণের মধ্যেও এর উল্লেখ রযেছে। তবে এটা ঠিক যে বাঙ্গালির সঙ্গে এই উৎসবের সম্পর্ক অতি প্রাচীন।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, মকর সংক্রান্তির এ মহাতিথিতেই মহাভারতের পিতামহ ভীষ্ম শরশয্যায় ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন। আবার অন্য মত অনুযায়ী, এ দিনই দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। বিষ্ণুদেব অসুরদের বধ করে তাদের কাটা মাথা মন্দিরা পর্বতে পুঁতে দিয়েছিলেন। তাই মকর সংক্রান্তির দিনই সমস্ত অশুভ শক্তির বিনাষ হয়ে শুভশক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
আবার এও বলা হয়, সূর্য এ দিন নিজের ছেলে মকর রাশির দেবতা শনির বাড়ি এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন। তাই এই দিনটিকে বাবা ছেলের সম্পর্কের একটি বিশেষ দিন হিসাবেও ধরা হয়। এই সাকরাইন উৎসব নিয়ে বাংলাদেশের পুরাণ ঢাকাতে আয়োজনের কমতি নেই।
বর্তমান ঢাকার পুরান অংশ বছরের এই একটি দিনে বর্ণিল সাজে সেজে ওঠে। ধর্ম-বর্ণ ভুলে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বেশ আড়ম্বরের মাধ্যমেই পালিত হয় উৎসবটি।
নিয়মতান্ত্রিক পূজা-পার্বনতো আছেই, সঙ্গে আছে বিভিন্ন উপাদানে তৈরি নানা পদের খাবার। সেই ভোর সকাল থেকে শুরু হয়ে অনেক রাত অবধি সকল আত্মীয় স্বজনের অংশগ্রহণে পালিত হওয়া সাকরাইন আজ ধর্মীয় গণ্ডি পেড়িয়ে সকলের। তাই এই দিনটিতে পুরান ঢাকায় গেলে বোঝার কোনো উপায় থাকে না যে, এটা মকর সংক্রান্তি নাকি সকলের অংশগ্রহণমূলক কোনো অনুষ্ঠান।
পৌষের শেষ দিনে পুরান ঢাকার আকাশ থাকে ঘুড়িদের দখলে। আকাশ জুড়ে থাকে নানা রং আর বাহারের ঘুড়িদের দৌরাত্ম। এক সপ্তাহ ধরে পুরান ঢাকার অধিকাংশ অলিগলি আর খোলা ছাদে চলতে থাকে ঘুড়ির সুতা মাঞ্জা দেওয়ার ধুম। রোদে সুতা শুকানোর কাজও চলে পুরোদমে। যদিও এখন আর মানুষ কষ্টসাধ্য মাঞ্জা দিতে চায় না কারণ সেই মাঞ্জা দেয়া সুতার জায়গা দখল করে নিচ্ছে রক সূতা নামের এক ধরনের সূতা।
শীতের উদাস দুপুর আর নরম বিকেলের আকাশে উড়ানো হয় নানা রঙের ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে হৃদ্যতামূলক কাটা-কাটির খেলাও চলে, আর সেই খেলায় কাটা যাওয়া ঘুড়ি ধরতে অলিতে গলিতে শিশুদের ‘বাকাট্টা’ শব্দের মহরা চলে অবিরত। অহরহ কাটা-কাটির খেলায় হেরে যাওয়া অভিমানী ঘুড়ি সুতার বাধন ছিঁড়ে কোন দূরে হারিয়ে যায় তা কে বলতে পারে।
পুরান ঢাকার মানুষ দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ায়। সেই সঙ্গে থাকে নানা খাবারের আয়োজন। সন্ধ্যায় থাকে আগুন নিয়ে খেলা ও বাহারি আতশবাজি। আর ঐতিহ্যবাহী দিনকে উদযাপন করতে পর্যটকদের ঢল নামে পুরান ঢাকায়।
জানুয়ারির ১৪ তারিখ বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও বেশ জাকজমকের সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে এই উৎসব। বিশেষ করে পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করা হয় এই উৎসব।
- খিলগাঁওয়ে একইদিনে তিন শিশুর মৃত্যু
- তীব্র গরমে ট্রেনের ব্রেকে আগুন, ১০ যাত্রী আহত
- রান্না ভালো না হওয়ায় স্ত্রীকে জানালা দিয়ে ফেলে দিলেন স্বামী
- শেরে বাংলার কর্মপ্রচেষ্টা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে
- রাজধানীর যেসব এলাকায় ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না আজ
- গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা আজ,থাকবে পানি ও চিকিৎসা ব্যবস্থা
- কোথায় হবে অনন্ত এবং রাধিকার বিয়ে?
- গরমে চা খাওয়া কি ঠিক?
- বৃষ্টি কবে হবে, জানাল আবহাওয়া অফিস
- তাপমাত্রা কমাতে হিট অফিসারের নতুন উদ্যোগ
- শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মাজারে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
- ভারতে হরলিক্স আর স্বাস্থ্যকর পানীয় নয়!
- তানজানিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসে ১৫৫ জনের মৃত্যু
- নতুন করে বেড়েছে সবজি-মাংসের দাম
- এক মিনিটের জন্য শেষ বিসিএসের স্বপ্ন, হাউমাউ করে কান্না
- খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল
- ২৯ ফেব্রুয়ারি বা লিপ ইয়ার নিয়ে ১০টি মজার তথ্য
- জমজমাট ফুটপাতের ঈদ বাজার
- দেশে ধনীদের সম্পদ বাড়ছে
- এবার বাংলা একাডেমি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন যারা
- গুলবদন বেগম: এক মুঘল শাহজাদির সাহসী সমুদ্রযাত্রার গল্প
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
- যে বিভাগে বিচ্ছেদের হার বেশি
- ৭ই মার্চ পরিস্থিতি, কেমন ছিলো সেই দিনটি
- ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে
- দিনাজপুরে ব্যাপক পরিসরে শিম চাষের লক্ষ্য
- সদরঘাট ট্র্যাজেডি: সপরিবারে নিহত সেই মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা
- জিমন্যাস্টিকসে শিশু-কিশোরদের উৎসবমুখর দিন
- কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার নেতৃত্বে সাজ্জাদ-মোশাররফ-শরীফ