ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:২৯:৫৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

অন্যের স্বামীকে হত্যা করতেন বাবা আনুজকা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৫৬ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২২ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

 নারীদের বলা হয়ে থাকে কোমলতা, ভালোবাস ও শান্তির প্রতীক। প্রকৃতিই তাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়েছে। তবে এর ব্যতিক্রমও কম নেই।  এই পৃথিবীতে এমনও  নারী রয়েছেন যাদের নৃশংসতা ও হিংস্রতা হার মানিয়েছে সবকিছুকে। তাদের গল্প কেড়ে নেয় রাতের ঘুম। আজ তেমনই একজন সিরিয়াল কিলারের কথা বলবো, যাকে ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক এক নারী সিরিয়াল কিলার ভাবা হয়- 

বাবা আনুজকার আসল নাম আনা ডি পিসতেনজা, তবে তিনি তার আসল নামের চেয়ে বাবা আনুজকা এই নামেই বেশি পরিচিত। তার জন্ম ১৮৩৮ সালে তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ায়। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ অপেশাদার রসায়নবিদ। ১৯ শতকের শেষ দিক থেকে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় ১৫০ জন মানুষ হত্যা করেছিলেন।

১৯২৮ সালে বাবা আনুজকা তার অপরাধের জন্য গ্রেফতার হয়। তখন তার বয়স ৯০ বছর। তাকে তার অপরাধের জন্য ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে কারাদণ্ডাদেশের ৮ বছরের মাথায় বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মুক্তি পান। আনুজকার প্রারম্ভিক জীবন সম্পর্কে যে সব তথ্য পাওয়া গেছে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তার ভাষ্যমতে, ১৮৩৮ সালে তিনি রোমানিয়ার এক ধনী পশুপালকের ঘরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। 

১৮৪৯ সালের দিকে তার পরিবার অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের বানাট সামরিক সীমান্ত প্রদেশের ভ্লাদিমিরোভাকে চলে আসেন। তিনি প্যানচেভোতে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। আনুজকার যখন ২০ বছর বয়স তখন তিনি একজন তরুণ অস্ট্রিয়ান সামরিক অফিসারের প্রেমে পড়েন। তবে সেই যুবক তার প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। প্রেমে প্রত্যাখান হওয়ার পর আনুজকা রসায়ন শাস্ত্রে আগ্রী হয়ে উঠেন তিনি বিভিন্ন লতা পাতার মিশ্রণ দিয়ে ওষুধ ও বিভিন্ন পথ্য তৈরিতে মনযোগ দেন। ভেষজ বিষয়ে জ্ঞান ছাড়াও আনুজকার আরেকটি বিশেষ জ্ঞান ছিল। তিনি প্রায় পাঁচটি ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারতেন।

আনুজকা পরবর্তীতে পিস্তভ নামে এ ভূস্বামী কে বিয়ে করেছিলেন। তাদের ঘরে ১১ সন্তান হয়েছিল। কিন্তু মাত্র একজন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বেঁচে ছিল। আনুজকা কি তাদের নিজের সন্তানের উপরেও বিষের প্রযোগ করেছিলেন কিনা তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা রয়েছে। বিয়ের ২০ বছরের মাথায় আনুজকার স্বামীর মৃত্যু হয়। আনুজকার স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তার বাড়িতে ভেষজ ঔষধ তৈরি করতে একটি পরীক্ষাগার তৈরি করেন। ১৯ শতকের শেষ দিকে তিনি অসুখ নিরাময় কারী ও ভেষজবিদ হিসেবে খুব নাম করেন। তিনি কৃষকদের স্ত্রীদের কাছেও জনপ্রিয় ছিলেন, যারা স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য তার সাহায্য চাইতো। ভেষজ ঔষধ বিক্রি করে আনুজকা বেশ মেটা অর্থ আয় করেন।

তবে তার এই ভেষজ ওষুধের অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি ভালোর চেয়ে খারাপই করেছেন বেশি। সেসময় যে সব নারী তাদের স্বামীর সঙ্গে অসুখী দাম্পত্য জীবন কাটাতেন তারা তাদের স্বামীকে হত্যা করতে আনুজকা থেকে চড়া দাম দিয়ে এক ধরনের বিষ কিনতেন, তারা সেটিকে নাম দিতেন ‘ভালোবাসার পানীয়’ এই পানীয় পান করলে স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা ফিরে আসবে এই বলে সেসব নারী তা তাদের স্বামীকে পান করাতো। পান করানের পর তাদের মৃত্যু শুরু হতো খুব ধীর পক্রিয়ায়, প্রায় আট দিন লাগতো মৃত্যু হতে। বুঝারই কোনো উপায় ছিল না যে তার মৃত্যু বিষ প্রয়োগের ফলে হয়েছে। মানুষ ভেবে নিতো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আনুজকা তার এই কার্যক্রম শুরু করে ১৯ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে।

১৯২০ এর দশক থেকে আনুজকা লজুবিনা মিলানকভ নামে একজন নারীকে নিজের সেলস এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করেন। যারা কাজ ছিল ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করা যাদের সংসারে অশান্তি চলছে। আনুজকার সেলস এজেন্ট সেসব সংসারের নারীদের আনুজকার কাছে নিয়ে আনতো। আনুজকা তার ম্যজিক ওয়াটার মানে ভালোবাসার পানীয় সে সব নারীদের কাছে দুই হাজার থেকে ১০ হাজার যুগোস্লাভিয়া দিনারে বিক্রি করতেন।

অনুজকা তার ‘ম্যাজিক ওয়াটার’ ১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে স্ট্যানা মোমিরভ নামের এক নারীর কাছে ২৩০০ দিনারে বিক্রি করে। স্ট্যানা তার স্বামী লাজার লুডোস্কিকে মিশ্রণটি খায়িয়েছিলেন এবং তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েকদিন পর মারা যান। স্টানা পরে একই গ্রামের আরেকজনকে বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্বামীর এক ধনী চাচা কয়েক মাসের মধ্যে একই পরিস্থিতিতে মারা যান। পুলিশ স্ট্যানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং সে অনুজকাকে দোষারোপ করে। আনুজকা পরবর্তীতে ১৯২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে সিমা মোমিরভ এবং তার স্ত্রী সোফিজার কাছে তার ‘ম্যাজিক ওয়াটার’ বিক্রি করেন।

সেই বিষাক্ত পানীয় দিয়ে সিমা মোমিরভ তার ৭০ বছর বয়সী পিতা নিকোলা কে হত্যা করে। এই হত্যার কারণ ছিল পারিবারিক কলহ। তাদের ভাস্যমতে নিকোলা প্রচন্ড পরিমানে মদ্যপ থাকতো এবং স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে। সিমা মোমিরভ এই বিষ আনুজকা থেকে কিনেছিলেন এক নারীর কথা শুনে। এই বিষের জন্য তিনি আনুজকাকে পাঁচ হাজার দিনার দিয়েছিলেন। সিমার স্ত্রী সোফিজা এটি নিকোলার নাতনি ১৬ বছর বয়সী ওলগা স্টুরজাকে দিয়ে পাঠিয়ে ছিলেন এবং নিকোলাকে সেটি পান করিয়েছিলেন। নিকোলা সেটিকে ওষুধ ভেবে পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৫ দিন পরে মারা যান।

হত্যার জন্য বিষ প্রদানের জন্য ১৯১৪ সালের জুন মাসে অনুজকার প্রথম বিচার হয় বেলা ক্রকভাতে, কিন্তু তাকে খালাস দেওয়া হয়। ১৯২৮ সালের মে মাসের ১৫ তারিখ আনুজকা কে দ্বিতীয় বারের মতো গ্রেফতার করা হয়, তখন আনুজকার বয়স ৯০! ১৯২৮ সালে আনুজকা ছাড়াও স্ট্যানা, সোফিজা এবং সিমা মোমিরভ, লুবিনা মিলানকভ, ড্যানিকা স্টোজিক এবং ওলগা স্টুরজাকেও গ্রেফতার করা হয় এবং নিকোলা মোমিরভ এবং লাজার লুডোস্কির হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। আদালত কর্তৃপক্ষ বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতদের মৃতদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে।

১৯২৯ সালের জুন মাসে পানচেভোর জেলা আদালতে বিচার শুরু হয়। ১৮ ও ১৯ জুন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচার চলতে থাকে ১ জুলাই যখন অনুজকার বাড়িতে পাওয়া নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়, সেই সময়ে প্রসিকিউটর এবং ডিফেন্স অ্যাটর্নিরা সমাপনী বিবৃতি দিয়েছিলেন। প্রসিকিউটর স্টুরজা ব্যতীত সব আসামীর মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন, যিনি হত্যার সময় একজন নাবালক ছিলেন এবং যার জন্য তিনি কারাদণ্ড চেয়েছিলেন। সোফিজা এবং সিমা মোমিরভ বিচারে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিলেন। তারা দাবি করেছিল যে তারা জানত না যে ‘ম্যাজিক ওয়াটারে’ বিষ রয়েছে। তারা বিশ্বাস করত যে এটি কেবল পানি এবং মৃত্যু অনুজকার অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার ফলস্বরূপ।

স্ট্যানা মোমিরভ দাবি করেছিলেন যে তিনি কেবল তার স্বামীকে মদ্যপান থেকে নিরাময় করতে যাদু পানি চেয়েছিলেন এবং তিনি জানেন না যে এটি তাকে হত্যা করবে। বিচার চলাকালীন, অনুজকা ক্রমাগত অভিযোগ অস্বীকার করে, দাবি করে যে সে কখনোই কোনো জাদু পানি বিক্রি করেনি এবং তার বিরুদ্ধে পুরো মামলাটি লুবিনা মিলানকভ দ্বারা বানোয়াট অভিযোগ ছিল। যিনি অনুজকাকে তার নিজের অপরাধের জন্য দোষ দিতে চেয়েছিলেন। 


স্টুরজা নিজেকে রক্ষা করেছিলেন, দাবি করেছিলেন যে হত্যার সময় তিনি এখনও শিশু ছিলেন এবং তিনি জানেন না যে পানি তার দাদাকে হত্যা করবে, কিন্তু সোফিজা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে স্টুরজা পুরো প্লট সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ছিলেন। ডা. ব্রাঙ্কো ভুর্দেলজা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে উভয় শিকারের দেহেই আর্সেনিকের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হত্যার রায় ১৯২৯ সালের ৬ জুলাই দেয়া হয়েছিল। উভয় হত্যাকাণ্ডে সহযোগী ভূমিকার জন্য অনুজকাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। 

প্রধান অপরাধী হিসেবে স্ট্যানা এবং সোফিজা মোমিরভকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সিমা মোমিরভকে ১৫ বছর এবং লুবিনা মিলানকভকে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ওলগা স্টুরজা এবং ড্যানিকা স্টোজিচ বেকসুর খালাস পেয়েছিল। বার্ধক্যজনিত কারণে আট বছর কারাভোগের পর ৯৮ বছর বয়সে মুক্তি পান অনুজকা। তিনি মুক্তির দুই বছর পরে মারা যান। মারা যাওয়ার সময় তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।

সূত্র: হিস্ট্রি অব ইয়েস্টারডে