ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮, জুলাই ২০২৫ ১৭:১৩:৫৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল দেখবেন যেভাবে দুপুরের মধ্যে ৭ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত ১১ কুমিল্লার তিন মামলায় খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি সংবর্ধনা শেষে ভুটান গেলেন দুই নারী ফুটবলার

এক মহাসংগ্রামী নারী উদ্যোক্তা বাঁধন

অনন্যা কনা | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৩৪ এএম, ২৩ জুন ২০২৫ সোমবার

মাহবুবা আক্তার জাহান বাঁধন

মাহবুবা আক্তার জাহান বাঁধন

মাহবুবা আক্তার জাহান বাঁধন; প্রত্যন্ত একটি গ্রাম থেকে ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে সফল উদ্যোক্তা হয়েছে। তার সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্পটা মোটেই সহজ ছিলো না। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সমাজ ও নিজের পরিবার। সব রকম বাধা পেরিয়ে হয়ে উঠেছেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। কতটা কঠিন ছিলো তার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প? 

প্রত্যন্ত গ্রামের একজন সাধারণ মেয়ে ছিলো বাঁধন । আর পাঁচটা সাধারণ কিশোরী মেয়ের মতোই চলছিলো তার জীবন। কিশোরী বয়সেই মনে অনেক স্বপ্ন বুনে রেখেছেন। এ দিকে বয়স যখন ১৪ বছর হঠাৎ তাঁর বাবা মারা যায়। পরিবারের ৩ মেয়েকে নিয়ে তার মা অসহায় হয়ে পড়ে। পরিবারের বড় সন্তান হওয়াতে সমাজের নানা মানুষ নানা রকম কথা বলতে থাকে। শুনতে হয়, মেয়ে মানুষ লেখাপড়া করিয়ে কি হবে। 

এক পর্যায়ে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাঁধনের অমতেই তার মা বিয়ে দিয়ে দেয়। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই মা হয়ে যান বাঁধন। বয়স ২০ হবার আগেই দুই সন্তানের জননী হয়। এ দিকে তার স্বামী তখনও ছাত্র, পড়ছেন উচ্চ মাধ্যমিকে। সাংসারিক খরচ সেই সাথে মানসিক চাপে শ্বশুর তার স্বামীকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে নিষেদ করে বলে, সংসারে মনোযোগ দিতে। স্বামীর পড়াশোনা বন্ধ হবে ভেবে খুব মন খারাপ হয়। তবে হাল ছেড়ে দেয়নি। সিদ্ধান্ত নেয় তার মায়ের বাসায় শহরে থেকে পড়াশোনা করবে। স্বামীকে বুঝিয়ে নিয়ে আসে শহরে।

দীর্ঘ ৫ বছর বিরতির পর নিজেও ছোট বোনের সাথে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে যান। স্বামী, স্ত্রী দুজনে মিলে পড়াশোনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে মাধ্যমিক পাস করার পর সবাই জানতে পারে তার পড়াশোনার ব্যাপারে। শ্বশুরের আড়ালে শাশুরী মানসিকভাবে তাদের সহযোগিতা করতো। 

বাঁধনের অনুপ্রেরণায় তার স্বামী পড়াশোনা শেষ করতে পারলেও চাকরির চেষ্টাতে ছিলো ব্যর্থ। বাঁধনের স্বামী চাকরির জন্য অনেক টাকা সিসি লোন করেছিলো। সেগুলো বেড়ে পাঁচ গুণ হয়ে যায়। এরই মধ্যে হানা দেয় করোনা মহামারি। স্বামী, স্ত্রী দুজনেই ছিলো বেকার। এ অবস্থায় আর পারিবারিক জটিলতায় একদিন তাঁর স্বামী ডেকে বলে চলো আত্মহত্যা করি!

যখন হতাশা গ্রস্ত হয়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে জর্জরিত, তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা সংগঠন উইয়ের সহযোগীতায় জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। 

বাঁধন বলেন,  বুঝতে পারি আমার ভেতরে কৃষি খাদ্য পণ্য ও রাজশাহীর নিজেদের বাগানের আম নিয়ে কাজ করার মত গুন রয়েছে। নিজেদের গ্রাম থেকে নিজেদের জমিতে উৎপাদন করা সব ধরনের ভেজাল মুক্ত কৃষি খাদ্য পণ্য নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যেতে পারবো এমন আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাই। এরপর থেকে সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত।

বাঁধন বলেন, আশা করি এখন আর আমাকে কারও মেয়ে, কারও বউ অথবা বোন বলে ডাকবে না। আমার নিজের একটা নাম আছে। যে নামে সবাই আমাকে বাঁধন আপু নামে চেনে। আমি চাই একদিন বাঁধন ফুড সারা দেশসহ সারা বিশ্বে পৌঁছে যাবে। 

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়ন ও বজরাপুর গ্রামে কৃষি খাদ্য পণ্য নিয়ে কাজ করছেন সংগ্রামী এই নারী উদ্যোক্তা। তার উদ্যোগ্যের নাম ‘বাঁধন ফুড’। প্রতিষ্ঠা করেন ২০২০ সালে। প্রতিষ্ঠানটিতে সব ধরণের কৃষি খাদ্য পণ্য পাওয়া যায়। রাজশাহীর আম, খেজুরর গুড়, সব ধরনের রান্নার মসলা, চাল, ডাল, তেল, ঘি, মধু সহ রান্না করা খাবার সরবরাহ করে বাঁধন ফুড। এছাড়াও বর্তমানে তিনি ১০ বিঘার পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।